ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বিসিবি নির্বাচনে পাপনের প্রার্থী দুর্জয়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

সকাল থেকেই শেরেবাংলা স্টেডিয়াম চত্বরে অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি প্রাণচাঞ্চল্য। স্টেডিয়ামের মূল ফটক দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল গাড়ির বহর। ঘড়ির কাঁটা দুপুর একটা ছোঁয়ার কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ সরব মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম চত্বর। কয়েক’শ যুবক-তরুণ মিছিল করে ঢুকলেন হোম অফ ক্রিকেটে।

তাদের মুখে স্লোগান, ‘দুর্জয় ভাইয়ের পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।’ সেই শো ডাউনের মধ্যমণি নাঈমুর রহমান দুর্জয়। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিসিবিতে এলেন তিন থেকে চার’শ ভক্ত ও সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে।

আগেই জানা, আজ ছিল বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড পরিচালক পর্ষদের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ভক্ত ও সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়েই এলেন মনোনয়ন জমা দিতে।

বিসিবি নির্বাচনে নাঈমুর রহমান দুর্জয় মানিকগঞ্জ জেলার কাউন্সিলর। আর মনোনয়নপত্র তুলতে তার সঙ্গে আসা কয়েকশো যুবক-তরুণের মূল অংশও মানিকগঞ্জের। তাদের সরব উপস্থিতি আর গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত হোম অব ক্রিকেট।

এ ‘শো ডাউনের’ মধ্যমণি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক দুর্জয় ভেতরে ঢোকার অল্প কিছু সময় পরই এলেন সদ্যবিদায়ী বিসিবি প্রধান ও আগামীতে নির্বাচিত হতে যাওয়া নাজমুল হাসান পাপন।

নাঈমুরের ভক্তরা তাকেও বরণ করে নিলেন। নাজমুল হাসান পাপনের গাড়ি শেরেবাংলার মূল গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হলো স্লোগান, ‘দুর্জয় ভাইয়ের পক্ষ থেকে পাপন ভাইকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।’

নাঈমুর রহমান দুর্জয় ছাড়া আজ সারা দিনে আর একজন প্রার্থীরই তোড়জোড় চোখে পড়ল। তিনি তানভির আহমেদ টিটো। নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের মত অত বড় শো ডাউন না করলেও নারায়ণগঞ্জ জেলার কাউন্সিলরের সঙ্গে এসেছিলেন দেশের খেলাধুলার অন্যতম সুতিকাগার নারায়ণগঞ্জের অনেক নামী ক্রীড়াব্যক্তিত্ব।

ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির সাবেক সহ-সভাপতি কুতুবউদ্দীন আকসির, জাতীয় দলের দুই সাবেক ওপেনার জাহাঙ্গীর আলম ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ এবং সাবেক ক্রিকেটার জাকারিয়াও এসেছিলেন তানভির আহমেদ টিটোর সমর্থনে।

মূলত এই দু’জন প্রার্থী ছাড়া আর বাকিরা মনোনয়নপত্র তুলতে এলেন অনেকটাই নীরবে-নিভৃতে। এমনকি যিনি আবারও চার বছরের জন্য বিসিবির বিগবস হতে যাচ্ছেন সেই নাজমুল হাসান পাপনও আসলেন একদম নীরবে।

আসলে তাদের হইচই করার কোনো দরকারও নেই। একপেশে নির্বাচন। কোনো প্রতিপক্ষ নেই। কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই নাজমুল হাসান পাপনের অনুসারী। হাতেগোনা দু’একজন বিপক্ষে। শতকরা হিসেবে ৯৮ থেকে ৯৯ ভাগ পাপনের পক্ষে। ১ থেকে ২ ভাগ কিংবা তারও কম বিপক্ষে।

তাই নাজমুল হাসান পাপনের প্যানেলের অন্য সব প্রার্থী অনেকটা জয় নিশ্চিত ধরেই মনোনয়ন তুলেছেন। কারণ, তিন ক্যাটাগরির মধ্যে ২৫ সদস্যর বোর্ড পরিচালক পর্ষদের তিনটি পদ ছাড়া আর কোথাও নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।

গত ২০ অক্টোবর মনোনয়ন তোলার দিনই মিলেছিল সুস্পষ্ট ইঙ্গিত যে, এক রকম বিনা বাধা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন নাজমুল হাসান পাপন। তার ২৫ সদস্যর প্যানেলেরও বিজয় একরকম নিশ্চিত- সে আভাসও মিলেছিল।

আজ মনোনয়ন জমা দেবার দিন সে আভাস-ইঙ্গিত আরও উজ্জ্বল হলো। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ ছাড়া আর কোনো ক্যাটাগরিতেই নির্বাচন হচ্ছে না। ঢাকার ক্লাব কোটায় নাজমুল হাসান পাপনের প্যানেলে যে ১২ জনের শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বৈধ বলে গণ্য হবে, তাদের আর ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে না। তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন।

একইভাবে ক্রিকেটার্স কোটায় মনোনীত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার পথে। কারণ ওই ক্যাটারিতে আর কেউ মনোনয়ন তোলেননি। তাই জমা দেবার প্রশ্নই আসে না।

একইভাবে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোটায় সাতজনও প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। শুধু ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ঢাকা বিভাগে নাঈমুর রহমান দুর্জয় আর তানভির আহমেদ টিটো ছাড়াও আরও তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন তুলেছেন।

তারা হলেন কিশোরগঞ্জের আশফাকুল ইসলাম, নরসিংদীর শাহিন জুয়েল ও মুন্সিগঞ্জের জুনায়েত হোসেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির অন্যতম সদস্য শেখ সেলিম তনয় শেখ নাইম মনোনয়ন তুললেও শেষ পর্যন্ত আর জমা দেননি।

আগামী ২৯ অক্টোবর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওইদিন যদি এই পাঁচজনের আর কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে ঢাকা বিভাগে এই পাঁচজনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এখন থেকে ১৮ কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন দু’জন পরিচালক।

অন্যদিকে বরিশালে প্রার্থী দু’জন; আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু আর আলমগীর হোসেন আলো। তাদের দু’জনই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে নির্বাচন হবে। বিজয়ীজনই পরিচালক হবেন।

এই দুই বিভাগ ছাড়া ঢাকার ক্লাব কোটায় ১২ জন, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাতজন এবং প্লেয়ার্স কোটায় একজন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার ক্লাব কোটায় ১২টি পদ, তবে আজ সেখানে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৪টি।

দুটি বেশি কেন? নাজমুল হাসান পাপনের জবাব, ‘আমরা দুুটি নাম বেশি জমা দিয়েছি। এদের দু’জন পরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় চলে যাবে।’ এছাড়া পাপন তার পাশে দাঁড়ানো নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে তার প্যানেলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

পাপন বলেন, ঢাকার ক্লাব কোটা, ‘এনএসসসি আর ক্রিকেটার্স কোটায় নির্বাচনের কোনোই সুযোগ নেই। জেলা ও বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুরেও নির্বাচন হবে না। তবে মনে হচ্ছে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে নির্বাচন হতে পারে।’

এটুকু বলেই পাপন দুর্জয়কে দেখিয়ে বলে ওঠেন, ‘তবে আমাদের প্যানেলের প্রাথী নাঈমুর রহমান দুর্জয়। আমরা আমাদের কাউন্সিলরদের জানিয়ে দিয়েছি, ঢাকা বিভাগে দু’জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। তবে আমরা আগেও একজনের নাম ঘোষণা করেছি, আজও সেই দুর্জয়ের কথাই বলছি।’

পাপন পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন ঢাকা বিভাগে আর যে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন, তারা নিজের যোগ্যতা ও সামর্থে লড়ে আসুক। যে জনপ্রিয় সেই তো জিতবে। এদিকে নাঈমুর রহমান দুর্জয় জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।

আগের রাতে ঢকা বিভাগের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসে কথা বলার পর আত্ববিশ্বাসী নাঈমুরের কথা, ‘আমি ১৪/১৫ জন কাউন্সিলরের সঙ্গে বসেছিলাম কাল রাতে। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন। কাজেই আমি আশাবাদী।’

তবে নাঈমুর রহমান দুর্জয় একটি ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেছেন। যা শুনে মনে হয়েছে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নাও হতে পারে। তাই তার মুখে এমন কথা, ২৯ অক্টোবর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এখনো চার-পাঁচদিন বাকি। দেখা যাক, কী হয়?’

সেক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা দেয়া পাঁচজনের মধ্যে একটা আপস রফা হয়ে গেলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। তবে এটা নিশ্চিত আর যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন না কেন, নারায়ণগঞ্জের তানভির আহমেদ টিটো প্রত্যাহার করবেন না। নারায়ণগঞ্জের এ তরুণ ক্রীড়া সংগঠককেও বেশ তৎপর মনে হয়েছে।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস/বিএ

আরও পড়ুন