হঠাৎ বিপিএল জমিয়ে দিল নাসিরের সিলেট
বিপিএলে এবারের আসরে তারকার অভাব নেই। প্রচুর পাকিস্তানি ক্রিকেটার এসেছে এবারের বিপিএল মাতাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডেরও অনেক ক্রিকেটার মাতাচ্ছেন বিপিএলের পঞ্চম আসর।
কিন্তু বিপিএলের শুরুর শহর সিলেট, এরপর ঢাকা, এরপর চট্টগ্রাম হয়ে আবার ঢাকা। চারটি পর্ব। উল্লেখযোগ্য দু’একটি ম্যাচ বাদে এবারের বিপিএল অনেকটাই ম্যাড়মেড়ে। খুব বেশি স্মরণীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে আসলে কমই। তবুও দু’একটি ম্যাচ এমন ছিল যেগুলো বিপিএলের এবারের আসরকে মনে করিয়ে দেবে হয়তো। গড়পড়তা উল্লেখযোগ্য কমই।
উল্লেখযোগ্য যেগুলো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে- সিলেট পর্বের শুরুতে স্থানীয় দল সিলেট সিক্সার্সের টানা তিন জয় ছিল শুরুর চমক। রংপুরের দুটি জয় আছে খুবই উল্লেখযোগ্য। যেগুলোতে একবার বল হাতে আরেকবার ব্যাট হাতে রংপুরকে একেবারে শেষ ওভারে ম্যাচ জিতিয়েছেন শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা। এছাড়া চট্টগ্রাম পর্বে দুটি ম্যাচে হয়েছেল বড় স্কোর। চিটাগং ভাইকিংস করেছিল ২০১১ এবং খুলনা টাইটান্স করেছিল ২১৩ রান।
ঢাকা ডায়নামাইটস তিন ম্যাচেই পার হয়েছিল ২০০ রানের গণ্ডি। যদিও এগুলোকে উল্লেখযোগ্য’র কাতারে ফেলা যাবে কি না তা বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে শুরুতে উপুল থারাঙ্গা, আন্দ্রে ফ্লেচার, নাসির, এরপর সাকিব, আফ্রিদি, পোলার্ড, তাসকিন, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান, হোসেন আলি, হাসান আলি, আফিফ হোসেন ধ্রুব কিংবা সিকান্দার রাজারা কিছুটা নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
ভালো-মন্দ মিলিয়ে বিপিএলের গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার পথে প্রায়। ইতিমধ্যেই বলতে গেলে তিনটি দল নিশ্চিত করে ফেলেছে শেষ চার। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, খুলনা টাইটান্স এবং ঢাকা ডায়নামাইটস। চতুর্থ দল হিসেবে কে যাবে শেষ চারে, সেটাই এখনও পর্যন্ত নির্ধারণ বাকি।
চতুর্থস্থানের লড়াইয়ে রয়েছে তিন দল। রংপুর রাইডার্স, সিলেট সিক্সার্স এবং রাজশাহী কিংস। সিলেট পর্বে তিন ম্যাচ জেতার পর টানা ৬ ম্যাচ হেরেছে সিলেট। একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে বাতিল। তাদের নিয়ে আশা দেখার আশাও যেন ছেড়ে দিয়েছে সিলেটের সমর্থকরা। সুক্ষ সুতোয় হয়তো শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও টিকে আছে কিছুটা।
সেই ক্ষীণ আশাটাকেই হঠাৎ জোরালো করে তুললো নাসির হোসেনের নেতৃত্বাধীন সিলেট সিক্সার্স। লিগ পর্বের ৩৭তম ম্যাচে এসে হঠাৎ বিপিএলকে গরম করে দিলো সিলেট সিক্সার্স। বাতি নিভে যাওয়ার আগে যেভাবে ধপ করে জ্বলে ওঠে, ঠিক তেমনই জ্বলে উঠলো সিলেট সিক্সার্স। মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বিকেলের ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে মাত্র ৬৭ রানে অলআউট করে দিল সিলেট!
বিপিএলের এবারের আসরে সর্বনিম্ন স্কোর গড়লো চিটাগং। আগেই তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এখন খেলছে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার জন্য। এ কারণেই হয়তো কিছুটা আশা হারানো দল তারা। তাদেরকে সামনে পেয়েই কি না সিলেট সিক্সার্স চেপে ধরলো। নাসির হোসেনের বিধ্বংসী ঘূর্ণি বোলিংয়ের সামনে দিশেহারা হয় পড়ে চিটাগং। ৩১ রান দিয়ে একাই ৫ উইকেট নিলেন নাসির।
তার সঙ্গে জ্বলে উঠলেন নাবিল সামাদ। ৩ ওভারে ৭ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। আর শরিফুল্লাহ ২৩ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। চিটাগং অলআউট ১২ ওভারে মাত্র ৬৭ রানেই। এরপর ১১.১ ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে সিলেট। মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং আন্দ্রে ফ্লেচার মিলে শেষ করে দেন ম্যাচটি।
নাসির এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠবেন, কে জানতো! চিটাগংয়ের টপ অর্ডার-মিডল অর্ডারে একাই ধ্বস নামালেন তিনি। সৌম্য সরকার, লুক রনকি, লুইস রিস, স্টিয়ান ফন জিল এবং তানবির হায়দার- এই পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন তিনি খুব দ্রুতই। তার বলে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ রান করেছেন লুইস রিস। ১১ করেন স্টিয়ান ফন জিল। গোল্ডেন ডাক মেরেছেন সৌম্য সরকার।
নাসিরের বিষমাখানো ঘূর্ণির পর চিটাগংয়ের লেজ মুড়ে দেয়ার কাজটি করেন নাবিল সামাদ। মাঝে শরিফুল্লাহ ২ উইকেট নেন। মোট কথা তিনজনের হাতেই পুরোপুরি বিধ্বংস্ত হলো চিটাগং ভাইকিংস।
১০ উইকেটে এই ম্যাচটি জিতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রানরেটও বেশ বাড়িয়ে নিয়েছে সিলেট। ১১ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন পঞ্চম স্থানে। রান রেট এখনও মাইনাস ০.৩৪০। তবে পরের ম্যাচও যদি তারা জিতে যায় এবং বাকি দুই ম্যাচ রংপুর হেরে যায়, তাহলে সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়ে সিলেটই চলে যাবে শেষ চারে!
শেষ মুহূর্তে এসে সিলেট যেভাবে জয় পেলো, তাতে বিপিএল জমে উঠেছে, বলাই যায়।
আইএইচএস/আইআই