ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

শত প্রতিকূলতার মাঝেও নির্ভীক মুশফিক

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

তাকে কি বলবেন- বীর? সাহসী যোদ্ধা? নাকি প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী? যাই বলা হোক না কেন, সব বিশেষণ ও প্রশংসাসূচক বাক্যই কম বলে গণ্য করা হবে।

আজ কিম্বার্লিতে মুশফিকুর রহীম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কঠোর সাধনা, কঠিন অধ্যবসায়, আন্তরিক চেষ্টা আর ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্প থাকলে ধ্বংস্তুপের মাঝখান থেকেও উঠে দাঁড়ানো সম্ভব।

নানারকম মানসিক চাপ, উৎপীড়ন ও রাজ্যের সমালোচনা সহ্য করেও মাঠে নেমে কিভাবে অননমীয় দৃঢ়তায় ব্যাট করা যায়, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল এবং ধারালো বোলিং শক্তির বিপক্ষে সংগ্রামী সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে সে সত্যই জানান দিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শেষে সব ঝড়-ঝাপটা ছিল তার ওপর। বাংলাদেশ দুই টেস্টের সিরিজে করুণভাবে হেরেছে, তারও পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ দায় বর্তেছিল তার একার কাঁধে। সিদ্ধান্তটা সত্যিই তার একার কি না? তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ আছে যথেষ্ঠই।

তারপরও তিনিই অধিনায়ক। টসও তিনিই করেছেন এবং আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটা তার মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে- ক্রিকেটীয় সংস্কার ও রীতিনীতি মোতাবেক তাই মুশফিকুর রহীমই পরপর দুই টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং না নিয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশের শ্রীহীন ব্যাটিং এবং করুণ পরিনতির পরও মুশফিকুর রহীমের ওই দুই সিদ্ধান্ত নিয়েই কথা হয়েছে বেশি। সমালোচনার তীরটাও ব্যাটসম্যানদের চেয়ে অধিনায়ক মুশফিকের ওপরই নিক্ষিপ্ত হয়েছে বেশি।

সেখানেই শেষ নয়। মুশফিকের কিছু মন্তব্যের প্রকাশ্য সমালোচনায় মুখর হয়ে পড়েন স্বয়ং বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনিও টস জিতে আগে ব্যাটিং না নিয়ে ফিল্ডিং বেছে নেবার জন্য এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কিছু সিদ্ধান্তর কথা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে বলে বসায় মুশফিককেই দোষারোপ করেন।

সব মিলে যারপরনাই চাপে ছিলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক। এরকম চতুর্মখি চাপ ও সমালোচনার মুখে ঠিক থাকা খুব কঠিন। এতে করে স্বাভাবিক পারফরম করাও কঠিন; কিন্তু মুশফিক সে সব ধারণা ভুল প্রমাণ করলেন।

দেখিয়ে দিলেন, তাকে ‘নরম স্বভাবের ও আবেগপ্রবণ’ বলা হলেও মাঠের মুশফিক ভিন্ন। ইস্পাত কঠিন। হাজারো সমালোচনা, তীর্যক কথা-বার্তা আর মানসিক চাপ-উৎপিড়ন, কোনটাই তাকে কাবু করতে পারে না। সব কিছু অতিক্রম করে তিনি মাঠে ভাল খেলতে পারেন।

দলের ব্যাটিংয়ের সব দায়-দায়িত্ব একা কাঁধে নিয়ে দায়িত্ব সচেনতার মূর্ত প্রতীকও হতে পারেন। তার অনুপম দৃষ্ঠান্ত আজকের লড়াকু এবং সংগ্রামী সেঞ্চুরি (১১৬ বলে ১১ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ১১০)। খেলার ফল যাই হোক রোববার কিম্বার্লিতে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় বাংলাদেশের হিরো মুশফিকুর রহীম।

তার একার লড়াইয়েই বাংলাদেশ ২৮০‘র দোরগোড়ায়। এ রকম স্কোর হলে অন্তত একটি বড় আর এক বা একাধিক হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস থাকে; কিন্তু আজ তার কিছুই নেই। কেউ সাহায্য করতে পারেননি।

তৃতীয় উইকেটে সাকিব (২৯) আর চতুর্থ উইকেটে, মাহমুদউল্লাহ (২৬) একটু সঙ্গ দিয়ে ফেরার পর মুশফিক একদিক আগলে রাখার কাজে মনোযোগ দেন। পাশাপাশি রানের চাকা সচল রাখার কাজও করেন। শেষ দিকে সাব্বির (১৯) আর নাসির (১১) হাত খুলে খেলতে পারলে হয়ত রান ৩০০-এ গিয়ে ঠেকতো।

তা না হয়নি তাতে কি? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের স্কোর তো হয়েছে। তার রূপকারতো মুশফিকই। এখানেই শেষ নয়। আরও কৃতিত্ব আছে। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল না।

আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার ট্র্যাক রেকর্ডও ছিল আরও খারাপ। ১৭৬ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি চার সেঞ্চুরি আর ২৬ হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে কখনোই পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি মুশফিক।

প্রোটিয়াদের সাথে আগের সাত ম্যাচে পাঁচবার ব্যাটিং করা মুশফিকের মোট সংগ্রহই ছিল- (৬+১+২+৩+২৪) = ৩৬। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে কখনো ভাল খেলতে না পারা মুশফিক গত ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজেও (ওই সিরিজ বাংলাদেশ ২-১‘এ জিতেছিল) মুশফিকের ব্যাট কথা বলেনি। তার স্কোর ছিল ৩+২৪। বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জিতে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে ব্যাট পাননি।

সত্যিই অদম্য মনোবল মুশফিকের। এ বছরের শুরুটা ছিল বেশ খারাপ। ২০১৬ সাল শেষ করেছিলেন ৪২ রানের হার না মানা ইনিংসে (২৬ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে করেছিলেন)। এ বছরের শুরুটা ভাল হয়নি একদমই।

২০১৭ সালের ২৫ মার্চ ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আউট হয়েছিলেন মাত্র ১ রানে। এরপর ২৮ মার্চ ডাম্বুলায় পরের ম্যাচ বৃষ্টিতে পন্ড। একই সিরিজে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সাথে শূন্য রানে আউট। তারপর থেকেই অন্য মুশফিক।

শেষ ১০ ইনিংসে ০+১৩+৫৫+৩*+৪৫*+৮৯+৯+১৪+৬১+১১০ = ৩৯৯ রান। ম্যাচের হিসেবে ২১টি (২০ ইনিংস, এক ম্যাচ পরিত্যক্ত, তাতে ব্যাট পাননি) পর আবার শতরান। আর দিনক্ষণের হিসেবে ২৩ মাস পরে আবার তিন অংকে মুশফিক।

শেষ সেঞ্চুরি ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৯ বলে ১০৭; ৯৮.১৬ স্ট্রাইকরেটে। আজকের ম্যাচে আবারো প্রমাণ হলো শত প্রতিকুলতায়ও নির্ভীক যোদ্ধা মুশফিক। দলের প্রয়োজনেও তার ব্যাটই বিশ্বস্ত। তাই তো তিনিই নির্ভরতার প্রতীক। এমন মুশফিককেই চায় বাংলাদেশ।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন