‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফিই জেতালেন রংপুরকে
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৯ রান। সিলেটের হয়ে বল করতে আসলেন ইংলিশ পেসার টিম ব্রেসনান। রংপুর রাইডার্সের হয়ে স্ট্রাইকে ব্যাটসম্যান মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের ম্যাচেই যিনি তিন নম্বরে নেমে ঝড় তুলেছিলেন। ১৭ বলে খেলেছিলেন ৪২ রানের ইনিংস। সেই মাশরাফি আজ ব্যাট করতে নামলেন সাত নম্বরে।
টিম ব্রেসনানের সামনে স্ট্রাইকে মাশরাফি। নন-স্ট্রাইকে নাহিদুল ইসলাম। প্রথম বলটিই ব্রেসনান দিলেন ওয়াইড। বল ঠিকই থাকল। লক্ষ্য কমল ১। পরের বলটি ঠিকই ছিল। কিন্তু কোনো রান নিতে পারলেন না মাশরাফি। চাপ বেড়ে গেল রংপুরের ওপর। সিলেটের অধিনায়ক নাসির হোসেন এমনভাবে ফিল্ডিং সাজালেন যাতে বল গড়িয়ে বাউন্ডারিতে যেতে না পারে। সিঙ্গেল নিতে গেলেও সেটা যেন সিঙ্গেলসই হয়, ডাবল যেন না হয়।
কিন্তু মাশরাফি এসব সাজানো ফিল্ডিংকে থোড়াই কেয়ার করলেন। টিম ব্রেসনানকে লং অনের ওপর দিয়ে সোজা পাঠিয়ে দিলেন মাঠের বাইরে। ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফুলটস দিয়ে ফেলেছিলেন ব্রেসনান। বল গেলো দুটি। লক্ষ্য দাঁড়াল ২। অথ্যাৎ ৪ বলে দুই। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে নাহিদুল ইসলামকে পাঠালেন মাশরাফি। এবার নাহিদুল মাটি কামড়েই বলটিকে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিলেন।
২ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে রংপুর রাইডার্স। ব্যাটসম্যান মাশরাফির ব্যাট থেকে ১০ বলে এলো ১৭ রান। দুটি বিশাল ছক্কা। সবচেয়ে বড় কথা, শেষ ওভারে ব্রেসনানকে ওই ছক্কাটি মারতে না পারলে রংপুরের জয়ই হয়তো অনিশ্চিত হয়ে যেতো। নাহিদুল থাকলেন ৭ বলে ১৪ রানে অপরাজিত।
সিলেট সিক্সার্সের দেয়া ১৭৪ রানের লক্ষ্য ২ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেট হারিয়ে টপকে গেলো রংপুর রাইডার্স। সিলেটকে ৪ উইকেটে হারাল মাশরাফির দল। সে সঙ্গে ৯ ম্যাচ শেষে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে উঠে গেল রংপুর এবং শেষ চারের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করলো তারা। ১০ ম্যাচ খেলে সিলেট সিক্সার্সের এ নিয়ে টানা ৬ পরাজয় এবং তারা নেমে গেল পয়েন্ট তালিকার সপ্তম স্থানে।
রংপুর রাইডার্স দলটিতে অনেক বড় বড় নাম রয়েছে; কিন্তু এখন হয়তো সবচেয়ে বড় নাম মাশরাফি বিন মর্তুজাই। এত ইনজুরি নিয়ে এখনও তিনি খেলে যাচ্ছেন সাবলিলভাবে। দলকে নেতৃত্ব দেয়াই নয়, জয়েও নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। আজও যখন সিলেটের কাছে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটিতে খাদের কিনারা থেকে রংপুরকে টেনে তুললেন তিনি। মাশরাফির নায়কোচিত ব্যাটিংয়ের ওপর নির্ভর করেই সিলেটকে ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স।
শেষ ওভারে মাশরাফির ব্যাটিংই রংপুরকে অতি জরুরি জয়টি উপহার দেয়। মাশরাফি যখন উইকেটে নামেন তখন রংপুরের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭ বলে ৪৮ রান। রবি বোপারার সঙ্গে ২০ রানের জুটি গড়েন তিনি। এরপর নাহিদুলকে নিয়ে গড়লে ৩১ রানের জুটি। মাশরাফির এই অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় রংপুর রাইডার্স।
এর আগে ১৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় দানব ক্রিস গেইল ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। মাত্র ৫ রানেই তাকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়। আজ কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারে দারুণ পরিবর্তন আনে রংপুর। ওপেনিং থেকে ম্যাককালামকে নামিয়ে দেয়া হয় তিন নম্বরে। গেইলের সঙ্গে জুটি বাধা হয়নি তার। বরং গেইলের সঙ্গে জুটি বেধে ইনিংস ওপেন করতে নামেন জিয়াউর রহমান। গেইল ব্যর্থ হলেও তবে একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন জিয়াউর রহমান। ১৮ বলে ৩৬ রান করে আউট হন জিয়া। ইনিংসটি তিনি জাসান পাঁচটি বাউন্ডারি এবং দুটি ছক্কার সাহায্যে।
এরপর মোহাম্মদ মিথুন উইকেটে এসে ১৭ বলে ১৮ রান করে আউট হয়ে যান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা ব্রেন্ডন ম্যাককালামই এদিন ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ৩৮ বলে ৪৩ রান আসে ম্যাককালামের ব্যাট থেকে। খুবই স্লো ব্যাটিং করেন এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। যেন রান করার চেয়ে উইকেটে সেট হওয়াই লক্ষ্য বেশি ছিল তার। ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কার মার।
রংপুরের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন রবি বোপারা। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৩৩ রান। ইনিংসটিতে ছিল একটি ছক্কা ও একটি চারের মার। সিলেটের বোলারদের মধ্যে কামরুল ইসলাম রাব্বিছাড়া সোহেল তানভির, নাবিল সামাদ, টিম ব্রেসনান ও আবুল হাসান একটি করে উইকেট নেন। দু’জন ব্যাটসম্যান হলেন রানআউট।
উল্লেখ্য, সাব্বির-বাবরের অসাধারণ দুটি ইনিংসের উপর ভর করেই সিলেট সিক্সার্স ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে সংগ্রহ করে ১৭৩ রান। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন নাজমুল ইসলাম।
এমএএন/আইএইচএস/আরআইপি/আইআই