আসল সমস্যা কোথায় টিম বাংলাদেশের?
বিপিএল দরজায় কড়া নাড়ছে। আর মাত্র চারদিন পর পর্দা উঠবে দেশের এ জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরের। রাজধানীর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম আর সিলেটে প্রতিযোগি দলগুলোর প্রস্তুতি চলছে জোরেসোরে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মন খারপ।
কী করে মন ভালো থাকবে? তারা সবাই যে প্রিয় জাতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পারফরমেন্স ও পরিণতি দেখে হতাশ। ঘুরে ফিরে সবার প্রশ্ন, পুরো সফরে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে সাতটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারলো না? এতটুকু লড়াইও করতে পারলো না। পারফরমেন্স এত খারাপ হলো কেন?
ওই প্রশ্নমালার শেষ অংশটাই বড়। সত্যিই তো পারফরমেন্স এত খারাপ হলো কেন? জয়-পরাজয় খেলার স্বাভাবিক ধর্ম। এক দল জিতবে, অন্য পক্ষ হারবে, সেটাই স্বাভাবিক।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে বাংলাদেশ কোন ফরম্যাটে সিরিজ জিতে আসবে- তা ভাবাও কঠিন। তাই বলে এক ম্যাচে জয় ধরা দেবে না, কোন খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হবে না- তা কেন? তবে কি এটাই সামর্থ্য? দেশের বাইরে বিশেষ করে এশিয়ার বাইরে কি এর চেয়ে ভাল খেলার ক্ষমতা নেই টাইগারদের?
পাশাপাশি আরও একটি কথাও সবার মুখে মুখে- এই দলই তো গত কয়েক বছর টানা ভাল খেলেছে। ওয়ানডেতে দেশে ও দেশের বাইরে ক্রিকেটের প্রায় সব বড় দলগুলোকে হারিয়েছে। টেস্টেও ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে পর্যদুস্ত করেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটে সিরিজ ড্র করে দেশে ফিরেছে। সেই দলের এমন জরাজীর্ণ অবস্থা কেন?
সেই দল না থাকলে কথা ছিল। কিংবা ওই দলের ৪-৫ জন অবসরে চলে গেছেন বা ইনজুরির শিকার হয়ে বাইরে। তাহলেও কথা ছিল; কিন্তু তাতো হয়নি। হ্যাঁ, বিচ্ছিন্ন দু’একজন হয়ত ছিলেন না।
টেস্টে সাকিব বিশ্রামে ছিলেন, তাই তাকে পাওয়া যায়নি। সে অর্থে তামিমের সার্ভিসও মেলেনি। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি। আর এক ওয়ানডে খেলে উরুর ইনজুরি নিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। বাংলাদেশেরও তিন নির্ভরযোগ্য- অপরিহার্য্য পারফরমার এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সব ম্যাচ খেলতে পারেননি, তাই বলে দল এত খারাপ করবে? আর ব্যক্তিগত পারফরমেন্সও এত খারাপ হবে? এসব নিয়েই রাজ্যের কথাবার্তা।
বোদ্ধা-বিশ্লেষক ও ক্রিকেট পন্ডিতরা নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো বাংলার সাথে আলাপে আফ্রিকা সফর নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। বাংলাদেশ যে গত তিন চার বছর ভাল ক্রিকেট খেলেছে, ম্যানেজার হিসেবে সে পারফরমেন্সকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
তার মত, ‘বড় সিরিজে মনোযোগ-মনসংযোগ ধরে রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ভাল খেলার দুর্নিবার আকাঙ্খাও প্রবল হওয়া দরকার। সর্বোপরি অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন হওয়া উচিৎ পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী। এ কাজগুলোই ঠিকমত হয়নি।’
তবে পুর্বসূরি গাজী আশরাফ লিপু, আকরাম খান কিংবা সারোয়া ইমরানদের সুরে সুর মিলিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনও বলেছেন, ‘এক কথায় আমরা ভালো খেলিনি। বেশ খারাপ খেলেছি। তাই বলে আমি হতাশায় মুষড়ে পড়তে চাই না। তাই বলে ভাবার কোন কারণ নেই যে, বাংলাদেশ খারাপ দল। বিশ্বমানের দলগুলোর সাথে খেলার সামর্থ্য নেই টাগারদের। ক্রিকেটাররা যত খারাপ খেলেছে, আসলে তারা তত খারাপ নয়। এর চেয়ে ভাল খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তাদের। ভুলে গেলে চলবে না, এই ছেলেগুলোই আমাদের সাফল্য উপহার দিয়েছে। একটি সিরিজ বিচ্ছিন্নভাবে খারাপ যেতেই পারে। তারপরও কিছু জায়গায় ফাঁক-ফোকর ছিল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে কেন তারা সেই সামর্থ্যরে প্রয়োগ ঘটাতে পারেনি, তার যথাযথ কারণ খুঁজে বের করা উচিৎ।’
সে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে খালেদ মাহমুদ সুজনের মনেও। তার কথা, আমার মনে হয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। আর পারফরমেন্সের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুজন বলে ওঠেন, ‘বোলাররা বিশেষ করে পেসাররা বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের পারফরমেন্স বেশি খারাপ হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে ব্যাটিংয়ের ওপর। বোলাররা বেশি রান দিয়ে ফেললে, ব্যাটসম্যানদের মনোবলে চিড় ধরা স্বাভাবিক। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাই হয়েছে। একজন বোলারও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।’
মোট কথা বোলিং ব্যর্থতায় গোটা দলের সামগ্রিক পারফরমেন্স নিচের দিকে ধাবিত হয়েছে।
এআরবি/আইএইচএস/আইআই