এবার টাইগারদের টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ
অন্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিনকে দিন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট অনুরাগিরা বিপিএল, আইপিএল দেখতে মুখিয়ে থাকেন। শুধু ওই দুই আসরের কথা বলা কেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটই তাদের খুব পছন্দ। খেলার মান যেমনই থাকুক, বিপিএল দেখতে হাজারো জনতার ঢল নামে শেরে বাংলা আর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। টিভিতে আইপিএল দেখার মানুষও অগণিত।
দর্শক, অনুরাগি আর ভক্তরা যতই পছন্দ করুন না কেন, কঠিন সত্য হলো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ভাল খেলে না। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট্ট ফরম্যাটে টাইগারদের- অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্স মোটেই ভাল নয়। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, এই তিন ফরম্যাটের মধ্যে ২০ ওভারের ছোট ফরম্যাটেই বাংলাদেশের ফল সবচেয়ে খারাপ। এখন পর্যন্ত ৬৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে টাইগাররা জিতেছে মাত্র ২১টিতে। হারের পাল্লা অনেক ভারী। তারা হেরেছে ৪৪টিতে। আর দুটি ম্যাচ হয়েছে বৃষ্টিতে পন্ড।
এমনিতেই রেকর্ড খারাপ। তার মধ্যে সময়টাও খারাপ। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খাবি খাচ্ছে জাতীয় দল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পারফরমেন্স ও ফল মোটেই ভাল হয়নি। নাকাল হয়েছে মুশফিকের দল। তারপর মাশরাফির নেতৃত্বে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে।
মোট কথা এবার দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে গিয়ে চরমভাবে পর্যদুস্ত বাংলাদেশ জাতীয় দল। টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজের ওই খারাপ পারফরমেন্সের রেশ না মিটতেই এসে গেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই শুরু দুই মাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ব্লুমফন্টেইনের ম্যাঙাউঙ্গ ওভালে বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় শুরু হবে খেলা।
আগেই জানা হয়ে গেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান খুব দূর্বল। ১০ টেস্ট খেলুড়ে দেশের তলানিতে থাকা জিম্বাবুয়ে ছাড়া সে অর্থে প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর সাথে বাংলাদেশ এখনো হালে পানি পায় না।
বড় দলের তকমাধারিদের মধ্যে শুধু পাকিস্তান (২০১৫ সালে নিজ মাটিতে) আর শ্রীলঙ্কাকে (২০১৭ সালের এপ্রিলে) একবার হারানোর রেকর্ড আছে টাইগারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে চারবারের মোকাবিলায় জয় অধরা। প্রতিবারই জিতেছে প্রোটিয়ারা।
তারওপর এবার টেস্ট আর ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের দাপটে দাঁড়াতেই পারেনি টাইগাররা। এখন টি-টোয়েন্টিতে তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ফেবারিট। বাংলাদেশ আন্ডারডগ হয়েই মাঠে নামবে।
এদিকে আজকের ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় ইনিংস। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করেছেন সাকিব। মাশরাফি এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোয় আবার সাকিবের কাঁধেই বর্তেছে দল পরিচালনায় দায়িত্ব।
ওয়ানডে অধিনায়কই শুধু নন, মাশরাফি মধ্য তিরিশে গিয়েও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বোলারদের নাভিঃশ্বাস উঠে গেলেও পেসারদের মধ্যে মাশরাফিই সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন।
এ ম্যাচে পেসার মাশরাফিকে মিস করবেন সাকিব।
তারচেয়ে বেশি অনুভুত হবে এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালের অভাব। উরুতে চোট পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তামিম। ফ্রন্টলাইনে ইমরুল কায়েস, লিটন দাস আর সৌম্য সরকার- কেউ ফর্মে নেই। এর মধ্যে ইমরুল ও লিটন দাস ওয়ানডে সিরিজে চরম ব্যর্থ। সৌম্য সরকারও শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। কাজেই তামিমের অভাব আরও বেশি করে অনুভুত হবে।
বোলাররা বিশেষ করে পেসাররা হালে পানি পাচ্ছেন না। স্পিনাররাও উইকেট থেকে এতটুকু সাহায্য না পেয়ে বিপাকে। সাকিব-ইমরুল কেউ সুবিধা করতে পারছেন না। আর রুবেল, তাসকিনরা কি করবেন? ভেবে পাচ্ছেন না। তার সাথে টপ অর্ডারের জীর্ন-শীর্ণ অবস্থা। ইনিংস শুরুর পর পরই বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়ছে।
এখানেই শেষ নয়। মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। ওয়ানডে সিরিজে মুশফিকুর রহীম ছাড়া আর কারো ব্যাট কথা বলেনি। কেউ রান করতে পারেননি। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসির একযোগে ব্যর্থতার মিছিল করেছেন। সব মিলে দলের অবস্থা বেশ খারাপ। এই যে দলের অবস্থা, সেই দলের দায়িত্ব আবার বর্তেছে সাকিব আল হাসানের ওপর। নিঃসন্দেহে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাকিব টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সারা বিশ্বে যে ক’জন সফল ও কার্যকর পারফরমার আছে, তাদের একজন। ব্যাট ও বল হাতে সাকিব অনেক কিছুই করতে পারেন। অতীতে করেও দেখেছেন। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ যে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, সেই ম্যাচেও ব্যাট ও বল হাতে সমান উজ্জ্বল সাকিব। তার অলরাউন্ডিং নৈপুন্যের দ্যুতির কাছে হার মানে শ্রীলঙ্কা। আজকের ম্যাচেও সাকিবই আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। তারপরও বাকিদের পারফরমেন্সও দরকার। একা সাকিব তো আর দল টেনে নিতে পারবেন না।
বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের রেজাল্ট
ম্যাচ |
জয় |
ব্যবধান |
ভেন্যু |
সাল |
দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ |
দ. আফ্রিকা |
৭ উইকেট |
কেপ টাউন |
২০০৭ |
দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ |
দ. আফ্রিকা |
১২ রান |
জোহানেসবার্গ |
২০০৮ |
বাংলাদেশ-দ. আফ্রিকা |
দ. আফ্রিকা |
৫২ রান |
ঢাকা |
২০১৫ |
বাংলাদেশ-দ. আফ্রিকা |
দ. আফ্রিকা |
৩১ রান |
ঢাকা |
২০১৫ |
এআরবি/আইএইচএস/এমএস