ভোরে শুরু ছাই নিয়ে ক্রিকেট-যুদ্ধ
একটুখানি ছাই। এটা নিয়েই তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে আজ। যুদ্ধটা অবশ্য দুই একদিনের নয়, শতবর্ষী পুরোণো এই যুদ্ধের দুই দল-ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া। গ্যাবায় আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় সেই দ্বৈরথেই নেমে পড়ছে ক্রিকেটের গৌরবময় ঐতিহ্য কাঁধে বয়ে চলা এই দুই পরাশক্তি। যে সিরিজটার নাম ‘অ্যাশেজ সিরিজ’।
২০১৩ থেকে ২০১৫; এই দুই বছরের মধ্যে তিন-তিনটি অ্যাশেজ খেলে ফেলেছিল দুই দল। পরের দুই বছরে হচ্ছে একটি। ক্রিকেট বিশ্বে অ্যাশেজ নিয়ে উম্মাদনাটা তো বরাবরেই। অনেকটা সময় অপেক্ষার পর বলে এবার সেটা একটু বেশি হবে, না বললেও বোঝা যাচ্ছে।
অ্যাশেজ নিয়ে এবার সবার আগ্রহটা আরও একটা কারণে। এবারের অ্যাশেজ লড়াইটি যে তারুণ্যের লড়াইও। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ আর ইংল্যান্ডের জো রুট, দুই তরুণই প্রথমবারের মত দলকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন মহামর্যাদার দ্বৈরথে।
শুধু নেতৃত্বে নয়। তারুণ্যের জয়গান অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের পুরো দলেই। অস্ট্রেলিয়া দলের শক্তিশালি পেস আক্রমণ থাকতে পারে। কিন্তু এক নাথান লিয়ন ছাড়া তাদের কোনো বোলারেরই ঘরের মাঠে অ্যাশেজ খেলার অভিজ্ঞতা নেই।
এদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে ইংল্যান্ড। তাদের দলে আছে স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসনের মত অভিজ্ঞ পেসার। তবে তার মধ্যেও একটি আক্ষেপ, ২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুঃস্বপ্নের অ্যাশেজে সেরা পারফমার ছিলেন বেন স্টোকস। নাইটক্লাব কান্ডে তিনি এবার দলের বাইরে।
ইংল্যান্ড সর্বশেষ ৫ অ্যাশেজের ৪টিই জিতেছে। হেরেছে ওই ২০১৩-১৪ মৌসুমে। তবে এসব পরিসংখ্যান গ্যাবায় খেলার আগে বলে আদতে লাভ হবে না তাদের। পেস আর বাউন্সের স্বর্গরাজ্যে বরাবরই এগিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা। গত ২৯ বছরে গ্যাবায় কোনো দলের কাছেই হারেনি অজিরা (সর্বশেষ হেরেছিল ১৯৮৮ সালে)। আর ইংল্যান্ড এখানে জেতেনি ১৯৮৬ সালের পর।
এই পরিসংখ্যানটা মাথায় আছে জো রুটের। তবে ইংলিশ অধিনায়ক এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী কন্ঠ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে জিততে এসেছি। এখানে তাদের ভালো রেকর্ড আছে বলেই অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টটা এখানে খেলছে। তবে এখানে যদি আমরা একটি ম্যাচে এগিয়ে যাই, তবে তার চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে!’
সিরিজ শুরুর আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়া তাদের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ইংল্যান্ডের কি হয়েছিল দেখেছেন? ম্যাচের আগে আরও একবার ওই দুঃস্মৃতি মনে করিয়ে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে চাচ্ছেন স্টিভেন স্মিথ। অজি অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা দেখেছি এখানে গতবার এসে ইংল্যান্ডের কয়েকজন পিচের বাউন্স দেখে ঘাবড়ে গেছে। আশা করছি, আমরা এবারও এমনটা করতে পারব।’
এদিকে, ঘাড়ে ব্যথা পেলেও সিরিজের প্রথম টেস্টের অস্ট্রেলিয়া একাদশে সম্ভবত থাকছেন ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাচের আগে পিঠে হালকা চোট পেয়েছেন শন মার্শও। ফলে বিকল্প হিসেবে দলে ঢুকেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ওয়ার্নার বা মার্শের একজন খেলতে না পারলে সে জায়গায় দেখা যেতে পারে এই অলরাউন্ডারকে। ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টিম পেইন।
ইংল্যান্ড এই ম্যাচে খেলতে পারে চার পেসার নিয়ে। ক্রেইগ ওভারটনের বদলে একাদশে খেলার জোর সম্ভাবনা রয়েছেন জ্যাক বলের। মঈন আলী ছয় এবং জনি বেয়ারস্টো সাত নাম্বারে ব্যাটিং করার কথা।
অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য একাদশ : ক্যামেরন বেনক্রফট, ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ (অধিনায়ক), পিটার হ্যান্ডসকম্ব, শন মার্শ, টিম পেইন, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, নাথান লিয়ন, জশ হ্যাজলউড।
ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ : অ্যালিস্টার কুক, মার্ক স্টোনম্যান, জেমস ভিন্স, জো রুট (অধিনায়ক), ডেভিড মালান, মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো, ক্রিস ওকস, জ্যাক বল, স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন।
এমএমআর/আইএইচএস/এমএস