দক্ষিণ আফ্রিকায়ও ভালো সুযোগ দেখছেন মুশফিক
বছর তিনেক আগেও বলা হতো, ওয়ানডে দল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেও টেস্টে বাংলাদেশ এখনো দুর্বল দল; কিন্তু এখন আর কেউ তা বলেন না। কি করে বলবে? গত এক বছর যে বাংলাদেশ টেস্টেও উন্নতি করেছে বেশ! অতিবড় সমালোচকও মানছেন, এখন টেস্টেও দিনকে দিন উন্নতি করছে টাইগাররা। সিরিজ জেতা সম্ভব না হলেও গত এক বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে ইংলিশ ও অসিদের একবার করে হারিয়ে সিরিজ অমিমাংসিতভাবে শেষ করেছে। আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের সাথেও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১‘এ ড্র করেছে মুশফিকুর রহীমের দল; কিন্তু সেই দল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে দুই টেস্টের সিরিজের দুটিতেই হেরেছিল।
এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েও কি তাই হবে? নিজ দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মত টেস্ট র্যাংকিংয়ের ওপরের দিকের দলের সাথে সমানতালে লড়া আর লঙ্কানদের মাটিতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ ড্র করা বাংলাদেশ কি এশিয়ার বাইরে গিয়ে আবার নিউজিল্যান্ড সফরের মত সিরিজ হারের বেদনায় নীল হবে?
ইতিহাস জানাচ্ছে, বাংলাদেশ শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছে ২০০৮ সালের নভেম্বরে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে প্রায় নয় বছর পর আবার প্রোটিয়াদের সাথে তাদের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যাচ্ছে টাইগাররা।
মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে যে দলটি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গেছে, তার ৮০ ভাগের বেশি ক্রিকেটার এবারই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন। অধিনায়ক মুশফিক ছাড়া দলের আর মাত্র তিনজন ক্রিকেটার- তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস আর মাহমুদউল্লাহই শুধু প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে টেস্ট খেলেছেন।
বাকি ১১ জন সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, সাব্বির রহমান রুম্মন, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ আর শুভাশীষ রায় প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকার পথে।
এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা কঠিন প্রতিপক্ষ। যদিও সময়ের সেরা ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন আর ভারনন ফিল্যান্ডার, দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রতিভা এবি ডি ভিলিয়ার্স দলেই নেই। তারপরও হাশিম আমলা, ফ্যাফ ডু প্লেসিস এবং কাগিসো রাবাদার মত পারফরমারে সাজানো প্রোটিয়া বাহিনী। ঘরের মাঠে ফাস্ট বোলিং সহায়ক পিচে রীতিমত বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ।
সেই দলের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ। যে দলের বেশিরভাগ সদস্য আগে কখনো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেরই অভিজ্ঞতা নেই। সেই দল প্রোটিাদের সাথে টেস্টে কতটা কুলিয়ে উঠতে পারবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
বোঝাই যাচ্ছে খোদ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের মনেও আছে খানিক সংশয়। আজ সন্ধ্যায় দেশ ছাড়ার আগে মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক কথার ভিড়েও মুশফিক জানাতে ভুল করেননি যে, তার দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার টেস্ট খেলতে যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে উপমহাদেশের দলগুলো খাবি খায়। তার দলও খাবি খেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে তারা চেষ্টা করবেন, ভালো খেলতে। নয় বছর আগের চেয়ে ভাল খেলতে।
দেশ ছাড়ার আগে আজ শনিবার সকালে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই টাইগার অধিনায়কের মুখেএমন কথ, ‘দক্ষিণ আফ্রিকাতে আমাদের খুব একটা ভালো রেকর্ড নেই। আমাদের খুব কম খেলোয়াড়ই আছে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেছে। এটা এমন একটা জায়গা- সবগুলো দলই ওখানে সংগ্রাম করে। আমরা যাবো, আমাদেরও হয়তোবা সংগ্রাম করতে হতে পারে। আমরা অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব।’
আগের চেয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত দাবি করে মুশফিক বলেন, ‘সর্বশেষ খেলা বাংলাদেশের চেয়ে আমরা এখন অনেক বেশি পরিণত। অনেক উন্নত একটা দল। আমরা যদি আমাদের পরিকল্পনাগুলো ভালো করে বাস্তবায়ন করতে পারি, আমার মনে হয় আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রসঙ্গ তুলে মুশফিক বলে ওঠেন, ‘নিউজিল্যান্ডে আমাদের সফর ভালো ছিল না। তারপরও এই বছর আমরা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো খেলেছি। হয়তো দুটো ম্যাচেই হেরেছি, তারপরও কিন্তু আগের চেয়ে ভালো করেছি। সেখানে ব্যক্তিগত অনেক পারফরম্যান্স ছিল। আমরা চেষ্টা করবো, দল হিসেবে যেন ওখানে ভালো কিছু করতে পারি।’
বড় দলগুলোর বিপক্ষে ভালো খেলার উদাহরণ টেনে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও ভালো করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘এই বছর বড় দলগুলোর সঙ্গে আমাদের খেলা হয়েছে। সেই হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাও আমাদের জন্য বড় সুযোগ। এটলিস্ট দেশের বাইরে গিয়ে আমরা যদি দুটি ম্যাচ ভালো খেলতে পারি, তাহলে অন্যরকম একটা বার্তা দেয়া যাবে। অবশ্যই আমাদের সবার ওই ফোকাসটা রয়েছে। আমার মনে হয় কাজটা কঠিন হলেও অবিশ্বাস্য কিছু নয়। উপমহাদেশের অনেকে সংগ্রাম করলেও তাদের অনেক ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাদের ছেলেরা ওখানে অনেক ভালো খেলবে।’
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম