ব্লুমফন্টেইনে কি ‘গল’ ফিরে আসবে?
ব্লুমফন্টেইন টেস্টের আগে বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের একটাই প্রশ্ন- ‘আচ্ছা দুই চালিকাশক্তি তামিম ও সাকিব ছাড়া কি আদৌ টেস্ট খেলতে পারবে বাংলাদেশ? কিংবা এদের ছাড়া টেস্টে শেষ কবে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা?’
ইতিহাস জানাচ্ছে, সাকিব ও তামিম ছাড়া বাংলাদেশ শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিল চার বছর আগে ২০১৩ সালের মার্চ (৮-১২ মার্চ) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু পরিসংখ্যানের কারণেই অমন প্রশ্ন উঠছে না। বাংলাদেশ ভক্তদের মাথায় এমনি এমনি এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে না। এ প্রশ্ন উঠছে আসলে তামিম ও সাকিবের মত দু দু’জন সেরা ও অতি নির্ভরযোগ্য পারফরমার একসঙ্গে না থাকায়।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দলে জায়গা মজবুত হবার পর সময়ের প্রবাহমানতায় নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা তামিম আর সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ তিন ফরম্যাট মিলে মাত্র ১১টি ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে টেস্ট মোটে তিনটি। আর ওয়ানডে ছয়টি। টি-টোয়েন্টি দুুটি।
যারা রেকর্ড ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তথ্য-পরিসংখ্যান যাদের নখদর্পনে; তাদের কথা বাদ। বাকিরা নিশ্চয়ই ভাবছেন, তামিম আর সাকিব ছাড়া বুঝি তিন টেস্টেই ভরাডুবি ঘটেছিল বাংলাদেশের! বিস্ময়কর হলেও সত্য, আসলে তা নয়।
তামিম ও সাকিব এর আগে যে তিনটি মাত্র টেস্ট একসঙ্গে খেলতে পারেননি, তার দুটিতে হারলেও একটি টেস্টে দারুণ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই টেস্টের স্মৃতি এখনো সবার মনে উজ্জ্বল; কিন্তু সময়ের ফেরে হয়ত অনেকেরই মনে নেই। সেই সুখ স্মৃতির টেস্টে ছিলেন না তামিম-সাকিবের মত সেরা পারফরমারদের কেউ।
ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি বলে ফেলাই উত্তম। ২০১৩ সালের মার্চে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ম্যাচে মুশফিকুর রহীম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন, মোহাম্মদ আশরাফুল যে টেস্টে ১৯০ রানে গিয়ে আউট হয়েছেন- সেই টেস্টে বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল দুই স্তম্ভ তামিম ও সাকিবকে ছাড়াই।
২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের সাথে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজে ড্র দিয়ে শুরুর টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানো। বন্দর নগরীর চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট বীরের মত লড়াই করে ড্র। যার স্কোরলাইন ছিল- বাংলাদেশ : ৫০১/১০, (মুমিনুল ১৮১, সোহাগ গাজী ১০১, মুশফিক ৬৭), ২য় ইনিংসে ১৭৩/৩, (সাকিব ৫০, তামিম ৪৬)। নিউজল্যান্ড ৪৬৯ ও ২৮৭/৭।
পরের ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ড্র। বৃষ্টিতে ম্যাচের এক ইনিংস হয়ইনি। তারপরও শ্রীলঙ্কা গিয়ে বুক চিতিয়ে লড়ে লঙ্কানদের সাথে তাদের মটিতে ড্র করলো মুশফিক বাহিনী। সে টেস্টে ছিলেন না তামিম। এ বাঁ-হাতি ওপেনারের বদলে খেললেন জহুরুল ইসলাম অমি।
প্রথম ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করলো ৬৩৮ রান। যার ৬০ ভাগ রান এসেছিল অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম (২০০) আর তখনকার ‘আশারফুল’ মোহাম্মদ আশরাফুলের (১৯০) ব্যাট থেকে। এছাড়া নাসির হোসেনও দারুন খেলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন (১০০)। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা মুমিনুলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৫ রান।
যদিও দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় (১৩) আর জহুরুল ইসলাম অমি (২০) আউট হয়ে গিয়েছিলেন অল্প রানেই। তাতে কী, মুশফিক আর আশরাফুলের ২৬৭ রানের বড় পার্টনারশিপে গড়ে উঠেছিল ৬৩৮ রানের পাহাড় সমান স্কোর। বলার অপেক্ষা রাখে না, টেস্টে সেটাই বাংলাদেশের এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলগত স্কোর।
তার আগে ও পরে কখনই বাংলাদেশ অত রান করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, টেস্টে ওই একবারই শুধু ৬০০ বা তার বেশি রান করার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। সেটাই শেষ কথা নয়। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা মেলে ২০১৩ সালের মার্চে গলে, লঙ্কানদের বিপক্ষে ওই টেস্টেই।
এত সাফল্যের রেনু মাখানো যে ম্যাচ, তাতে কি আর হার গ্রাস করতে পারে? না পারে না। পারেওনি। ওই প্রথম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য, মেধা ও প্রজ্ঞার ওপর ভর করে বীরের মত ড্র করে মাঠে ছাড়ে মুশফিকের দল।
তার মানে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। বরং আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। চার বছর আগে গলে কুমারা সাঙ্গাকারার শ্রীলঙ্কার সাথে তামিম ও সাকিব ছাড়া খেলতে নেমে যদি তেমন রানের পাহাড় গড়ে ড্র করা যায়, তাহলে ব্লুমফন্টেইনে কেন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠতে হবে!
আগে যখন একবার ভাল খেলার রেকর্ড আছে, আরেকবার সে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানো কি খুব অসম্ভব? দরকার সেই আত্ববিশ্বাস আর নিজের সামর্থ্যরে ওপর অমন আস্থা। তামিম ও সাকিব ছাড়া খেলতে নামা মুশফিক বাহিনীর সে আত্ববিশ্বাস ও আস্থাই দরকার।
কে জানে তা নিয়ে খেলতে পারলে, তাতে ব্লুমফন্টেইনে ‘গল’ ফিরে আসলে আসতেও পারে।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর