আশার বাণী শোনাচ্ছে ইতিহাস, পারবে কী বাংলাদেশ?
যদিও উইকেটের চরিত্র, গতি, প্রকৃতি আর আচরণ অনেকটাই ভিন্ন। এখানে বল শেরেবাংলার মতো তেমন ঘোরে না। হঠাৎ হঠাৎ গুডলেন্থ থেকে স্পিনারদের বল লাফিয়েও ওঠে না। এ উইকেটে অস্ট্রেলিয়া অফস্পিনার লিওন ৭ উইকেট পেয়েছেন সত্য, তবে সেটা তার নিজের কারিশমা ও বাংলাদেশের অদূরদর্শী ব্যাটিং অর্ডার আর ব্যাটসম্যানদের ভুলের কারণে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট স্পিন ফ্রেন্ডলি নয়। তাতে কী? খেলাটা ক্রিকেট। এখানে পরিবেশ-পরিস্থিতিই শেষ কথা নয়। কখনো কখনো ইতিহাস ও পরিসংখ্যানও চলে আসে বিবেচনায়।
দ্বিতীয় দিন শেষে খালি চোখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ পেছনের পায়ে। অস্ট্রেলিয়া খানিক সুবিধাজনক অবস্থানে। কারণ একটাই। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৩০৫ রানে। আর অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্নার, স্মিথ ও হ্যান্ডসকম্বের হাত ধরে দ্বিতীয় দিন শেষেই বাংলাদেশের বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মাত্র ৮০ রানে পিছিয়ে আজ ব্যাটিং শুরু করল অজিরা। তাই ধরা হচ্ছে বাংলাদেশ খানিক অস্বস্তি ও চাপে। উইকেটে বল ঘুরছে না তেমন। সাকিব আগের দিন ১৫ ওভার বল করেও উইকেট পাননি। আর মিরাজের ২০ ওভারও উইকেটশূন্য। স্পিন কাজে দেয়নি তেমন। তাই বাংলাদেশের বোলিং কারিশমা চোখে পড়েনি। তাতে হতোদ্যম হবার কী আছে?
এইতো মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে শেরেবাংলায় ধ্বস নেমেছিল অজি ব্যাটিংয়ে। ওয়ার্নার আর স্মিথ জুটি ১৩০ রান তুলে দেবার পর মড়ক। ১৫৮ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ২৪৪ ‘এ ইনিংস শেষ। তার মানে আশাবাদী হবার যথেষ্ঠ খোরাক আছে। সাকিব, মিরাজ কিংবা তাইজুলের একটি জাদুকরি স্পেল পাল্টে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসের চালচিত্র।
বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের একটা অংশ খানিক হতোদ্যম। কেউ কেউ জয়ের আশা ছেড়ে উল্টো পরাজয়ের চিন্তা করছেন। তাদের জন্য আছে আশাবাদী হবার ট্যাবলেট। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এটা ১৬ নম্বর টেস্ট। আগের ১৫ টেস্টে বাংলাদেশ ৫ ম্যাচ ড্র করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খবর হলো, তার তিনটিই হয়েছে গত চার বছরে (২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর ২০১৫ সালের জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে।
অবশ্য প্রোটিয়াদের সাথে ড্র করা ম্যাচে বৃষ্টির আনাগোনা ছিল। ৫ দিন পুরো খেলা হয়নি। বৃষ্টি ভুগিয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুশফিকের দল ড্র করেছে বীরের মত লড়ে। ২০০৬ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার সাথে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলতে নামে টাইগাররা। আর সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে। সেটা যেন ছিল ঢাকা টেস্টের কার্বন কপি। পার্থক্য একটাই। এবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশ। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংলিশরা জিতেছিল ২২ রানে।)
ইতিহাস জানাচ্ছে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে এই মাঠে টাইগাররা যে পাঁচ টেস্ট খেলেছে, তার মধ্যে শুধু ইংল্যান্ডের সঙ্গে শেষ ম্যাচটিতেই হেরেছে। বাকি দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচ ড্র করার কৃতিত্ব আছে টাইগারদের। এর মধ্যে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুমিনুল হকের ক্যারিয়ার সেরা ১৮১ রানের ইনিংসে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের সঙ্গে সমান তালে লড়ে ম্যাচ বাঁচিয়েছে মুশফিকের দল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে কুমারা সাঙ্গাকারার ট্রিপল সেঞ্চুরিতে সাজানো লঙ্কানদের ৫৮৭ রানের বড় সড় স্কোরও চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ইমরুল কায়েস (১১৫) আর শামসুর রহমান শুভ (১০৬) প্রথম ইনিংসে আর দ্বিতীয়বার মুমিনুল হকের ১০০ নট আউট, বীরের মত ড্র করার রেকর্ড আছে টাইগারদের।
২০১৬ সালের অক্টোবরে অ্যালিষ্টার কুক, ডাকেট, জো রুট, মঈন আলী আর স্টোকসের গড়া ইংলিশদের শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে জিততে না পারলেও বাংলাদেশ সমান তালে লড়েছে। প্রথম ইনিংসে অফস্পিনার মিরাজ (৩৯.৫-৭-৮০-৬) আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব (৩৩-৫-৮৫-৫ ) উইকেট শিকারী। এ ম্যাচেও যে সাকিব-মিরাজের কেউ অমন কিছু ঘটাবেন না, তাইবা কি করে বলা?
এদিকে আজ সকালের সেশন বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যাবার পর দুপুর সোয়া একটায় খেলা শুরুর পর টাইগারদের বোলিংয়ে কালকের চেয়ে ধার বেশি মনে হচ্ছে। প্রথম ঘণ্টায় অজিরা ৪৮ রান তুললেও ভেঙেছে কালকের জমজমাট জুটি। ৮২ রানে আউট হ্যান্ডসকম্ব। নাসিরের বলে শতরানের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো ওয়ার্নারকে সিঙ্গেল নিয়ে শতরান পূর্ণ করতে নন স্ট্রাইক অ্যান্ড থেকে বেড়িয়ে যাওয়া হ্যান্ডসকম্ব রান আউট সাকিবের ডিরেক্ট থ্রো‘তে।
বৃষ্টিতে এক সেশন নষ্ট হবার পর রানের গতি বাড়াতে ম্যাক্সওয়েলকে প্রমোশন দিয়ে ওপরে আনা। সে লক্ষ্য ভেস্তে যাচ্ছিল। ১২ রানেই ফেরত যাচ্ছিলেন মারকুটে ম্যাক্সওয়েল। বাঁহাতি মোস্তাফিজের কৌনিক ডেলিভারিতে অফড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এ অসি মিডল অর্ডার। কিন্তু গালিতে নিচু হয়ে আসা সে ক্যাচ ধরেও ফেলে দিলেন মিরাজ। এদিনও এক জোড়া সুযোগ হয়েছে হাতছাড়া।
এই সুযোগগুলো যে করেই হোক কাজে লাগাতে হবে। এক সেশন বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেলেও এখনো আরও দুইদিন পুরো খেলা বাকি। অস্ট্রেলিয়া ১০০ থেকে ১৫০ রানের লিড নিয়ে ফেললে ম্যাচ বাঁচানো কঠিন হবে। তখন ইতিহাস ও পরিসংখ্যান যতই আশার বাণী শোনাক, শেষ পর্যন্ত হতাশাই হবে সঙ্গী।
এআরবি/এমআর/এমএস