তবুও আলোচনায় থাকছে সৌম্য’র নাম!
‘সৌম্য খারাপ ব্যাটসম্যান, ব্যাটিং পারেন না, টেকনিক ভালো না, শট খেলার সামর্থ্য নেই’- অতিবড় সমালোচকও তা বলেন না।
আসলে সৌম্য সরকারের ব্যাটিং মেধা, প্রজ্ঞা ও সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। বরং সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, সৌম্য সরকার একজন ড্যাশিং ব্যাটসম্যানের প্রতিমূর্তি। যার আছে ফ্রি স্ট্রোক খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য।
নিজের দিনে বিশ্বের যে কোন বোলিং শক্তিকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার সামর্থ্যও আছে এ বাঁ-হাতি টপ অর্ডারের; কিন্তু বাস্তবতা হলো তার সাম্প্রতিক সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে যাই বলা হোক না কেন, কোন ফরম্যাটেই রান নেই সৌম্যর ব্যাটে।
একদিনের ক্রিকেটে শেষ পাঁচ ইনিংসে (০+২৮+৩+৩+০) = ৩৪, কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ রান ৩৪। শেষ কবে বড় ইনিংস খেলেছেন সৌম্য? পরিসংখ্যান খুঁজেই বের করা দায়।
এ বছর মে মাসের ১৯ তারিখে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত তিনজাতি সিরিজে আইরিশদের বিরুদ্ধে ৮৭ (১২৭.৯৪ স্ট্রাইক রেটে, ৬৮ বলে ১১ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায়)। ওই ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরও একবার (৯১.০৪ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৬৭ বলে ৬১) পঞ্চাশের ঘরে পা রেখেছিলেন। এরপর পাঁচ ইনিংসের অবস্থা খুবই করুণ।
সৌম্য সরকারের খারাপ পরিসংখ্যান এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। আসলে- ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর থেকেই সময়টা ভাল যাচ্ছে না সৌম্যর।
শেষ ১৫ ম্যাচের যে ১৪ ইনিংসে (শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এ বছর মার্চে একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে অর্ধেক হবার পর পন্ড) সৌম্য আর সেভাবে নিজেকে খুঁজে পাননি। এই ১৪ ইনিংসে (০+২০+১১+১+১০+৩৮+৫+৬১+৮৭*+০+২৮+৩+৩+০) একজোড়া হাফ সেঞ্চুরি আছে। সেটা চার মাস আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে।
এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়েও নিজেকে ফিরে পাননি এ ড্যাশিং ওপেনার। একটি মাত্র টেস্টে তার ব্যাট কথা বলেনি। দু’ইনিংসে (৯+৩) রান মাত্র ১২। ওয়ানডে সিরিজের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রিত একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও রান নেই। আউট হয়ে গেছেন ৩ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার আগে সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসেও (৩৩+৯+৮+১৫) সুবিধা করতে পারেননি। সে কারণে আর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয়নি।
তারও আগে গত জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সৌম্যর করুন দশা; সাকুল্যে রান (০+৩+৩+২৮+২) = ৩৬। পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে সৌম্যর ফর্ম ভাল নেই।
অফ ফর্মে থাকলে যা হয়, তাই হয়েছে। আত্মবিশ্বাস ও আস্থা গেছে কমে। নিজের সামর্থ্যরে ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। বলের পিছনে শরীর ও পা কিছুই যাচ্ছে না। জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলছেন আর বেশিরভাগ সময় উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে এসেছেন। একদম খাপছাড়া ব্যাটিং। দেখতে খুব খারাপ লেগেছে।
তবে এটাও সত্য, এখন দুঃসময়ে সৌম্যর ব্যাটিং যত শ্রী-হীন মনে হচ্ছে আসলে তার ব্যাটিং শৈলি মোটেই খারাপ নয়। খারাপ হলে কি আর এই দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ ফাস্ট বোলারদের বলের সুতো খুলে চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজানোর পাশাপাশি রানের নহর বইয়ে দিতে পারতেন?
মনে আছে নিশ্চয়, দুই বছর আগে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে কি দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না করেছিলেন। ওই সিরিজে সৌম্যর ব্যাট যেন ছিল খোলা তরবারি। ফ্রি স্ট্রোক প্লে‘র অনুপম প্রদর্শনীতে প্রোটিয়া বোলারদের স্বচ্ছন্দে ও অনায়াসে খেলে দুই ম্যাচের সেরা পারফরমারের পাশাপাশি ম্যান অব দ্য সিরিজও হয়েছিলেন সৌম্য সরকার।
তিন ম্যাচে দুটি বিগ ফিপটিসহ তার স্কোর ছিল (২৭+৮৮*+৯০) = ২০৫ রান। ২০১৫ সালের জুলাইতে বৃষ্টিবিঘ্নিত ও ৪০ ওভারের কর্তিত প্রথম খেলায় মাত্র ১৬০ রানে প্রোটিয়াদের গুঁড়িয়ে গিয়ে ৮ উইকেটে হার মানা বাংলাদেশ সিরিজে ফিরেছিল সৌম্যর চওড়া ব্যাটে করেই।
ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে তার ৭৯ বলে ৮৮ রানের (১৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কা), হার না মানা ইনিংসের ওপর ভর করে অনায়াসে খেলার ১৩৪ বল আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৬২ রানের মামুলি স্কোর টপকে ৭ উইকেটের সহজ জয় পায় মাশরাফির দল।
সেই খেলায় কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান (৩/৩৮), অফস্পিনার নাসির (৩/২৬) ও পেসার রুবেলও (২/৩৪) বল হাতে দারুণ কার্যকর অবদান রেখেছিলেন। উইকেট না পেলেও সাকিব খুবই নিয়ন্ত্রিত ও সমীহ জাগানো বোলিং করেছিলেন। তার ১০ ওভারের কোটায় ওঠে মাত্র ৩০ রান।
শেষ ম্যাচেও জ্বলে ওঠে সৌম্যর ব্যাট। এবার বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ৪০ ওভারে ১৬৯ রান। সৌম্যর ৭৫ বলে ১৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংসে বাংলাদেশের সম্ভাব্য জয় আরও সহজ হয়ে যায়।
মাশরাফির দল ম্যাচ জেতে ৯ উইকেটে। নির্ধারিত ৪০ ওভারের ম্যাচের ৮৩ বল আগেই জয় তুলে নেয়। তামিম ৬১ রানে নট আউট থাকেন। পরপর দুই ম্যাচে জয়ের নায়ক ও ম্যাচ সেরা হন তিনি। সে সঙ্গে সিরিজ সেরা পারফরমারের পুরস্কার ওঠে সৌম্যর হাতে।
ব্যাট কথা বলছে না। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে প্রায় তলানিতে। তারপরও যেহেতু প্রোটিয়াদের সাথে শেষ ওয়ানডে সিরিজে সৌম্যর ব্যাটে ছিল বারুদ। তাই তো নির্বাচক, কোচ ও অধিনায়ক দ্বীধায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হীরার শহর কিম্বার্লিতে আগামীকাল তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় মাঠে নামার আগেও দল সাজাতে গিয়ে বারবার সৌম্যর কথাই ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
ওয়ানডেতে এক নজরে সৌম্য সরকার
ম্যাচ : ৩১টি
ইনিংস : ৩০
রান : ৯৫৯
হাফ সেঞ্চুরি : ৬টি
সেঞ্চুরি : ১টি
শূন্য : ৩ বার
স্ট্রাইকরেট : ৯৭.০৬
গড় : ৩৫.৫১
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম