ঘরোয়া ক্রিকেটেও আনপ্রেডিক্টেবল উইকেট চান তামিম
‘আচ্ছা উইকেট এখন কেমন?’ তৃতীয় দিনের খেলা শেষে এ প্রশ্ন করা হলো তামিম ইকবালকে। বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক এতটুকু সময় না নিয়ে কোনরকম ভনিতা না করে বলে উঠলেন উইকেট ‘আনপ্রিডিক্টেবল।’
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আচরণ ও চরিত্র সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। যে কোন সময় যে কোন ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের কাজ হলো ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় থাকা। আগের ইনিংসগুলোয় দেখেছেন নিশ্চয়ই, একটি উইকেট পড়ার পর আরও দুই তিন উইকেটের পতন ঘটে।’
মুশফিকের দল ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ও কঠিন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কোথায় সর্বোচ্চ হোম এডভান্টেজ মানে সহায়ক উইকেটে খেলবে, তা না খোদ স্বাগতিক দলই জানে না, বোঝে না- উইকেটের চরিত্র কেমন?
তাও প্রথম দিন হলে মানা যেত; কিন্তু খেলা তো তিন দিন হয়ে গেছে। এখনো উইকেটের চরিত্র, গতি প্রকৃতি আর আচরণ সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার হয়নি? তাই যদি হবে, তাহলে তামিমের মুখে কেন এমন কথা? প্রেস বক্সে গুঞ্জন।
অবশ্য সে গুঞ্জন মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। তামিম বলে উঠলেন, ‘আমাদের হোম এডভান্টেজ পাওয়া উচিত।’ কিন্তু তার প্রশ্ন, তারা যে উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলছেন, সেটা যথার্থ হোম এডভান্টেজ নয়।
তামিম ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘কারণ খেলা হচ্ছে স্পিনিং ট্র্যাকে। বল লাটিমের মত ঘুরছে। কখনো লাফিয়ে উঠছে, আবার কোনো কোনো সময় বিপজ্জনকভাবে নিচুও হচ্ছে। এমন স্পিন সহায়ক উইকেটে ঘরের মাঠে ক্রিকেট খেলি না আমরা। যদি খেলতাম, তাহলে অভ্যাস থাকতো। আমরাও মানিয়েও নিতে পারতাম।’
তামিম আরও যোগ করেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ এলেই এমন উইকেটে খেলা হয় আমাদের। আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেই কন্ডিশনকে আমাদের এডভান্টেজ বলা হয়। আর বিদেশি দলের জন্য ডিজ এডভান্টেজ ভাবা হয়।’
তামিম বোঝাতে চাইলেন, এটা আসলে নামমাত্র হোম এডভান্টেজ। আক্ষেপের সুরে তার কথা, আমরা ঘরের ক্রিকেটে হোম কন্ডিশনে ঘাসের উইকেটের খেলার কথা বলি। ঘাসের উইকেটে খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে তেমন ঘাসের উইকেটে খেলি না। এই চিন্তা-ভাবনা পাল্টানোর জোর দাবি তামিমের।
ভবিষ্যতের জন্য পথ বাতলে তামিম বলেন, ‘ঘাসের উইকেটে আমরা দেশের বাইরে খেলি। সেটা হয়ত বছরে একবার। আমরা যদি এ ধরনের স্পিন ট্র্যাকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চাই, তাহলে ঘরের ক্রিকেটও এমন পিচেই হওয়া উচিত। সব মাঠে না হলেও একটি দুটি মাঠে এমন উইকেটে খেলা হলে নতুনরা অভ্যস্ত হয়ে আসবে।’
তামিমের শেষ কথা, ‘স্পিনিং ট্র্যাক হলেই যে একজন স্পিনার এসে বল করে উইকেট পেয়ে যাবে এমন নয়। এটারও একটা আর্ট আছে। যারা আছে, তাদের শেখাও সহজ হবে। আমার মনে হয় ঘাসে উইকেটের চিন্তা বাদ দিয়ে এসব নিয়েই ভালোভাবে চিন্তার এখনই সময়।’
তামিম বোঝাতে চাইলেন, আসলে বাংলাদেশ যে উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলছে সে উইকেট সম্পর্কে তাদের ধারণা তত পরিষ্কার নয়। কারণ পানির মত সহজ। সারা বছর প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ ও বিসিএলে এমন উইকেটে খেলা হয় না। সেগুলো হয় ফ্ল্যাট পিচে। না হয় ঘাসের উইকেটে; কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে স্পিন সহায়ক পিচে।’
যে পিচ সম্পর্কে স্বাগতিক দলের ক্রিকেটারদেরই ধারনা কম। টেস্ট দলের সহ অধিনায়কের এ উপলব্ধিটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আসলেই উইকেট নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে।
ঘরের মাঠে টেস্টে যে ধরনের পিচে খেলবে বাংলাদেশ, ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশেষ করে জাতীয় লিগ ও বিসিএলের মত দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে সেই ধরনের উইকেটে খেলার ব্যবস্থা করা উচিৎ। তাহলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় উইকেট এখনকার মত আনপ্রিডিক্টেবল, অপরিচিত আর দুর্বোধ্য মনে হবে না।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস