১৭ ওভারে অলআউট মাত্র ২ রানে!
১৭ ওভার। ১১ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৯ জনের পাশেই শূন্য। ১ জনের পাশে লেখা ১টি রান। বাকিটি ওয়াইড মোট দলীয় সংগ্রহ ২। তাতেই অলআউট পুরো দল। প্রতিপক্ষের সামনে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩ রান। বল করতে নেমেও প্রথম দলটি বৈধ বল করতে পারল মাত্র ১টি। তাতেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল প্রতিপক্ষ।
ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্য, সবচেয়ে কম স্কোরের ম্যাচের রেকর্ড জন্ম হলো ভারতে। চলমান অনুর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে। কেরালা অনুর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করছিল নাগাল্যান্ড অনুর্ধ্ব-১৯ দল। তারাই অলআউট হলো মাত্র ২ রানে।
ক্রিকেটের ইতিহাস বইয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা একের পর এক রেকর্ডই লিখে গিয়েছেন। একশ’টি সেঞ্চুরি, হাজার হাজার রান, সর্বোচ্চ ইনিংস কিংবা ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সেই ভারতেই এবার ব্যাট হাতে রচিত হলো ইতিহাসের এমন এক লজ্জার, যে লজ্জার রেকর্ড ভাঙা সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে আর সম্ভব হবে না।
ইতিহাসে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই এর আগে মাত্র ২ রানে তো আর কোনোদিন কোনো দল অলআউট হয়নি! ভারতীয় মেয়েরাই অবশেষে সেই লজ্জ্বার জন্ম দিল।
ভৌতিক সেই স্কোরকার্ডে নাগাল্যান্ডের ওপেনার মেনকার ব্যাট থেকেই এসেছে একমাত্র রানটি। অন্যটি ওয়াইড থেকে। শেষ রানটি এসেছিল ৬ষ্ঠ ওভারের শুরুতেই। এরপর বিনা উইকেটে ২ রান থেকে নাগাল্যান্ড অনুর্ধ্ব-১৯ দলের মেয়েরা পরের ১১.৪ ওভারেই অলআউট সেই ২ রানেই! কেরালার ৫ বোলারের মধ্যে ৪জনই কোনো রান হজম করেননি।
শুধুমাত্র আলিনা সুরেন্দ্রনই একমাত্র বোলার, যিনি রান দিয়েছেন। মিন্নু মানি একাই ৪ ওভার বল করে কোনো রান না দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১১তম ওভারেই নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। নাগাল্যান্ডের ইনিংস শেষে তার বোলিং ফিগার ৪-৪-০-৪। সত্যিই এক অবিশ্বাস্য বোলিং ফিগার।
নাগাল্যান্ড মেয়েদের ভৌতিক এই পারফরম্যান্সের একমাত্র কারণই হচ্ছে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মোটেও প্রস্তুতি নিতে না পারা এবং সুযোগ-সুবিধার অভাব।
নাগাল্যান্ডের কোচ হোকাইতো জিমোমি, যিনি রঞ্জি ট্রফিতেও খেলেছিলেন, ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘এই দলটি গত সেপ্টেম্বরেই প্রথম প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু তুমুল বৃষ্টির কারণে বলতে গেলে কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারেনি। ইনডোরে প্রস্তুতি নেয়ার কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না তাদের সামনে।’ সেপ্টেম্বরের ১ তারিখই অবশ্য নাগাল্যান্ডের কোচিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জিমোমি।
নাগাল্যান্ডসহ ভারতের আরও ৫টি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিসিসিআইয়ের অনুর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পায়। বাকি ৫টি হচ্ছে, অরুনাচল প্রদেশ, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম এবং সিকিম। তাদের সঙ্গে ছিল বিহারও। নর্থ-ইস্ট অনুর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেই নাগাল্যান্ড উঠে এসেছে ভারতের অনুর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে। এই টুর্নামেন্টে বিহারের পর দ্বিতীয় হয়ে খেলেছে সুপার লিগেও।
কোচ জিজোমি নাগাল্যান্ডে মেয়েদের জন্য একটি ক্রিকেট কোচিং স্কুল খুলেছেন। ওই স্কুল থেকেই ৯জনকেই অন্তর্ভূক্ত করেছেন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে। তবে ওই মেয়েদের বয়স কারোরই ১৫-১৬’র বেশি নয়।
আইএইচএস/এমএস