আলোচনার কেন্দ্রে বাজে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মুশফিকও
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টাইগারদের করুণ পরিণতি। দু প্লেসিসের প্রোটিয়া বাহিনীর কাছে যাচ্ছেতাই ভাবে হারতে হলো মুশফিক বাহিনীকে। পচেফস্ট্রমে প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানের লজ্জাজনক পরাজয়।
এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও দুই টেস্টের সিরিজে নাস্তানাবুদ হয়েছিল টাইগাররা। তবে এতটা করুণ ও লজ্জাজনকভাবে হারেনি।
ইতিহাস জানাচ্ছে ২০১৭ সালের জানুয়ারী নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই টেস্টেও সিরিজে যথাক্রমে ৭ ও ৯ উইকেটে হেরে এসেছে মুশফিক বাহিনী; কিন্তু ব্যক্তিগত ও দলগত পারফরমেন্স এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল নিউজিল্যান্ড সিরিজ।
ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ১৫৯ রানের একজোড়া দুর্দান্ত ইনিংসের ওপর ভর করে ৫৯৫ রানের বড়-সড় স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ।
পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ২৮৯ রান করেছিলেন তামিম, সৌম্য, সাকিব ও মুশফিকরা; কিন্তু এবার দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে কেমন যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল।
পচেফস্ট্রমে প্রথম ইনিংস ৩২০ রান করাই শেষ। তারপর আর দুুশোর ঘরে পৌছানোও সম্ভব হয়নি। যথাক্রমে ৯০, ১৪৭ আর ১৭২-এ অলআউট। হোক তা দেশের ও উপমহাদেশের বাইরে, ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে গত দুই বছর টেস্টে বাংলাদেশের এত খারাপ পারফমেন্স আর হয়নি।
৯ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলতে গিয়ে টেস্টে টাইগারদের এই ‘ছেড়ে দে মা কেঁধে বাঁচি’- অবস্থা দেখে ভক্ত ও সমর্থকরা চরম হতাশ। হতাশ হবারই কথা ২১ টেস্ট পর আবার ইনিংস পরাজয়ের লজ্জাও এসে গ্রাস করলো।
দলের পারফরমেন্স খারাপ। সিরিজে তুলোধুনো বা চরম নাজেহাল অবস্থা। তার সাথে যোগ হয়েছে আরও কিছু বিষয়। অধিনায়কের পর পর দুই টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয়ার বিষয়টি দারুনভাবে সমালোচিত হয়েছে। হচ্ছেও। এর সাথে তার দল পরিচালনা, বোলার ব্যবহার ও ফিল্ডিং পজিশন ঠিক করা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এর মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজ দলের বোলারদের পারফরমেন্সে চরম হতাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি নেতিবাচক কথা বার্তা বলে আরও বিতর্কিত বাংলাদেশ অধিনায়ক।
পাশাপাশি আরও একটা মতও কিন্তু আছে। কারো কারো ধারণা, শুধু মুশফিককে একা দোষ দিয়ে লাভ নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট কি করছে? কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও কোচিংয়ের পাশাপাশি দল নির্বাচন এবং অধিনায়কের কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন- এমন অভিযোগও আছে।
মুশফিক নিজে প্রেস মিটে জানিয়েছেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাকে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি না দাঁড়িয়ে থার্ডম্যান কিংবা ফাইন লেগে ফিল্ডিং করতে বলা হয়েছে।’
যদি তাই বলা হয়ে থাকে, তাহলে দল পরিচালনা করবেন কে? অধিনায়ক থার্ডম্যানে দাঁড়িয়ে বোলারের সাথে কি শলা পরামর্শ করবেন? পৃথিবীর কোন দেশে এমন নজির নেই যে, টেস্টে ক্যাপ্টেন স্লিপ, কভার, মিড অফ, মিড অনের বাইরে সীমানার ধারে ফিল্ডিং করেন।
ধারণা করা হচ্ছে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেই এমন কথা বলেছেন। তাই যদি হয়, তার মানে মুশফিককে ‘পুতুল অধিনায়ক’ রেখে তিনিই তাহলে দল পরিচালনা করতে চেয়েছেন বা করছেন।
জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক ও দেশের ক্রিকেটের পরীক্ষিত বিশেষজ্ঞ গাজী আশরাফ হোসেন লিপু আর ফারুক আহমেদ পুরো বিষয়টার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে মান-সম্মান নিয়ে এখনও মুশফিককে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। আর সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ মনে করেন, ভেবে-চিন্তেই নেয়া হবে উত্তম।
মোট কথা, সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চরম বাজে ব্যাটিং আর মুশফিক ইস্যু, দুই’ই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম