২১ টেস্ট পর ইনিংস পরাজয়ের স্বাদ
একটা সময় নিয়মিতই ছিল ইনিংস পরাজয়ের দৃশ্য। বাংলাদেশ যেন তখন মেনেই নিয়েছিল, ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের অমোঘ নিয়তি। বড় শক্তিগুলোর বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামলে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় এড়ানোই তখন থাকতো সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
আগে মাঝে-মধ্যে, কদাচিত টেস্ট জয়ের দেখা পেতো বাংলাদেশ। ড্রকেও মনে করতো জয়ের সমান। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে। ওয়ানডের মত টেস্টেও নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মত দলকেও হারাচ্ছে এখন। কোনো টেস্টে জিততে না পারলে অন্তত কঠিন লড়াই করে হারছে, কিংবা ড্র করছে।
অর্থ্যাৎ, ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের যুগ শেষ করে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটেও এগিয়ে এসেছে এখন অনেক দুর। দলীয় সাফল্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও বিশ্বের যে কোনো সেরা সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ কবে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে, সেটাই যেন ভুলে গিয়েছে তারা।
এমনই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় হঠাৎই ছন্দপতন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রথম টেস্টে ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারলেও হারতে হয়েছিল ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টে পরিস্থিতি আরও করুন। বাংলাদেশকে হারতে হলো এক ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার বাংলাদেশের।
ব্লুমফন্টেইনের মাঙ্গুয়াঙ্গ ওভালে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের পরই পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়। বাংলাদেশ সর্বশেষ কবে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় বরণ করেছিল, সেই পরিসংখ্যানই বের করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে সবাই।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরের প্রথম টেস্টেই মুশফিকুর রহীমের দল হেরেছিল ইনিংস ও ২৪৮ রানের ব্যবধানে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তুলতে পেরেছিল ২৩২ রান। শ্রীলঙ্কা মাহেলা জয়াবর্ধনের ডাবল সেঞ্চুরি, কুশল সিলভা আর ভিথানাগের সেঞ্চুরির সুবাধে ৬ উইকেটে ৭৩০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে লঙ্কানরা। জবাবে ২৫০ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টেই দারুণ খেলে ড্র করে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের প্রথম টেস্টে যে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল, এরপর আর হারেনি তারা। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের পর বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওই সিরিজের ২ টেস্টেই হেরেছিল টাইগাররা। একটিতে ১০ উইকেট এবং অন্যটিতে ২৯৬ রানের ব্যবধানে। ইনিংস পরাজয় ছিল না এখানে।
পরের সিরিজটি ঘরের মাঠে ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওই সিরিজের ৩ ম্যাচেই হারিয়ে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দেয় বাংলাদেশ দল। এরপর ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে দারুণ খেলে ড্র। দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে।
ঘরের মাঠে এরপরই ১ ম্যাচের সিরিজটি বৃষ্টির কারণে শেষই হতে পারেনি। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজও শেষ হয়নি বৃষ্টির কারণে। প্রায় এক বছর বিরতি দিয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজ। প্রথমটাতে জিততে জিততে ২২ রানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের টেস্টেই পেয়েছিল ঐতিহাসিক জয়। সিরিজ হয়েছিল ড্র।
গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে দুই টেস্টেই হেরেছিল বাংলাদেশ। একটাতে ৭ উইকেট এবং অন্যটাতে ৯ উইকেটের ব্যবধানে। তবে ইনিংস পরাজয় ছিল না। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ভারতে প্রথমবারেরমত টেস্ট ম্যাচ। ১ ম্যাচের সিরিজে হারলেও সেটা খুব বেশি বড় ব্যবধানে ছিল না। শ্রীলঙ্কায় গল টেস্টে ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর কলম্বোয় নিজেদের শততম টেস্টে ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ২০ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে হারলো ৭ উইকেটে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পচেফস্ট্রমে পরাজয় ৩৩৩ রানের ব্যবধানে। অথ্যাৎ ২১ টেস্ট এবং ১০ সিরিজ পর আরও একটা ইনিংস পরাজয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ।
আইএইচএস/জেআইএম