বাড়তি টার্ন আর লায়নের বোলিংয়েই এমন ব্যাটিং বিপর্যয়
একটা অজুহাত ছিল। শুধু অজুহাতই নয় ক্রিকেটীয় যুক্তিতেও তাকে খোঁড়া যুক্তি বলার উপায় ছিল না। সেটা গ্রহণযোগ্যই হতো। তবে কথা হলো সে যুক্তি আর আজ দিলে চলবে না। কেউ তা গ্রহণও করবেন না। বুধবার তৃতীয় দিন দাঁড় করালে মানা যেত, কিন্তু আজ টাইগারা যে ব্যাটিং করলেন, এ ব্যর্থতার কোন অজুহাত নেই। খারাপ খেলার কোন যুক্তিই ধোপে টিকবে না।
বুধবার শেষ ঘণ্টায় ব্যাটিংয়ে নেমে ৪০/৫০ রানের ভিতরে ৩-৪ উইকেট হারিয়ে বসলে কোচ হাথুরুসিংহে কিংবা অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলতে পারতেন, প্রচণ্ড গরম, অত্যধিক আর্দ্র আবহাওয়া। এর মধ্যে দেড় দিন টানা ফিল্ডিং করার পর ক্লান্ত ও অবসন্ন শরীরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্পিন ঘূর্ণি আর এক্সপ্রেস বোলিং তোড়ের মুখে বিপর্যয়ে পড়েছি।
কিন্তু তা আর বলার কোনই সুযোগ নেই। কারণ, গতকাল অলআউট হয়নি অষ্ট্রেলিয়া। যে একট মাত্র উইকেট বাকি ছিল, তা পড়েছে আজ চতুর্থ দিন সকালে। তাও মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই ইনিংস শেষ আস্ট্রেলিয়ার। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কেউ ক্লান্তি ও অবসাদের ধোয়া তুলতে পারবেন না। বুধবার সারা রাত পূর্ণ বিশ্রাম মিলেছে। মোদ্দা কথা প্রায় পরিপূর্ণ বিশ্রামে থেকে দ্বিতীয় দিন শুরু করার সুযোগ মিলেছিল। যা ভালো করার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবেও ধরা হয়েছিল।
ভক্ত ও সমর্থকরা বুক ভরা আশা নিয়ে বসেছিলেন যাক রাতটুকু বিশ্রাম পেয়েছেন তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মুশফিক, সাকিবরা। নিজেরা বসে ছক কষার সময়ও মিলেছে। লিওনের ভিডিও ফুটেজ দেখে তার বোলিংয়ের সব কারুকাজ, কারিশমা সম্পর্কেও একটা পরিষ্কার ধারণা নেবার সুযোগও পেয়েছেন।
তাহলে নিশ্চয়ই প্রথমবারের ভুল ত্রুটি কাটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংটা ভালো হবে। আর ভালো ব্যাটিংয়ের অর্থ স্কোরলাইন মোটা তাজা হওয়া। সবাই যখন এমন আশার প্রহর গুনছেন, তখন ব্যাটসম্যানরা উল্টো হতাশায় ডোবালেন। এমন দায়িত্বহীন ব্যাটিং করলেন, যা চোখে দেখেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কী ছিল? সেটাও ঠিক বোঝা গেল না, মুশফিক বাহিনী কী অস্ট্রেলিয়াকে ২৫০ থেকে ৩০০ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চেয়েছিলেন? না উইকেটে বেশি সময় কাটিয়ে ড্র করে সিরিজ নিশ্চিতের লক্ষ্য ছিল, কিছুই পরিষ্কার বোঝা গেল না। এক কথায় যাকে বলে লক্ষ্যহীন ব্যাটিং।
একজন ব্যাটসম্যানও দায়িত্ব নিয়ে খেললেন না। পুরো ইনিংসে কারো ফিফটি নেই। ৪০'র ঘরেও পা রাখতে পারেননি কেউ। সর্বাধীক ৩১ রান আসলো অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে। তামিম, সৌম্য, ইমরুল, সাকিব, নাসির, সাব্বির, মুশফিক মুমিনুল, এই আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা দল মাত্র ১৫৭ রানেই অলআউট! এটাকে বিপর্যয় না বলে ব্যাটিং বিভীষিকা বলাই সম্ভবত যুক্তিযুক্ত হবে।
ইকেট আনপ্লেয়েবল হলে তবু কথা ছিল। চতুর্থ দিনের পিচ কিছু বল টার্ন করবেই। করেছেও। দু-একটি বল গুডলেন্থ থেকে লাফিয়েও উঠেছে। তাই বলে এমন খারাপ হয়নি যে, ৪৩ রানে ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। যিনি এ সিরিজে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন, সর্বোচ্চ সমীহ আদায় করেছেন সেই নাথান লিওন আবার পথের কাটা। তাকে খেলতে নাকাল প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে ৭ জনকে আউট করা লিওন এবার আউট করলেন তামিম, ইমরুল, সাকিব, সাব্বির , মুমিনুল ও তাইজুলের উইকেট।
কেন এমন ব্যাটিং বিভীষিকা? কী হল যে প্রথম ইনিংসে ৩০০ রান করা দল পরের ইনিংসে দেড়শোর ঘরে অল আউট? খেলা শেষে সংবাদ সন্মেলনে এ প্রশ্ন উঠল। মুশফিক জবাবে অনেক কথাই বললেন, যার সারমর্ম হলো, দ্বিতীয় ইনিংসে পিচের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। বল ঘুরছিল। আর অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার লিওন যেমন বোলিং করেছেন, তাতে রান করা কঠিনই ছিল।
তবে এত খারাপ করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এই না হবার পেছনে তাদের ব্যাটসম্যানদের ভুল অ্যাপ্লিকেশনকে দায়ী করেছেন টাইগার অধিনায়ক। তার ধারণা, লিওন যে চতুর্থ দিনের উইকেটের সুবিধাটা খুব ভালোমত নিতে পেরেছে। তাই তো মুখে এমন কথা, নাথান লিওন একমাত্র বোলার যে কি না বিপদজনক, এখান থেকে সুবিধাটা ভালোভাবে নিতে পেরেছে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানদের তাকে খেলা অনেক কঠিন হয়ে গেছে।’
লায়নকে ক্রেডিট দিলেও আবার নিজ দলের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশনেরও সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার মতে, কিছু আউট ছিল যেগুলো আসলে দূর্ভাগ্যজনক। এমন দুই-তিনটি আউট আছে। আবার আমি মনে করি অ্যাপ্লিকেশনটা যদি আরও কিছুটা ভালো হতো, তাহলে আরও একটা-দুইটা সেশন খেলা যেত।
এআরবি/এমআর/আইআই