অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ৮৬
সকালে দ্রুত অস্ট্রেলিয়াকে ফিরিয়ে বড় লক্ষ্য দেয়ার তাগিদ নিয়েই ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। তবে তাগিদ থাকলেও তা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লিওনের অসাধারণ বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫৭ রানেই থামে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। আর জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮৬ রানের।
মুমিনুলের আউটের পর ধারণাই করা যাচ্ছিল লিড আর খুব বেশি বাড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। তাই হল, তাইজুলকে চার রানে তুলে নিলেন লিওন। মোস্তাফিজকে ০ রানে ফিরিয়ে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিলেন ও'কিফ। লিওন পেয়েছেন ৬টি উইকেট। আর বাকি দুই উইকেট নিয়েছেন পেসার কামিন্স।
এর আগে লিওনের পঞ্চম শিকার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল হক। ব্যক্তিগত ২৯ রানে আউট হন মুমিনুল। লিওনের বল সুইপ করতে গেলে লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডার কামিন্সের হাতে ধরা পরেন এই টাইগার টেস্ট স্পেশালিস্ট। মুশফিক ফিরে গেলেও মিরাজকে নিয়ে ভালোই খেলছিলেন তিনি। গড়েছিলেন ২০ রানের জুটিও। কিন্তু ভাগ্য যেন আজ বাংলাদেশের সাথে নেই। না হলে এমন সময় এভাবে সুইপ করতে গিয়ে ধরাইবা পরবেন কেন মুমিনুল!
৩২ রানের জুটি গড়ার পর কামিন্সের বলে উইকেট দিলেন মুশফিক। কামিন্সের অফ সাইডে করা সোজা লেন্থের বলটিতে আলতো করে ব্যাটের ছোঁয়া লাগান মুশফিক। ব্যাট ছুঁয়ে গিয়ে উইকেটের পেছনে ওয়েডের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১০৩ বল খেলে ৩১ রান করেন মুশফিক।
এর আগে তামিমের মত একইভাবে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন সাব্বির। তারপর ক্রজে আসা মুশফিক, মমিনুলকে নিয়ে লড়াই শুরু করলেও খুব বেশি আগাতে পারেননি। সাব্বির আউট হওয়ার আগেই লিড নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
নাথান লিওন, স্টিভেন ও’কিফ এবং অ্যাস্টন অ্যাগার যেভাবে একের পর এক উইকেট তুলে নিতে শুরু করেছিলেন, তাতে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল সবাই -অস্ট্রেলিয়ার ৭২ রানের লিড টপকাতে পারবে তো মুশফিকের দল! শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয় মুশফিক আর সাব্বিরের দৃঢ়তায়। অস্ট্রেলিয়ার ৭২ রান টপকে দ্বিতীয় ইনিংসে লিড নেয় বাংলাদেশ। স্টিভেন ও’কিফকে বাউন্ডারি মেরেই বাংলাদেশকে লিড এনে দেন সাব্বির।
তামিম, সৌম্য, ইমরুল, সাকিবের সঙ্গে চার নম্বরে নামা নাসির হোসেনও দলকে বিপর্যয়ে ফেলে দ্রুত আউট হয়ে যান। ৪৩ রানেই পড়ে বাংলাদেশের ৫ উইকেট। শঙ্কাটা বেড়ে গিয়েছিল এ কারণেই সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে স্টিভেন ও’কিফের বলে একবার সাব্বিরকেও আউট ঘোষণা দিয়ে আঙুল তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ থাকার কারণে রক্ষা। বেঁচে যান সাব্বির।
এর আগে একের পর এক ভুলের খেসারত দিয়ে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ দলের ৫ ব্যাটসম্যান। সৌম্য, তামিম, ইমরুল, সাকিব এবং নাসির। সৌম্য ভুল করেছিলেন স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। তামিম ইকবাল অধৈর্য হয়ে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হলেন স্প্যাম্পড।
আরও পড়ুন: ১১৫ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন লিওন
ইমরুল ঠিক মত শটই খেলতে পারলেন না। ইচ্ছা করেই যেন ক্যাচটা দিলেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে। খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন সাকিব আল হাসান। স্টিভেন ও’কিফের বলে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাসির হোসেনও।
দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে আর এগুতে না দিয়ে অলআউট করে দিল বাংলাদেশ। দিনের তৃতীয় ওভারেই বলতে গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে হলো বাংলাদেশকে। শুরুতেই দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার মুখোমুখি হলেন নাথান লিওনের। প্রথম ইনিংসে যিনি নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। পরের ওভারেই আক্রমণের জন্য পেসার প্যাট কামিন্সের হাতে বল তুলে দিলেন অসি স্কিপার স্টিভেন স্মিথ।
প্রথম চারটি ওভার ভালো ভালোই কাটিয়ে দিলেন দুই ওপেনার। পঞ্চম ওভারে পেসার প্যাট কামিন্সের বলে এসেই বিপদটা বাড়িয়ে দিলেন সৌম্য সরকার। ওভারের ৫ম বলে এসে অপ্রয়োজনে কামিন্সকে খোঁচা দিতে গেলেন সৌম্য সরকার। অফ স্ট্যাম্পের ওপর পড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইচ্ছা করেই যেন বলে খোঁচাটা দিলেন সৌম্য। প্রথম স্লিপেই ধরা পড়লেন ম্যাট রেনশর হাতে। দলীয় ১১ রানেই পড়ল প্রথম উইকেট। সৌম্য আউট হলেন ৯ রান করে।
এরপর যেন রান করতে না পারায় পুরোপুরি অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন তামিম ইকবাল। ৩৮ বল খেলে করলেন মাত্র ১২ রান। এ কারণেই হয়তো নাথান লিওনের বলে ভুলটা করে বসলেন তিনি।
একেবারে ক্রিজ ছেড়ে দিয়ে এসে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গেলেন লিওনকে। কিন্তু বলের লাইন মিস করলেন। বল চলে গেলো উইকেটের পেছনে ম্যাথ্যু ওয়েডের হাতে। দ্রুত ব্যাট ফেলেও লাভ হলো না। তার আগেই উইকেট ভেঙে দিলেন ওয়েড। দলকে আরও বেশি বিপদে ফেলে আউট হয়ে গেলেন তামিম ইকবাল। দলীয় রান ছিল তখন ৩২।
সেই ভুলের ধারাবাহিকতা চলল ইমরুলের ক্ষেত্রেও। একের পর এক সুযোগ পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারছেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। দলকে রেখে গেলেন দারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে। নাথান লিওনের স্পিন ঘূর্ণির সামনে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন তিনি।
লিওনের বলে খুবই বাজে একটি শট খেললেন ইমরুল। শটে কোনো ক্যারিশমা ছিল না। কোনো পাওয়ার ছিল না। ইচ্ছা করেই যেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচটা তুলে দিলেন তিনি। ৩৭ রানে পড়ল তৃতীয় উইকেট।
ইমরুল কায়েসের পর পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন সাকিব আল হাসান। অনেক আশা-ভরসা ছিল তাকে নিয়ে। কিন্তু সেই অফ স্পিনার লিওনের সামনে বাম হাতি ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান টিকতে পারলেন না। বিভ্রান্ত হলেন। উইকেট বিলিয়ে দিলেন। লেগ মিডলে পড়ে বল হালকা বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখনই ব্যাট পেতে দেন সাকিব। বল চলে গেলো প্রথম স্লিপে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ২ রান করেই বিদায় নিলেন সাকিব। ৩৯ রানে গেল চতুর্থ উইকেট।
৪৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন নাসির হোসেন। ২০তম ওভারে স্টিভেন ও’কিফের চতুর্থ বলটি না খেলে ছেড়ে দিলেও পারতেন নাসির। কিন্তু তিনি এক পা এগিয়ে এনে খেলতে যান। ব্যাটে-বলে ঠিকমত হলো না। কানায় লেগে চলে গেল প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো স্টিভেন স্মিথের হাতে। দলকে চরম বিপর্যয়ে ফেলে রেখে বিদায় নেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া নাসিরও।
এমএএন/এমআর/পিআর/জেআইএম