৬ উইকেট পড়লেও প্রথম দিন শেষে স্বস্তি
শেষ দিকে সাব্বির রহমান যদি বিতর্কিতভাবে ওই স্ট্যাম্পিংটি না হতেন, তাহলে প্রথম দিনটাকে বাংলাদেশেরই বলা যেত। যদিও নাথান লিওন শুরুতে বিধ্বংসী বোলিং করে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। তবে সাব্বির আউট হলেও শেষ দিকে নাসির মাঠে নেমে মুশফিকের সঙ্গে ৩১ রানের জুটি গড়ে স্বস্তি নিয়েই প্রথম দিন শেষ করেন। দিন শেষে মুশফিক ৬২ রানে এবং নাসির উইকেটে রয়েছেন ১৯ রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান।
৯০ ওভার খেলে ২.৮১ রান রেটে বাংলাদেশের রান যদিও মাত্র ২৫৩। এটাকে খুব বেশি ভালো কিংবা স্বস্তিদায়ক মনে হবে না। তবে উইকেটের বিবেচনায় এই রানও অনেক স্বস্তির। ঢাকা টেস্টে প্রথম দিনই ২৬০ রান তুলতে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম দিনই ব্যাট করতে নামতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।
সে তুলনায় আজ যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার নাথান লিওন ঘূর্ণিঝড় তুলেছিলেন, তাতে বাংলাদেশ কত কম রানে অলআউট হয়ে যাবে সে শঙ্কাতেই ছিল সবাই। তবে মুশফিক-সাব্বিরের ১০৫ রানের অসাধারণ জুটির ওপর ভর করে সম্মানজনক একটা স্কোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষ হয়ে গেলো, এখনও হাতে ৪টি উইকেট রয়েছে বাংলাদেশের। এটা সত্যিই স্বস্তিদায়ক।
সকাল থেকেই চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে চাপে রেখেছিলেন নাথান লিওন। লিওনের সাথে শেষ সময়ে যোগ দেন অ্যাস্টন অ্যাগারও। তিনি তুলে নেন সাকিব আল হাসানের উইকেট। ফলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল।
তবে সাকিব আউট হওয়ার পর যে বিপর্যয় কাটিয়ে অসিদের ভালভাবেই সামলে নেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম এবং সাব্বির রহমাননের জুটি। এ দু’জন মিলে অসি বোলারদের রীতিমত শাসন করতে শুরু করেন। গড়েন ১০৫ রানের জুটি। এরপর আবারও নাথান লিওনের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়েন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। এবার তার বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন দারুণ খেলতে থাকা সাব্বির রহমান।
যদিও সাব্বিরের স্ট্যাম্পিং নিয়ে দারুণ সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তার স্ট্যাম্পটি যখন ম্যাথ্যু ওয়েড ভেঙে দেন, তখন সাব্বির উইকেটের লাইনের ওপরই ছিলেন। বেনিফিট অব ডাউট ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যেতে পারতো; কিন্তু তা না করে টিভি আম্পায়ার আলিম দার আউটের ঘোষণা দিলেন সাব্বিরকে। ৬৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বিদায় নিলেন সাব্বির।
এর আগে ২৪ রান করে অ্যাগারের বলে উইকেটরক্ষক ম্যাথ্যু ওয়েডের হাতে ধরা পড়েন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
উইকেটটা যে স্পিন সহায়ক উইকেট হবে তা আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। স্পিন উইকেট করা হবে কারণ, বাংলাদেশের স্পিনাররা যাতে ঢাকা টেস্টের মত প্রভাব বিস্তার করে খেলতে পারেন তাই; কিন্তু সেটা বুমেরাং হলো উল্টো বাংলাদেশের জন্য। অসি ডানহাতি অফ স্পিনার নাথান লিওনের স্পিন বিষে নীল হয়েছে বাংলাদেশের টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যান। এরপর বাকি উইকেটটি নিলেন আরেক স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার।
একে একে চার ব্যাটসম্যানকে লিওন তার মায়াবী ঘূর্ণির জাদুতে এলবির ফাঁদে ফেলেন। সবশেষে তিনি তুলে নেন দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে ফেরা আলোচিত ব্যটসম্যান মুমিনুল হককে। দারুন খেলতে থাকা মুমিনুলকে ৩১ রানে সাজঘরে ফেরান এই স্পিনার।
৩ উইকেটের বিনিময়ে ৭০ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ হারায় দারুন ছন্দে থাকা ওপেনার সৌম্য সরকারকে। বোলার লিওন তার ঘূর্ণির ফাঁদে ফেলে সৌম্যকে ফেরান। লাঞ্চের পর ব্যাটিং শুরু করেন সাকিব ও মুমিনুল। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের শেষ বলে লিওন বোকা বানান মুমিনুলকে। এলবির ফাঁদে ফেলে সাজঘরের পথ ধরান তাকে। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে নিজের ঘূর্ণিতে বোকা বানান অ্যাস্টন অ্যাগার। সাকিব ধরা পড়েন ওয়েডের গ্লাভসে।
এর আগে সকালে টস জিতে যখন বাংলাদেশ যখন ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মনে হচ্ছিল আজকের দিনটা বাংলাদেশের। আর চট্টগ্রামের ছেলে তামিম আজ ভাল কিছুই করবেন। কিন্তু সকলের চাওয়াকে ভুল প্রমাণিত করে অজি স্পিনার দ্রুতই তামিম ও ইমরুলকে সাজঘরে ফেরান।
তামিম-ইমরুলের বিদায়ের দলের হাল ধরেন সৌম্য-মমিনুল। দু’জনে মিলে করেন ৪৯ রানের মূল্যবান একটি জুটি। সৌম্য সরকার সকাল থেকেই বেশ ছন্দে ছিলেন। ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো; কিন্তু ভাগ্য তার আজও সহায় ছিল না। ৩৩ রান করে তিনিও পড়েন লিওনের এলবির ফাঁদে। দলীয় ৩০তম ওভারে সৌম্য সরকারের উইকেট তুলে নেন। ফলে স্বস্তির লাঞ্চে যাওয়ার আগে সৌম্যর বিদায়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। আর লাঞ্চের পর লিওন বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে ফেরান।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে কামিন্সের বলে থার্ড স্লিপে দাঁড়ানো ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তামিম। যেটি মিস করেন ম্যাক্সওয়েল। তারপর ধারণা করা হচ্ছিল, তামিম তার নতুন জীবন কাজে লাগাবে। তবে ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তামিম ইকবাল খান। অসি ডানহাতি অফ স্পিনার ন্যাথান লিওনের ব্যক্তিগত পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই তামিমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন। আউট হওয়ার আগে তামিম করেন ৯ রান।
তামিম আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন ইমরুল কায়েস। ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে ২ রান করা ইমরুল চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ব্যর্থ। মাত্র ৪ রান করেই পড়েন লিওনের এলবিডাব্লিউ এর ফাঁদে। যদিও আলিম দার প্রথম আউট না দিলেও পরে অসি দলপতি স্মিথ রিভিউ নেন। আর রিভিউতে দেখা যায় ইমরুল আউট।
দুই অসি স্পিনার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেও তাদের ভালভাবেই সামলাচ্ছেন দুই টাইগার ডানহাতি ব্যাটসম্যান মুশফিক ও সাব্বির। এই দুই ব্যাটসম্যান যদি আজ দিন শেষ করতে পারে তবে দিন শেষে ভাল অবস্থানেই থাকার কথা টাইগারদের।
এমএএন/আইএইচএস/এমএস