মুশফিক-হাথুরুই উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মোস্তাফিজকে
আসলে তার কাছে ভক্ত-সমর্থক ও সবার প্রত্যাশা বেশি। সবাই চান মোস্তাফিজ প্রতি খেলায় গন্ডায় গন্ডায় উইকেট পাবেন; কিন্তু ভুলে যান, খেলাটা টেস্ট। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে শুধু মেধা-প্রজ্ঞা থাকলেই উইকেট পাওয়া যায় না। সবার আগে দরকার অনুকূল ক্ষেত্র।
দেখতে হবে, কাটার মাস্টার তা পেয়েছেন কি না? পরিসংখ্যান জানাচ্ছে মাত্র ৬ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে মোস্তাফিজ দেশের বাইরে খেলেছেন দুটি মাত্র টেস্ট। আর চট্টগ্রামের চলতি টেস্ট ধরলে দেশেই চার ম্যাচ খেলে ফেললেন তিনি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যার একটি পিচও পেস বা ফাস্ট বোলিং সহায়ক নয়। ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী, গল আর কলম্বোর পি সারা ওভাল- এই চার ভেন্যুও সবগুলো উইকেটের চরিত্র এক। গতি-প্রকৃতি অভিন্ন। স্লো-লো। বল পড়ে থেমে আসে। বাউন্সও থাকে কম। সুইংও হয় না তেমন।
এরকম নিষ্প্রাণ মরা পিচে মোস্তাফিজ কেন, যে কোনো পেসারের আর কিই বা করার থাকে? তারপরও এই সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট মোস্তাফিজের। গেল মার্চে শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ রান দিয়ে তিন উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।
লঙ্কান ব্যাটিংয়ের দুই মুল স্তম্ভ কুশল মেন্ডিস আর দিনেশ চান্ডিমাল এবং তরুণ ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে ফিরিয়ে জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; কিন্তু ঢাকা টেস্টে উইকেট না পাওয়ায় বাধে যত বিপত্তি।
প্রথম ইনিংসে ৮ ওভারে ১৩ রানে উইকেটশূন্য। আর পরেরবার মাত্র ১ ওভারে ৮ রান দিয়েই শেষ। তারপরও শফিউলকে বাদ দিয়ে মোস্তাফিজে আস্থা কোচ, অধিনায়ক তথা টিম ম্যানেজমেন্টের।
তাই চট্টগ্রাম টেস্টে তার ওপর প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। শুধু টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যাশা বেশি ছিল বলা সম্ভবত কম বলা হলো, বলা চলে তার ওপর ভাল করার জোর তাগিদ ছিল।
কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আজ সকালে খেলা শুরুর আগে মোস্তাফিজকে সোজা বলে দেন, ‘কি হলো তোমার? বাড়তি কিছু করে দেখাও।’
আজ খেলা শেষে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে সে বাড়তি কিছু করার তাগিদের কথা অকপটে স্বীকার করেন ৮৪ রানে তিন উইকেট দখল করা এ বাঁ-হাতি পেসার। আজ ছিল তার ২২তম জন্মদিন। একটি বিশেষ দিন। বিশেষ উপলক্ষ।
এমন দিনেই তাকে বলা হলো বাড়তি কিছু করে দেখাতে। কোচ-ক্যাপ্টেনের তাগিদ বলে কথা। মোস্তাফিজও চেষ্টা করলেন, দেখি কি করা যায়? তারই ফলশ্রæতিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের মূল্যবান উইকেটসহ তিন অসিকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি।
শুধু উইকেট পাবার কারণেই নয়। বুধবার কাটার মাস্টারকে একটু বেশি সিরিয়াস মনে হয়েছে। কিছু করার তাগিদটাও বেশি কাজ করেছে। কেন করেছে? তা জানাতে গিয়ে মোস্তাফিজ বলে উঠলেন, ‘কালকে আমরা ৬০ ওভারের মতো বোলিং করছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেট পড়ছিলো। সকালে কোচ আর মুশফিক ভাই, সবার অন্যরকম একটা কথা ছিলো। কিচ্ছু না হোক, উইকেট বার করতে হবে। তা পারি কি না আমরা সেই চেষ্টা ছিলো।’
ব্যক্তিগতভাবে আপনার প্রতি কোনো নির্দেশনা ছিল কী? ‘এফোর্টটা একটু বেশি দিতে বলছিলো আর কি।’ জানিয়ে দিলেন গতকাল বিকেল ও আজ সারা দিনে তার লেন্থে রদবদল হয়নি। তার ভাষায়, ‘জায়গা ঠিক ছিলো। চারটা বল ঠিক জায়গায় করেছি। দুই একটা আগে-পিছে চলে গেছে। এমনিতে লেন্থ ওইভাবে চেঞ্জ করতে হয়নি।’
বোলিং কোচের সঙ্গে বাড়তি জিনিস নিয়ে কাজ করেছেন। সেগুলো প্রয়োগ করতে পারছেন, তাই খানিক প্রশান্তি মনে। জানিয়ে দিলেন নতুন বোলিং কোচ তাকে বাউন্সার ছোড়ায় উদ্বুদ্ধ করছেন। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমি নরমালি বাউন্সার কম দেই। দুই বছরের ক্যারিয়ারে খুব কমই বাউন্সার ছুঁড়েছি। এখন চেষ্টা করছি ওভারে দুইটা বাউন্সার যদি ভালো জায়গায় করতে পারি। তাহলে ভালো হবে। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য ভাল বাউন্সার অসুবিধা, আর আমার জন্য ভালো।’
নতুন যা শিখেছেন, তার পুরোপুরি আয়ত্বে আসেনি। এ সহজ সরল স্বীকারোক্তি, আমি অল্প কয়েকদিন প্র্যাকটিস করেছি। এখনো ওইভাবে পুরোটা ইয়া (আয়ত্বে নেয়া) করা হয় নাই। ফিফটি-ফিফটি।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস