ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কা নয়, অস্ট্রেলিয়ান একাডেমির কোচ হচ্ছেন হাথুরু

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৭

তার হঠাৎ পদত্যাগ যেন ‘ বিনা মেঘে বজ্রপাত।’ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচের পদ থেকে সড়ে দাঁড়াতে পারেন-এর সামান্যতম আভাস বা ইঙ্গিত মেলেনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) বর্তমান বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনসহ বেশ ক’জন শীর্ষ পরিচালক ও বোর্ডের নীতি নির্ধারনী মহলের ক’জনার সাথে ছিল তার আন্তরিক সম্পর্ক। এতকাল জানা ছিল, বিসিবি বিগ বসের পছন্দের মানুষ হাথুরু। বিভিন্ন সময় হাথুরুর ইচ্ছের বাস্তবায়ন এবং তার কর্ম কান্ডের প্রতি বোর্ড প্রধানের নৈতিক সমর্থণে এমন ধারণাই হয়েছে প্রতিষ্ঠিত।

ক্রিকেটের অল্প সল্প খোঁজ খবর যারা রাখেন, তাদের সবার জানা-নাজমুল হাসান পাপনের একান্তই আপন জন হাথুরু। তার কাছের মানুষ। পছন্দের ব্যক্তিত্ব। সেই হাথুরু বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ বাংলাদেশের প্রধান কোচের পদ থেকে সড়ে দাঁড়াবেন, তা যে ছিল ভাবনার অতীত।

যা হোক, অনেক সময় এমন হয়। তাইতো কথায় বলে, ‘মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক।’ তবে কেউ ভাবুন আর নাই ভাবুন-এটাই সত্য যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান প্রশিক্ষকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এটা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। বিসিবি বিগ বস নিজ মুখেই তা জানিয়েছেন।

এখন সবার প্রশ্ন একটাই-হঠাৎ কি এমন হলো যে, হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ? এমন হতো যে, বিসিবি ফুটবল বা হকি কোচের মত জাতীয় দলের কোচের পারিশ্রমিক যথা সময় ও ঠিকমত দিতে পারে না। হাথুরুর বেশ কয়েক মাসে বেতন বকেয়া। বিসিবি তার বেতন ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ঠিক মত পরিশোধ করতে পারছে না, এমন কিছু।

কিন্তু অমন কিছু হয়নি। হবার প্রশ্নই আসে না। হাথুরু কেন, বিসিবির কোন কোচিং স্টাফেরই বেতন ভাতা অনিয়মিত না। আর্থিক দিক থেকে বিসিবি অনেক সমৃদ্ধই। বিদেশী কোচিং স্টাফের বেতন ভাতা খুবই নিয়মিত। তার চেয়ে বড় কথা, হাথুরু বিসিবির কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ বেতন ভাতা পান। আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশী। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী জাতীয় দলের ক্রিকেট কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের মাসিক বেতন অনেক বেশী। প্রায় ২৮ লাখ টাকা । কাজেই বেতন ভাতা নিয়ে অসন্তুষ্ট হবার প্রশ্নই আসে না।

দ্বিতীয় কারণ হতে পারতো, বিসিবির সাথে তার সম্পর্কের হঠাৎ অবনতি ঘটলে। তাও ঘটেনি। বিসিবির প্রধান থেকে শুরু করে শীর্ষ পরিচালক ও নীতি নির্ধারক মহলের সাথে তার সুসম্পর্ক। তাহলে কি এমন ঘটলো বা কি এমন কারণ যে, হাথুরুসিংহে হঠাৎ সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন ? তা নিয়ে আছে মত পার্থক্য। এক পক্ষ বলছে, জন্মসূত্রে শ্রীলঙ্কান হাথুরুসিংহে তার নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার কোচের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাই তিনি সানন্দে রাজি হয়ে বাংলাদেশের কোচিং ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হাথুরুকে শ্রীলঙ্কার কোচ করা হতে পারে , লঙ্কান বোর্ড ভবিষ্যত কোচ হিসেবে হাথুরুর কথা ভাবছিলেন -এমন একটা গুঞ্জন অবশ্য ছিল। গত মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন শ্রীলঙ্কা সফরে, তখন এমন একটা গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।

তবে সেটা আমলে আনার মত নয় এই কারণে যে, লঙ্কান বোর্ড বিসিবির মত আর্থিক দিক থেকে তত স্বচ্ছল নয়। হাথুরু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে অনেক মোটা অংকের টাকা বেতন- ভাতা পান, লঙ্কান বোর্ড অত টাকা বেতন দিতে পারবে না।

কিন্তু ঢাকা তথা বাংলাদেশে এখন সেই খবরই চাওর হয়ে গেছে। গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে , হাথুরুসিংহে খুব শীঘ্রই শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের কোচ হতে যাচ্ছেন। লঙ্কান বোর্ডের প্রস্তাবে তিনি সম্মত। দু’পক্ষের কথা বার্তাও একপ্রকার চূড়ান্ত, তাই হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ এ খবরকে সত্য ধরে বসে আছেন। কিন্তু ভিতরের খবর হলো, সেটাই শেষ কথা নয়। শ্রীলঙ্কার কোচ হতে যাচ্ছেন বলেই হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ ছেড়ে দিচ্ছেন- এ খবর সত্য নয়। একটি দায়িত্বশীল নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, হাথুরু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের একাডেমির হেড কোচের অফার পেয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচের অফার পেয়েই মূলতঃ তিনি বাংলাদেশের হেড কোচের পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিসিবিকে চিঠি দিয়েছেন। এ কথার স্বপক্ষে একটা বড় দলিল হলো, বর্তমানে হাথুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তার পরিবার ও সন্তান সন্ততি সব অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে লেখাপড়াও করছে। অস্ট্রেলিয়ান হেড কোচ পদে কাজ করতে পারলে পরিবারের সাথেই থাকার সুযোগ হবে।

ঢাকায় হাথুরুসিংহের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে, হাথুরুর পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। তারা আর শ্রীলঙ্কায় ফিরে যেতে রাজি নন। এটাও শ্রীলঙ্কার কোচ না হয়ে হাথুরুসিংহের অস্ট্রেলিয়ান একাডেমির কোচিং করানোর একটা বড় কারণ।

এর বাইরে আরও একটা কারণ আছে। বাংলাদেশে হাথুরুর খুব কাছের জনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কিছু কর্মকান্ড মনোপুতঃ হয়নি হাথুরুসিংহের। প্রথমত, মুমিনুল হককে দলে নেয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন হাথুরু। টেস্ট স্কোয়াডে ঢোকানোই শেষ নয়। এর পরে মুমিনুল হককে সীমিত ওভারের ফরম্যাটের সিরিজে স্কোয়াডে রাখাতেও দারুণ চটেছিলন লংকান এই কোচ।

তখনই তার প্রথম মনে হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার কথাই শেষ কথা নয়। আরও কথা আছে। আর ক’জনার কথা খাটে। তিনি একাই ক্ষমতাধর নন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, তার আগে হাথুরুসিংহে অমনই মনে করতেন। মনে করার কারণও ছিলো। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হবার বছর খানেক যেতেই তিনি হয়ে ওঠেন বিসিবি সভাপতির আস্থাভাজন। বিশ্বাসী ও প্রিয় পাত্র। তার মতের বাইরে কিছুই ঘটতো না। এমনকি হাথুরুর সাথে দ্বন্দ্বের ও মতের অমিল হওয়ায় বিসিবি পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয় ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য হন।

বিভিন্ন সময় হাথুরুর কোন বক্তব্য বা ইচ্ছের প্রতি পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে এসেছেন বিসিবি প্রধান পাপন। সেই হাথুরু শুধু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমির হেড কোচ কিংবা শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচের অফার পেয়েই তা লুফে নেবেন-তাইবা কি করে ভাবা ?

কারণ প্রথমতঃ লঙ্কান বোর্ডের চাকুরিটা বিসিবির মত এত লোভনীয় নয়। বেতন ভাতা কম। অস্ট্রেলিয়ান একাডেমির বেতন ভাতা হয়ত বেশী। কিন্তু ভিতরের খবর হলো, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের ব্যর্থতায় বোর্ডের ভিতরে বেশ সমালোচনা হয়েছে। স্থানীয় প্রচার মাধ্যমেও কোচ হাথুরুর পারফরম্যান্স, অর্জন ও প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । সে সমালোচনায় হাথুরুর বোর্ডে অবস্থান খানিক নড়বড়ে হয়েছে।

এর মধ্যে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম প্রকাশ্যে কোচের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। হাথুরু তাকে টিম মিটিংয়ে যা যা বলেছেন, মুশফিক প্রকাশ্যে তা মিডিয়ার সামনে বলে দিয়েছেন। এরপর মুমিনুল হককে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নেয়া হয়েছে। আর সর্বশেষ ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ব্যর্থতার কারণ জানতে দরকার হলে হাথুরুকে ছুটি থেকে বাংলাদেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’- বোর্ড সভাপতির এমন বক্তব্যেও হাথুরু নাকি নাখোশ।

অর্থাৎ, হাথুরুসিংহে ধরে ফেলেছেন, বিসিবিতে তার অবস্থান আগের মত নেই। খানিক নড়বড়ে। তার মতামতের প্রাধান্যও গেছে কমে। তার সাথে অস্ট্রেলয়ান একাডেমির লোভনীয় অফার। সব মিলেই হাথুরু বাংলাদেশের কোচ থেকে সড়ে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

এআরবি/এমএমআর/এমএস

আরও পড়ুন