রইল বাকি এক
দুই বছরের কিছু বেশি সময় আগের কথা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সফরে আসবে পাকিস্তান। তার আগে, ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর তো সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশকেই হারানো গিয়েছিল, শুধু পাকিস্তান ছাড়া। এমন একটি দলের আগমনের ঠিক আগ মুহূর্তে কি না সাকিব আল হাসান বলে বসলেন, ‘পাকিস্তানকে হারানোর এটাই সেরা সময়।’
সাকিবের কথা শুনে অনেকেই দন্তুশূল বের করে হেসেছিলেন। সমালোচকরা বলেছিলেন, ‘হাতি-ঘোড়া গেল তল, চামচিকা বলে কত জল।’ সাকিবের দাবি শুনে তো সেই সমালোচনা হেসেই কুটি-কুটি। তবে সাকিব যে কথাটি এমনি এমনি বলেননি, সেটা পাকিস্তান বাংলাদেশে আসার পরই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে পরাজয়ের স্বাদ দিল শহিদ আফ্রিদির দলকে। টেস্টে একটি গৌরবময় ড্র। অন্যটিতে হার।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান তখন থেকেই। এরপর তরতরিয়ে শুধু উপরেই উঠছে এ দেশের ক্রিকেট; কিন্তু পাকিস্তানকে হারানোর যে আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন সাকিব, অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে তেমনটা দিতে দেখা যায়নি।
অথচ, ১১ বছর পর বাংলাদেশে আসা অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কি না আবারও একই ধরনের মন্তব্য করে বসলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার! সরাসরি বলে বসলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে ২-০ তে হারানোর সামর্থ্য আছে আমাদের।’ তাও ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে নয়। টেস্টে। কল্পনায়ও যেটা আনা সম্ভব ছিল না এক সময়, সেটাকে নিয়েই কি না পরিহাস! অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখছেন সাকিব আল হাসান!
সাকিবের আগে এই স্বপ্নটা দেখিয়েছেন কোচ হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন চলছিল তখন। হাথুরু অস্ট্রেলিয়ায় নিজের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছালেন তখন। জুলাই মাসের শেষের দিকের ঘটনা। মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, অস্ট্রেলিয়াকে ২-০ ব্যবধানে হারানোর ক্ষমতা আছে আমাদের।
সমালোচকদেরও যেন এই মন্তব্য মুখ লুকানোর মত অবস্থা। বলে কী! অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ? খোদ অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এ কথা শুনে হেসে কুটি কুটি। কোথায় গালিভার আর কোথায় লিলিপুট। লিলিপুট কি না গালিভারকে ধরাশায়ী করার স্বপ্ন দেখে!
স্মিথকে যখন সাকিব আর হাথুরুর আশার কথা শোনানো হয়েছিল ঢাকা টেস্ট শুরুর আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে, তখন তিনি সত্যিই অবাক হয়েছিলেন। মুখেও বলেছিলেন, ‘আমি সত্যি অবাক হচ্ছি। যে দলটি ১০০ টেস্টের মধ্যে জিতেছে মাত্র ৯টি টেস্ট। তারা কি না আমাদের ২-০ তে হারানোর স্বপ্ন দেখে! খুব অবাক হলাম। যদিও বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নতি করছে- এটা ঠিক।’
স্মিথ কিংবা যেই হোক- তাদের আরও বেশি হতবাক করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে সত্যি সত্যি স্মিথের দলকে হারিয়ে দিয়েছে বাংলার টাইগাররা। সাকিব-তামিম-মিরাজ-তাইজুলরা ক্যাঙ্গারুদের গলায় ফাঁস পরিয়ে দিয়েছে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, ‘মুখে বলেই নয় শুধু, বাস্তবেও আমরা তোমাদের হারানোর ক্ষমতা অর্জন করেছি।’
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটি শেষ। বাংলাদেশ এগিয়ে ১-০ ব্যবধানে। এটাকে ২-০ ব্যবধান করার জন্য রইল বাকি এক। সাকিব-হাথুরুরা নিজেদের কথামত একে ২-০ করতে চাইলে চট্টগ্রামেও বধ করতে হবে অস্ট্রেলিয়ানদের। ঢাকা টেস্ট জিতে যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে টাইগাররা, তাতেই হয়তো অর্জন হবে স্বপ্নের ২-০ ব্যবধান। তখন সাকিব-হাথুরুদের কথা শুনে যারা হেসে কুটি কুটি হয়েছেন- তারা আর লজ্জায় মুখ তুলেও তাকাতে পারবে না। আপাতত অপেক্ষা সে পর্যন্ত।
আইএইচএস/এমএস