জন্মদিনে দলকে অনন্য উপহার মোস্তাফিজের!
যত স্লো-লো আর টার্নিং উইকেটে খেলা হোক না কেন, সব টেস্ট খেলুড়ে দলেই স্পিনারদের সাথে অন্তত একজন উঁচুমানের ফাস্ট বা মিডিয়াম ফাস্ট বোলার থাকেন। যার কাজ শুধু নতুন বলে বল করাই নয়, প্রয়োজনীয় সময় ব্রেক থ্রু উপহার দেয়া।
ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যিনি হবেন স্ট্রাইক বোলার। যার কিছু অত্যাবশ্যকীয় গুণাবলি থাকা খুব জরুরি। প্রথমত. তার গতি থাকতে হবে। নিষ্প্রাণ-মরা পিচেও যিনি ১৪০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি গতিতে বল করে প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরাতে পারেন। তার দ্রুত গতির ডেলিভারি খেলতে যেন একটা ঝাঁকুনি লাগে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। তার সুইং করানোর সামর্থ্য থাকাও খুব জরুরি। পাশাপাশি বাউন্সার আর ইয়র্কার ছোড়ার কাজটিও জানতে হবে ভালোমতো।
এমন গুণাবলি থাকলে একজন ফাস্ট কিংবা মিডিয়াম ফাস্ট বোলার প্রয়োজনের সময় দলকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু উপহার দিতে পারেন। গতি আর বাউন্সার বাদ দিলে এই ক্যাটাগরির অন্য সব গুণাবলি ঠিকই আছে মোস্তাফিজের।
গড়পড়তা তার গতি এখন ১৩৩ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার। বাউন্সার ছুড়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের সাহস পরীক্ষার কাজটা খুব বেশি করেন না। তবে ইয়র্কার ছুড়তে পারেন ভালো। সুইং তার সঙ্গী।
বল তেমন না ঘোরায় স্পিনারদের সুবিধা করা কঠিন। সাকিবের মতো বোলার উইকেট পাননি। তাইজুল-মিরাজও ঠিক নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই তার কাছ থেকে একটা ভালো ও বিধ্বংসী স্পেলের প্রত্যাশা ছিল সবার।
নিজের দল, ভক্ত ও সমর্থকদের সে প্রত্যাশার অনেকটাই পূর্ণ করেছেন মোস্তাফিজ। দুর্ভাগ্য, মিরাজ গালিতে ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ ফেলে না দিলে হয়তো ৪ উইকেট জমা পড়তো তার নামের পাশে। ১২ রানে জীবন পাওয়া ম্যাক্সওয়েল শেষ পর্যন্ত করেছেন ৩৮ রান। ওই সময় ম্যাক্সওয়েল আউট হলে অজিদের লিডটা নির্ঘাত আরও ২৫-৩০ রান কম হতো।
তার জন্মদিনে কোথায় অধিনায়ক, কোচ ও সহযোগীরা তাকে অভিনন্দন জানাবেন। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করবেন, কেক কাটা হবে- তা না উল্টো কাটার মাস্টার দলকে উপহার দিলেন এক দারুণ স্পেল।
দলে তিনিই একমাত্র পেসার। নতুন বলে তার সঙ্গী মিরাজ। নতুন বলে তাকেই যা করার করতে হবে। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই হয়তো মরা পিচে আগুন ঝরানো বোলিং করতে না পারলেও সমীহ জাগানিয়া বোলিং করে অসি মিডল অর্ডারে চাপ সৃষ্টি করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার রেনশকে নিজের প্রথম ওভারে আউট করে সেই ‘কিছু করার’ ইঙ্গিতটা কিন্তু প্রথমেই দিয়েছিলেন। যদিও সেটা উইকেট পাবার মত ডেলিভালি ছিল না। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করে আরও বেড়িয়ে যাচ্ছিল বলটি।
এমন এক ডেলিভারিকে ফ্লিক করতে গিয়ে মাঝ ব্যাটে আনতে পারলেন না অস্টেলিয়ান ওপেনার রেনশ। বল তার ব্যাটের ভিতরের অংশে লেগে চলে যাচ্ছিল ফাইন লেগে। অধিনায়ক মুশফিক বাজ পাখির মত ডান দিকে শরীর ফেলে অসামান্য দক্ষতায় তা ধরে ফেললে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেটের পতন ঘটে।
কাল আর কোন উইকেট পাননি। আজ সকালের বৃষ্টি একটু হলেও মোস্তাফিজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। যতই পিচ কভারে ঢাকা থাকুক, বৃষ্টিতে দুই তিন ঘন্টা ঢাকা থাকলে আপনা-আপনি কিছু ময়েশ্চার জমা হয়। তাতে করে সিমারদের সুইং পাবার একটা অনুকুল প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
তা কাজে লাগিয়েই হোক, কিংবা নিজের ক্যারিশমায়- মোস্তাফিজ ঠিক সুইং পেলেন। ওয়ার্নার আর ম্যাথ্যু ওয়েড দু’জনার উইকেট জমা পড়লো তার ঝুলিতে। দলের প্রয়োজনে অনেকটা সময় একদিকের উইকেট আগলে রাখা ওয়ার্নার আউট হলেন পুল আর ফ্লিকের মাঝামাঝি একটা শট খেলতে গিয়ে। ক্যাচ দিলেন শর্ট লেগে। তিন বারের চেষ্টায় ইমরুল তা ধরে ফেরালেন ওয়ার্নারকে। আর ম্যাথ্যু ওয়েড পড়লেন লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে।
মোস্তাফিজের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো ওয়ার্নারকে আউট করা। খালি চোখে আজকের সেঞ্চুরিটা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মন্থরতম; কিন্তু দীর্ঘ সময় উইকেটে কাটানোয় একদিকে যেমন তার দল ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল আর অন্যদিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছিল ব্যাকফুটে।
তাকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজ দলকে অনুপ্রাণিত করেছেন কাটার মাস্টার। অন্যদিকে অসিদের আত্মবিশ্বাসে চিড়ও ধরে। আর সেই সুযোগে মিরাজও অন্যদিক থেকে চেপে ধরেন সফরকারীদের। আর তাতেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
তাই মোস্তাফিজের আজকের বোলিংটা মুশফিক বাহিনীকে ম্যাচে ফেরাতে রেখেছে বড় ভূমিকা। সে কারণেই বলা, ২০ ওভারে ৭৮ রানে ৩ উইকেট। তার মানে আহামরি কোন ফিগার হয়তো নয়। এরচেয়ে অনেক ভাল বোলিং ফিগার তার আছে। তবে এ ম্যাচের আলোকে এবং অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে নিজেদের নাগালের মধ্যে রাখতে যে এমন বোলিংটাই দরকার ছিল মোস্তাফিজ এবং বাংলাদেশের!
এআরবি/আইএইচএস/এমএস