টস জিতেও বার বার কেন একই ভুল?
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস টসের সময়ই বললেন, ‘এ ধরনের উইকেটে ১০বারের মধ্যে ৯ বারই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি। এটা খুবই নরমাল একটা উইকেট।’
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কমেন্টেটর লিখলেন, ‘মুশফিককে বলবো, আপনি যদি উইকেট চিনতে না পারেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয় টসে হারা। তাহলে অন্তত ভুল সিদ্ধান্তের অভিযোগে পুড়তে হবে না আপনাকে।’
ভুল যে মুশফিক আবারও করলেন সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার এইডেন মার্করাম এবং ডিন এলগার। পচেফস্ট্রম টেস্টে দু’জন ১৯৬ রানে বিচ্ছিন্ন হলেও, এবার জুটির ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেই ছাড়লেন তারা। বিচ্ছিন্ন হলেন গিয়ে ২৪৩ রানে। দু’জনই পেলেন জোড়া সেঞ্চুরি। এলগার আউট হলেন ১১৩ রান করে।
ব্লুমফন্টেইনের মাঙ্গুয়াঙ্গ ওভালের উইকেট কেমন হবে, তা কী সত্যি সত্যি আগে থেকে মোটেও আঁচ করতে পারেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম? পচেফস্ট্রম টেস্টের মতই আবারও ভুলটা করে বসলেন? টসের পরপরই তো যে তিনি ভুল করলেন, সেটা পরোক্ষভাবে বলে দিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস, ‘১০ বারের মধ্যে ৯ বারই আপনি ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন।’
একই ভুলটা হয়েছিল পচেফস্ট্রম টেস্টেও। টস হেরে যাওয়ার পরও প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন পেয়ে তো দারুণ অবাক হয়েছিলেন ডু প্লেসিস। তখন বিষয়টাকে একটু স্বাভাবিকভাবে নিলেও, ব্লুমফন্টেইন টেস্টে টসের পর মুশফিকের আবারও একই সিদ্ধান্ত দেখে মনে মনে হয়তো ডু প্লেসিস হাসছিলেন, উইকেট চেনে না, এ কার বিরুদ্ধে খেলতে নামছি আমরা?
মুশফিকের ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন যাবত খেলছেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্বও দিয়ে যাচ্ছেন। সাফল্যের পাল্লাটাও তার অন্যদের তুলনায় বেশ ভারি। এ কারণে দলের মধ্যে তাকে অন্যতম বিচক্ষণ ক্রিকেটার হিসেবেও পরিগণিত করা হয়।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অন্তত টস জিতে এমন দুটি সিদ্ধান্ত তিনি নিলেন, তাতে মুশফিকের ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। আগের ম্যাচেও তিনি উইকেট চিনতে ভুল করেছিলেন। পচেফস্ট্রম টেস্টের পর তিনি নিজেই স্বীকার করলেন, ‘উইকেট চিনতে পারেননি।’
ব্লুমফন্টেইনে তো আরও বেশি সতর্ক থাকার কথা তার। দু’দিন আগে এখানে এসে অনুশীলন করেছেন। উইকেট দেখেছেন। আজ সকালেও টসের আগে উইকেট দেখেছেন মুশফিক; কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার সিদ্ধান্তের কথা শুনে সবারই ভিমরি খাওয়ার জোগাড়।
কারণ, উইকেট তো পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব। ঘাস হালকা কিছু ছিল। তবে সেগুলো মরা ঘাস। প্রথম এক সেশনের বোলিংয়ের পরই সেখানে আর বোলারদের বল ভালো হওয়ার কথা নয়। এমন উইকেটে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত তো বোকা ছাড়া আর কারও নেয়ার কথা নয়।
প্রথম টেস্টের পর উইকেট চিনতে পারেননি- ভুল স্বীকার করলেও সেবার হারের দায়ী করেছিলেন মূলতঃ বোলারদেরই। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পাওয়ার কারণে বোলারদের ধুয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে হুমকি দেন, বোলার পরিবর্তনের। দ্বিতীয় টেস্টে ঠিকই পরিবর্তন করলেন। তামিম এমনিতেই নেই। তার পরিবর্তে আসলেন সৌম্য সরকার। বোলার তাসকিন, শফিউল আর মিরাজকে বাদ দিয়ে নিলেন রুবেল, শুভাশিস রায়কে।
কিন্তু ফল যথা পুর্বং, তথা পরং। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর আরও বেশি চড়াও হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার। বার বার বোলার পরিবর্তন করেও কোনে লাভ হলো না। মোট সাতজন বোলার ব্যবহার করেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত শুভাশিস রায় একটি সাফল্যের দেখা পেলেন। ২৪৩ রানের জুটি ভেঙে তিনি সাজঘরে ফেরালেন ডিন এলগারকে। বাকি ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করাম দ্বিতীয় টেস্টেই তুলে নিলেন মেইডেন সেঞ্চুরি। এ রিপোর্ট লেখার সময় তার রান ১৩৫। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১ উইকেট হারিয়ে ২৫৬।
আইএইচএস/জেআইএম