ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

তামিম-সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ, যেন সুর ছাড়া গান!

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৭

হোক তা ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট, তিন ফরম্যাটেই তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের প্রাণশক্তি। এ দুইজন ছাড়া বাংলাদেশ যেন সুর ছাড়া গান!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাটতে হাটতে পড়ে যাওয়া থেকে এখন দৌড়াতে শেখা বাংলাদেশের দুই মূল চালিকাশক্তি তামিম ও সাকিব। গত তিন-চার বছর যদি হয় টেস্টে বাংলাদেশের ওপরে ওঠার সেরা সময় ধরা হয়, তাহলে বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম আর অলরাউন্ডার সাকিব সেই ওপরে ওঠার সিঁড়ি।

এমন নয়, তামিম ও সাকিব বাংলাদেশের পঞ্চ পান্ডবের দুই পাণ্ডব তাই এমনটা বলা। পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, সাকিব-তামিম আসলেই বাংলাদেশের শক্তির প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশের সাফল্য ও ব্যর্থতা তাদের ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে।

তিন ফরম্যাটেই তামিম এখন দেশের অন্যতম সফল ও এক নম্বর ব্যাটসম্যান। টেস্টে সবচেয়ে বেশি ৩৮৮৬ রান এ বাঁ-হাতি ওপেনারের। একই ভাবে ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭৪৩ রান তামিমের। আর এই দুই ফরম্যাটেই সাকিব দ্বিতীয় টপ স্কোরার। টেস্টে রান ৩৫৯৪, ওয়ানডেতে ৪৯৮৩।

শুধু টি-টোয়েন্টিতে সাকিব (১২০৮) রান তোলায় এক নম্বর । সেখানে ১২০২ রান করে তামিম দুই নম্বরে। একই ভাবে ওয়ানডে ছাড়া টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটে সাকিব সর্বাধীক উইকেট শিকারী। ৫১ টেস্টে ১৮৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বাধীক উইকেট শিকারী এ বাঁ-হাতি স্পিনার। আর ওয়ানডেতে মাশরাফির (১৭৭ ম্যাচে ২৩১) পর দ্বিতীয় সর্বাধীক ২২৪ উইকেট শিকারী সাকিব। টি-টোয়েন্টিতে ৫৯ ম্যাচে ৭০ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

তিন ফরম্যাটে শুধু রান ও উইকেট শিকারে সবার ওপরে থাকাই নয়, টেস্টে বাংলাদেশ নিকট অতীতে যতগুলো ম্যাচ জিতেছে তার অন্যতম যৌথ রূপকারও তামিম-সাকিব। খুব বেশি দূর পেছনে ফিরে দেখার দরকার নেই। গত এক বছরে বাংলাদেশ যে তিনটি বড় দলের সঙ্গে টেস্ট জিতেছে, সেই ম্যাচগুলোর স্কোরকার্ড খুঁটিয়ে দেখলেই বেড়িয়ে আসবে তামিম ও সাকিব টেস্টে বাংলাদেশের জন্য কত দরকারই ক্রিকেটার।

গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডের সঙ্গে চট্টগ্রামে অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে তরুণ ও স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত বোলিং (ম্যাচে ১২ উইকেট) করে ম্যাচ সেরা হলেও মুশফিক বাহিনীর সাফল্যের অন্যতম যৌথ রূপকার তামিম ও সাকিব। বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবাল (১০৪) প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে দলকে একটা লড়িয়ে পুঁজি গড়ার পেছনে রাখেন অগ্রণী ভূমিকা। পরের ইনিংসেও তার ব্যাট থেকে বেড়িয়ে এসেছিল ৪০ রান।

আর অলরাউন্ডার সাকিব প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। ইংলিশদের দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট ৪৯ রানে ৪ উইকেট দখল করে বাঁ-হাতি সাকিব জয়ের পেছনে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

একই দৃশ্য চোখে পড়েছে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শতমতম টেস্টেও। কলম্বো পি সারা স্টেডিয়ামেও জয়ের অন্যতম নায়ক তামিম ইকবাল (৪৯ ও ৮২) তামিম ও সাকিব। দারুণ এক শতরান করার পাশাপাশি অনবদ্য অলরাউন্ডিং নৈপুন্যে (১১৬ ও ১৫, ২/৮০, ৪/৭৪)। শুধু জয়ের নায়কই নন। ম্যাচ সেরাও হন সাকিব।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মাস খানেক আগে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ২০ রানের ঐতিহাসিক জয়ের স্থপতিও তামিম (৭১ ও ৭৮) ও সাকিব (৮৪ ও ৫, বল হাতে ৫/৬৮ ৫/৮৫)।

সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ সিরিজে বিশ্রামে। প্রথম টেস্ট খেলা তামিম ইনজুরির কারণে নেই ব্লুমফন্টেইনে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে। আগের চেয়ে ব্যক্তি নির্ভরতা খানিক কমলেও এখনো তামিম ও সাকিবের বিকল্প নেই। এমন একজন পারফরমারও নেই যারা তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেন। এমন দুইজন অতি কার্যকর ও মূল চালিকাশক্তি ছাড়া খেলতে নেমে কি করবে বাংলাদেশ?
একেতো পচেফোস্ট্রমের শেষ ইনিংসে ৯০ রানে অলআউটের লজ্জা কাটার মত বিধছে, তারওপর এমন দুজন নির্ভরযোগ্য ও অপরিহার্য সদস্য নেই।

কি হবে? ব্লুমফন্টেইনের তুলনামুলক ফাস্ট ও বাউন্সই পিচে তামিমের আত্ববিশ্বাসী আর সাকিবের ড্যাশিং উইলোবাজি বড় দরকার ছিল। এইতো এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট আর বাউন্সি ট্র্যাকে টিম সাউদি আর ট্রেন্ট বোল্টের প্রবল বোলিং তোড়ের মুখেও দারুণ ডাবল সেঞ্চুরি হাকিয়ে সাকিব প্রমাণ করেছেন, বোলিং ট্রাম্পকার্ড হওয়া ছাড়াও তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবেও আস্থার প্রতীক হতে পারেন।

আর তামিম ইকবালের কথা নতুন করে বলার কি আছে? টেস্টে বাংলাদেশের তিন ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের একজন এ চট্টগ্রামের ওপেনার। সর্বাধীক আট সেঞ্চুরিরও মালিক। বিশ্বের যে কোন বোলিং শক্তির বিপক্ষে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজে এ মুহূর্তে যার বিকল্প নেই বাংলাদেশে।

আর যে কোন উইকেটে সাকিবের স্পিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং অস্ত্র। এমন দুইজন অতি নির্ভরযোগ্য পারফরমার ছাড়া কেমন করবে মুশফিকের দল? অতিবড় বাংলাদেশ ভক্তও চিন্তিত। উদ্যোগ- উৎকণ্ঠায় সমর্থকরা।

এআরবি/এমআর/পিআর

আরও পড়ুন