সিলেট সিক্সার্সে যেন নাসিরই রাজা!
শেষ পরিণতি কী হবে, সিলেট সিক্সার্স কতদূর যাবে, কোথায় গিয়ে থামবে?- তা বলে দেবে সময়। তবে এখন, মানে বিপিএলের শুরুতে ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ নাসির বাহিনীর। চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৯ উইকেটে হারিয়ে যাত্রা শুরু। ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর আরেক ফেবারিট কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষেও শেষ হাসি স্বাগতিকদের। জয়রথ সচল নাসির বাহিনীর।
দুদিনের একটি ম্যাচেরও জয়ের নায়ক কিংবা ম্যাচসেরা পারফরমার নন তিনি। তারপরও তার কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মুখে। প্রথম অধিনায়ক হয়েই শুরুতে সফল নাসির। তার দল পরিচালনা, বোলার ব্যবহার এবং নিজের বোলিং- সবই প্রশংসিত হচ্ছে।
দুই ম্যাচে ৪+৪ = ৮ ওভারে ঝুলিতে জমা পড়েছে ৩ উইকেট। তারচেয়ে বড়, দু’ম্যাচেই দলের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং নাসিরের। আগের দিন ২০ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। আজ এক উইকেট কম পেলেও রান দিয়েছেন আরও কম; মাত্র ১৮।
দুই ম্যাচে ওভার পিছু মাত্র ৪.৭৫ রান দেয়াই শুধু নয়, অধিনায়ক নাসির রীতিমতো সিলেটের স্ট্রাইক বোলার বনে গেছেন! নিজের ওপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস রেখে দুই ম্যাচে বোলিং ওপেন করে গতকাল প্রথম ওভারে ঢাকা ওপেনার মেহেদী মারুফকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু উপহার দেয়া নাসির আজ প্রথম ওভারে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ওভারে ইমরুল কায়েসকে বোল্ড করে কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন।
মোট কথা, অধিনায়ক নাসির সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেটকে। পরপর দুই ম্যাচে দুই জায়ান্টকে হারাতে পেরে কেমন লাগছে? নাসিরের হাসিমুখ করা জবাব, ‘অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো লাগছে। টি-টোয়েন্টিতে ছোট-বড় কোনো দল নাই। কারণ, এক দুইজন খেললেই দল জিতে। আমাদের দলে বড় কোনো নাম হয়তো নাই; কিন্তু যারা আছে, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। টি-টোয়েন্টিতে দুই একজন ভালো খেললেই ম্যাচ জেতা সম্ভব।’
বোলার নাসিরকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে বলা হলে নাসিরে ছোট্ট জবাব, ‘আমি সব সময় বোলিং উপভোগ করি। মাঠের ভিতরে আমার যেটা ভালো লাগে, সেটাই করছি।’
প্রথম ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে ১২৫, আর আজ কুমিল্লার বিপক্ষে ৭৩- টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিচারে অনেক বড় উদ্বোধনী জুটি। পরপর দুই ম্যাচে এমন লম্বা ও কার্যকর জুটি গড়া মানেই সাফল্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া।
ওপেনাররাই কি পর্থেক্য গড়ে দিচ্ছেন? নাসিরের ব্যাখ্যা, ‘ওপেনাররা ভালো খেলছে বলে আমাদের কাজ সহজ হচ্ছে। তবে তাদের মতো ভালো করার আরও ক্রিকেটার দলে আছে। তারা যদি কোনোদিন ফ্লপ করে, তাহলে কামব্যাক করার মতো অনেক পারফরমার আমাদের হাতে আছে।’
শুধু ব্যাটসম্যানই নয়, বোলার এবং ফিল্ডারদের পারফরমেন্সেও বেশ সন্তুষ্ট নাসির, ‘উইকেট ফ্লাট ছিল। বোলিংয়েও আমরা ভালো করতে চাই। বিশেষ করে বাউন্ডারি কম দিতে চাই। এ রকমই পরিকল্পনা থাকে। দুইটা ম্যাচেই আমরা কাউকে বড় স্কোর করতে দেইনি। এ ছাড়া ফিল্ডিং ভালো হচ্ছে। এ দিক থেকে আমরা খুব খুশি। সব মিলিয়ে আমরা খুব ভালো বোলিং করছি। এটাই আমাদের এগিয়ে দিচ্ছে।’
খেলা শেষ ওভারে গড়ানোয় পরও জেতার আস্থা ছিল নাসিরের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘আমার পুরোপুরি বিশ্বাস ছিল। শুধু আমার না, পুরো দলের বিশ্বাস, ম্যাচটা আমরা জিতবো। শেষ ওভারের কথা বললে বলবো যে, শুভাগত আউট হওয়ার পর আমরা একটা বাউন্ডারির জন্য দোয়া করছিলাম। কারণ আপনি যদি দেখেন, শেষ ওভারের আগে অনেকক্ষণ আমাদের কোনো বাউন্ডারি হয়নি। তাই একটা বাউন্ডারি বের হলে আমরা জিতবো, এমন মনে হচ্ছিলো। একটা বাউন্ডারির জন্য আমরা ওয়েট করছিলাম।’
দলে তেমন কোনো সিনিয়র প্লেয়ার না থাকায় কি অধিনায়কত্ব করা সহজ হচ্ছে? নাসিরের জবাব, ‘এ লেভেলে এসে তো কাউকে নতুন করে শেখানোর কিছু নেই। সবাই তো খুব ম্যাচিউরড। কিছু ডিসিশন আছে, যা সময় মতো নিলে ভালো। উপুল থারাঙ্গা আছে, শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়ক। কোনো কিছুর দরকার হলে আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নেই। অনেক সহায়তা পাচ্ছি। খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।’
নাসিরের শেষ কথা শুনে মনে হলো, অধিনায়কত্বটা খুব উপভোগ করছেন। উপভোগ করার কারণও বলে দিলেন, ‘কারণ, আমি যে ডিসিশনই নেই না কেনো, সবাই সেটা বিশ্বাস করে এবং ইতিবাচক থাকে। আছে না, অনেক দলে সিনিয়র খেলোয়াড় থাকলে ডিসিশন নিতে সমস্যা হয়, কারণ অনেকে অনেক কথা বলে। এখানে সেটা নেই। ডিসিশন নিতে সহজ হয় এবং সবাই আস্থা রাখে।’
তার মানে সিলেট সিক্সার্সে নাসিরই রাজা!
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম