দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই চেনা সাকিব
তিনি তো মাঠে খেলেন, ব্যাট ও বল হাতে সমান আলো ছড়িয়েই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন। শুধু গায়ে তিন ফরম্যাটে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের তকমাই আঁটা নেই, সাকিব আল হাসান অলরাউন্ডার হিসেবে দিনকে দিন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন। প্রায় প্রতিটি সিরিজ বা আসরেই।
এই তো আগের ম্যাচেও তিনি এক বড়-সড় কৃতিত্বের ফলক স্পর্শ করলেন। একদিনের ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রান ও দু‘শোর বেশি উইকেট পাওয়া অলরাউন্ডারের ছোট্ট তালিকায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেছেন সাকিব।
ওই তালিকায় আগে থেকেই আছেন শ্রীলঙ্কার সনৎ জয়সুরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস আর দুই পাকিস্তানি শহিদ আফ্রিদি ও আব্দুল রাজ্জাক। মোট কথা, সাকিব হলেন বিশ্বের পাঁচ নম্বর অলরাউন্ডার যিনি ওয়ানডেতে পাঁচ হাজারের বেশি রান ও ২০০ প্লাস উইকেট শিকারি।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া সাকিব এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে অর্থে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে সাকিবের রান মোটে ২৫৪। সর্বোচ্চ ৫২। গড় ২৮.২২।
তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাকিবের দুটি মাত্র অর্ধশতকের একটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেটা ২০০৮ সালের নভেম্বরে। নয় বছর আগে পচেফস্ট্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে সাকিবের ব্যাট থেকে হাফ সেঞ্চুরি (২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর পচেফস্ট্রমে ৫১) বেরিয়ে এসেছিল। ওই সিরিজের অপর ম্যাচে সাকিবের রান ছিল ১৭। আর ৭২ ঘন্টা আগে কিম্বার্লিতে করেছেন ২৯।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিবের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি ২০০৮ সালের মার্চে ঢাকার শেরে বাংলায় ৫২ (৯৭ বলে)। দুই বছর আগে ২০১৫ সালের জুলাইতে শেষ তিন ম্যাচের সিরিজে দুই বার ব্যাটিংয়ে নেমে করেছিলেন ৪৮+০*।
আর একবার ব্যাট করতে হয়নি। পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানাচ্ছে ব্যাটসম্যান যে সাকিবকে সবাই চেনেন, জানেন- যার ব্যাটের দ্যুতি মাঠে আলো ছড়ায়, প্রতিপক্ষ বোলারদের নাভিশ্বাস ওঠে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত সেই সাকিবের দেখা মেলেনি।
আগের ম্যাচেও দারুণ শুরু করেছিলেন। আস্থা ও আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে খেলছিলেন নিজের মতই; কিন্তু লেগস্পিনার ইমরান তাহিরের গুগলিতে হঠাৎ ছন্দপতন। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে অফ ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে হাশিম আমলার হাতে ক্যাচ দেয়ার আগের বলেও মনে হয়নি আউট হবেন।
আজ পার্লের বোল্যান্ড পার্ক ওভালে তাই ব্যাটসম্যান সাকিবের কাছ থেকে একটি বড় ইনিংসের আশায় গোটা বাংলাদেশ। শুনলে অবাক হবেন সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর ও মোক্ষম বোলিং অস্ত্র সাকিব বিস্ময়করভাবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও অনুজ্জ্বল। ১১ ম্যাচে তার ঝুলিতে জমা আছে মাত্র ১০ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৩৩ রানে ৩ উইকেট। দেশের মাটি কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায়- দুই জায়গাতেই একই অবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন ম্যাচে ২ উইকেট সেরা ৪৮ রানে ২ উইকেট।
সেই সাকিব আজ শুরতেই এক ওভারে নিলেন ২ উইকেট। ফিরিয়ে দিলেন কুইন্টন ডি কক আর ফ্যাফ ডু প্লেসিসকে। প্রোটিয়াদের মাঠে যার পারফরম্যান্স এত অনুজ্জ্বল। প্রথম ম্যাচে যিনি কোনো সমীহই জাগাতে পারেননি। তিনিই যেন আজ বোল্যান্ড পার্কে আবির্ভূত হলেন সমহিমায়। ঘূর্ণি ফাঁদে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ব্রেক থ্রু।
সারা বছর অন্য দলগুলোর সাথে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও অগ্রণী ভুমিকা রাখেন সাকিব; কিন্তু আগের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে প্রোটিয়াদের সাথে সাকিব বল হাতেও তেমন কার্যকর ছিলেন না। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময় ওয়ানডেতে বোলার সাকিবের দিনকাল বেশ খারাপ।
সর্বশেষ তিন ম্যাচে উইকেটই পাননি। আগের ম্যাচে কিম্বার্লিতে ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে উইকেট শূন্য। তার আগে গত ১৫ জুন বার্মিংহামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের সাথে ৯ ওভারে ৬৪ রানে উইকেট পাননি। আর একই আসরে ৯ জুন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের দিনেও সাকিবের ঝুলি ছিল উইকেটশূন্য (১০-০-৫২-০)।
সাকিব ভক্তরা শুনলে মন খারাপ করবেন, কিন্তু চরম সত্য হলো, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর আগেও তিন তিনবার এমন হয়েছে যে, সাকিব পর পর দিন ম্যাচে উইকেটই পাননি।
প্রথমবার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, ২০০৬ সালের ১৫ আগষ্ট থেকে ১১ অক্টোবর কেনিয়া (নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে ৮-০-২৮-০), শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (৭ অক্টোবর মোহালিতে ২-০-২৩-০), ১১ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (৫-০-১২-০)।
এরপর ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২৭ অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পর পর তিন ম্যাচে কোন উইকেট পাননি সাকিব। যার প্রথম দুটি ম্যাচ ছিল বুলাওয়েতে। আর তিন নম্বর খেলাটি ঢাকার শেরে বাংলায়।
সর্বশেষ এ বছর ২৭ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার সাথে দুটি আর নিউজিল্যান্ডের সাথে টানা তিন ম্যাচে সাকিবের ঝুলিতে একটিও উইকেট জমা পড়েনি।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস