১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পাইবাসের
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকা পৌঁছে সন্ধ্যায় শেরে বাংলায় বিপিএলের ম্যাচ দেখতে আসা রিচার্ড পাইবাস বুধবার সকাল সকাল আবার বোর্ডে এসে হাজির। উদ্দেশ্য, বিসিবিতে বাংলাদেশ দলের কোচের পদে ইন্টারভিউ দেয়া।
সে সাক্ষাতকার চললো প্রায় দুপুর অবধি। সাক্ষাতকার বলা সম্ভবত ঠিক হলো না। আসলে বাংলাদেশের কোচ হলে রিচার্ড পাইবাস কি কি করবেন , তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গুলো কি কি ? তার একটা নাতিদীর্ঘ উপস্থাপনাই হলো বোর্ডে।
মোদ্দা কথা, কোচ পাইবাসের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি কি ও কেমন, তা জানানো হলো বোর্ডে। সে পর্ব শেষে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন সহ বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের দীর্ঘ বৈঠকও হলো।
রিচার্ড পাইবাসের ইন্টারভিউ সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'আসলে রিচার্ড পাইবাস সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছে ও আগ্রহে এসেছে। আমরাও যে সব কোচ আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের ফাইনাল প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছি। তারই ধারাবাহিকতায় পাইবাস এসে আজ প্রেজেন্টেটেশন দিয়েছে। ৯ তারিখ ফিল সিমন্সের আসার কথা। তার আগেও আর একজনের আসার সম্ভাবনা আছে।’
এদিকে বিসিবি নতুন কোচের সন্ধানে থাকলেও এখন যারা কোচিং স্টাফ আছেন, তাদের সাথেও বসে নতুন সম্ভাব্য কোচ নিয়ে আলাপ আলোচনা করবে। এ তথ্য জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'আমাদের বর্তমান যারা কোচিং স্টাফ আছে, হ্যালসাল (রিচার্ড) এবং সুজন (খালেদ মাহমুদ সুজন) তাদের সাথে বসবো ৯ তারিখে। সামনে আমাদের সিরিজ আছে। তার আগে হ্যালসল, সুজন আছে (ম্যানেজার) টিম ক্যাপ্টেন যারা আছে, সেই সাথে অন্যান্য স্টাফ আছে, ওদের নিয়ে বসে আলোচনা করবো। সামনের সিরিজ নিয়ে কি কি পরিকল্পনা করা উচিত, তাদের সাথে আলোচনা করবো।’
বিসিবি প্রধান জানিয়েছেন, তারা কোচ নিয়ে জাতীয় দলের সব ফরম্যাটের অধিনায়ক এবং কিছু সিনিয়র প্লেয়ারদের সাথে কথা বলেছেন। নাজমুল হাসান পাপনের ভাষায়, 'তামিম, মাশরাফি, সাকিবদের সাথে কথা হয়েছে। আরও অনেক প্লেয়ারদের সাথেও কথা বলেছি।'
পাপন জানালেন, কোচ নিয়োগে ক্রিকেটারদের মতই প্রাধান্য পাবে। নতুন কোচ নিয়োগে ক্রিকেটারদের মনোভাব জানাতে গিয়ে পাপন বলে ওঠেন, 'ক্রিকেটারদের মতামত একেক রকম। অনেকে হয়তো মনে করে বিদেশি কোচেরই দরকার নেই। অনেকে মনে করে স্থানীয় কোচই যথেষ্ট।'
পাপনের ভাষায়, 'একেক জনের একেক রকম মতামত থাকবেই। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেটা ভাল হয়। আমাদের সেই সিদ্ধান্তই নিতে হবে।'
প্রসঙ্গতঃউল্লেখ্য , ২০১২ সালে রিচার্ড পাইবাস স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের কোচিং ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। যাবার সময় বিসিবির সমালোচনা করতে ছাড়েননি পাইবাস। বলেছিলেন , বিসিবিতে পেশাদারিত্বের ঘাটতি আছে।
জাতীয় দলের কোচ পদ থেকে সড়ে দাঁড়ানো এবং বোর্ডের সমালোচনাকারি রিচার্ড পাইবাসকেই আবার কেন কোচ হিসেবে চিন্তা করা? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রধান বলেন, 'পাইবাস এখনো তেমনই ভাবেন। কিন্তু সন্দেহ নেই তিনি হাই গ্রেডের একজন কোচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বাজারে তার সুনাম আছে। সে নিজ থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশ টিম এখন ভাল করছে। এখন তিনি মনে করেন বাংলাদেশ একটা লেভেলে পৌঁছেছে। এখন যেভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট চলছে শুধু সে না অন্যান্য প্রফেশনাল কোচও এই বোর্ডের সাথে কাজ করতে চায়।'
পাইবাসের ইন্টারভিউ ঠিক নয়। এ ইংলিশ কোচ তার কার্যক্রম, লক্ষ্য, পরিকল্পনা এবং কোচিং প্রোগ্রাম এর ওপর বোর্ডের কাছে একটা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন, সে তথ্য নিশ্চিত করে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'পাইবাসের প্রেজেন্টেশন নি:সন্দেহে ভাল ছিল। সে ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলে। ১০ বছরের একটা দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান নিয়ে এসেছে সে। আমাদের এখন দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাই দেখতে হবে। সামনে বিশ্বকাপ আছে সেটাও আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ও যা চায়, যেরকম বলছে এখনই হয়তো পারবো না; তবে ক্রমান্বয়ে প্ল্যান কাজে লাগাতে পারলে আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য ভালই হবে।'
বোর্ড প্রধানের এমন মন্তব্য শুনে মনে হতে পারে তিনি পাইবাসে সন্তুষ্ট। তবে ভিতরের খবর, ৯ ডিসেম্বর ফিল সিমন্সের ইন্টারভিউ শেষ না হওয়ার আগে শেষ কথা বলে দেবে না বোর্ড।
এআরবি/এমএমআর/পিআর