ব্যর্থতা ঘুচবে ইমরুল, সাব্বির, মাহমুদউল্লাহর?
শেষ পর্যন্ত ব্যবধান ২০ রানের, তারপরও অনেকেরই ধারণা ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারতো। কেন পারেনি? তা নিয়ে মত পার্থক্য আছে। এক পক্ষের কথা, পেসার বেশি খেলানোর মাশুল। চার পেসার মিলে ১০৮ রান দিয়ে ফেলায় কম্ম কাভার।
আবার অন্য মত, মিডল অর্ডারের কেউ দাঁড়াতে পারেননি। কেউ একজন তিরিশের ঘরেও যেতে পারেননি। পারলে ফল অন্যরকম হতে পারতো। পেসারদের ব্যর্থতা নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর; কিন্তু ব্যাটসম্যানদেরও যে দায় আছে, তাদের ভুমিকাও যে ভাল ছিল না, তারাও যে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ- সৌম্য ছাড়া আর কেউ রান করতে পারেননি। সে দায় এড়াতে পারবেন না কেউ।
এর মধ্যে শুধু ওই ম্যাচেই নয়। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুরু থেকে ব্যর্থতার ঘানি টানছেন ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান রুম্মন এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সৌম্য সরকারের কথা বলা হয়েছে। সৌম্য বিরোধীরা তার মেধা-প্রজ্ঞার দিকে না তাকিয়ে একটু বেশিই সমালোচনার হুল ফুটিয়েছেন; কিন্তু প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩১ বলে, ৪৭ রান করে সৌম্য দেখিয়ে দিয়েছেন আমি পারি।
কিন্তু ইমরুল, সাব্বির আর মাহমুদউল্লাহ একটু বেশিই খারাপ খেলছেন। শেষ ম্যাচের আগে তাই তাদের কথাই উঠছে বেশি। তিনজনই রান খরায় ভুগছেন। এর মধ্যে বাঁ-হাতি ওপেনার ইমরুলের অবস্থা বেশ খারাপ। পার্লে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৮ রান ছাড়া পুরো সফরে রান নেই। শেষ দুই ম্যাচে রান ১ আর ১০।
বাকি স্কোর (৩১++২৬+৩২+ ৭+৩২)। এতো গেল এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পরিসংখ্যান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শেষ ১২ ম্যাচে (১০+৩৬+০+০+১৪+১৮+১+১০+২+২২+০+০) রান নেই ইমরুলের ব্যাটে। কাজেই আগামীকাল তার দায় পুরনের ম্যাচ। তবে পচেফস্ট্রম ম্যাচে একাদশে তার জায়গা হবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। এ ম্যাচে ইমরুলের জায়গায় লিটন দাসকে দেখা যেতে পারে।
একই অবস্থা সাব্বির ও মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও। এ বছর ৬ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ১৫০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩২ বলে ৪৮ রান করার পর আর চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান নেই (১৮+১৬+১৯+১৯ ) সাব্বিরের। মাহমুদউল্লাহর আরও জীর্ন দশা। ইস্ট লন্ডনে শেষ ওয়ানডেতে ২ রানে আউট হবার পর ২৬ অক্টোবর আগের টি-টোয়েন্টিতে করেছেন মাত্র ৩ রান।
শেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে (১৯+১৮+৩১+৪*+৩) কোন বড় ইনিংস নেই। আগামীকাল শেষ ম্যাচে এই তিন জনের যে কোন একজনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যিনি বাদ যাবেন, তার তো আর দায় পুরণের কোনই সুযোগ থাকবে না।
তবে দলে থাকলে ইমরুল, সাব্বির আর মাহমুদউল্লাহর রোববার ভাল খেলা এবং রান করা খুব জরুরি। কারণ আগের ম্যাচের চালচিত্র বলে দেয়, এই তিনজনের কম রানে আউট হওয়া এবং দুর্বল স্ট্রাইকরেটই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে পিছিয়ে দিয়েছে।
একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দেই দেখুন। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল সমান ৯৭ করে। পার্থক্য একটাই। প্রোটিয়ারা হারিয়েছিল দুই উইকেট। আর ইনিংসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ খুইয়েছিল তিন উইকেট; কিন্তু শেষ ৬০ বলে ৮ উইকেট হাতে রেখে প্রোটিয়ারা ৯৮ রান তুলতে পারলেও বাংলাদেশ ৭৮ রানের বেশি করতে পারেনি।
সেটা সম্ভব হয়নি মুলতঃ দুটি কারণে। প্রথম কারণ, ৯.১ ওভারে ৯২ রানে সৌম্য আউট হবার পর মাত্র ১৩ বলে ১২ রানে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারিয়ে বসে। ১০.৪ ওভারে মুশফিক আর ১১.২ ওভারে ১০৪ রানে মাহমুদউল্লাহ আউট। সেই যে পিছিয়ে পড়া, আর তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া পুরো ইনিংসে একটি বড় জুটি তৈরি হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে ছিল একজোড়া বড় জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে ডি কক আর এবি ডি ভিলিয়ার্স ৭৯ রান তোলার পর পঞ্চম উইকেটে ফারহান বেহারডিয়েন এবং ডেভিড মিলারের ৬২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই ২০০‘র খুব কাছে পৌঁছে যায় প্রোটিয়ারা। সেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি হলো ৪৩ (ইমরুল আর সৌম্যর, ওপেনিং জুটিতে ৩.৫ ওভারে)।
কাল শেষ ম্যাচে ভাল কিছু করতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নতির পাশাপাশি এই শূন্যতাগুলো দুর করতে হবে। তবেই শেষ ম্যাচে সান্তনার জয় ধরা দিতে পারে।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম