লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে?
দু’দলের লাইনআপ সম্পূর্ণ নতুন। যাদের আগে কখনই টেস্টে দেখা হয়নি। তাতে কি? দল তো আর নতুন নয়। লড়াইটা বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার।
ইতিহাস জানাচ্ছে এই দুই দল এর আগে চারবার টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই জিতেছে অজিরা। ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে শেষ সিরিজে ২-০ তে হারলেও ফতুল্লায় সমানতালে লড়েছিল হাবিবুল বাশারের দল; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
বাঁ-হাতি ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসের অনবদ্য শতরান (১৩৮) আর বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের (ম্যাচে ৯ উইকেট) দুর্দান্ত বোলিংয়ে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হলেও অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের বীরোচিত সেঞ্চুরিতে হারই সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের।
এবার আবার অস্ট্রেলিয়ার সামনে টাইগাররা। কি হবে? কেমন করবে মুশফিকের দল? হঠাৎ অজিদের ধবলধোলাই করার কথা শোনা যাচ্ছে। শুধু ভক্ত ও সমর্থকরা নন। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও অমন কথাই ভাবছেন।
দু’বছর আগে হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে টেস্টে হোয়ইটওয়াশের চিন্তাকে আকাশ-কুসুম কল্পনা মনে হতো; কিন্তু গত দুই বছরের টেস্ট রেকর্ড ঘাঁটলে তা মনে হবে না।
বরং নিকট অতীতের হিসেব কষলে অতিবড় সমালোচকও তাই বলবেন। গত বছর অক্টোবরে এই শেরে বাংলায় অ্যালিস্টার কুক, জো রুট, স্টোকস আর মইন আলির ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৮ রানের বড় জয়ের দেখা মিলেছে।
আর এই তো কয়েক মাস আগে কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪ উইকেটের অবিস্মরনীয় জয়ের আনন্দে মেতেছে মুশফিকের দল।
তারও আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খুলনায় তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের সংগ্রামী ব্যাটিংয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ড্র করার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের।
মোদ্দা কথা, এখন আর আগের মত টেস্টে ভাঙ্গা-চোরা ও দূর্বল দল নয় বাংলাদেশ। সে আলোকেই এবার অজিদের বিরুদ্ধে মুশফিকের দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন সমর্থকরা। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট বরাবর সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
কোচ হাথুরুসিংহে ও সাকিব আল হাসানের কণ্ঠে অজিদের ধবলধোলাই করার সংকল্প। এদিকে বাংলাদেশের ধবলধোলাই করার সে ইচ্ছেকে ‘গরিবের ঘোড়া রোগের’ মত মনে করছেন অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও।
আজ সংবাদ সন্মেলনে তিনি উল্টো জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ ১০০ টেস্টে জিতেছে মাত্র নয়টিতে। সেই দল আমাদের ২-০ তে হারাতে চায়! আমি এমন মন্তব্যে বিস্মিত। শেষ পর্যন্ত কাদের জয় হবে? তা সময়ই বলে দেবে।
তামিম-মুশফিক ও সাকিবের চওড়া ব্যাট আর সাকিব, মিরাজের স্পিন বোলিংই আশার প্রতীক বাংলাদেশের। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রথমবার টেস্ট খেলতে আসলেও স্টিভেন স্মিথ, ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, হ্যাজলউড ও নাথান লিওনরা কিন্তু এ বছর ফেব্রæয়ারী-মার্চে ভারতের মাটিতে চার টেস্টে সিরিজে দারুণ খেলেছেন।
স্মিথ ভারতের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ৮ ইনিংসে তিন শতক ও এক অর্ধশতকে ৪৯৯ রান করেছেন। সর্বোচ্চ ১৭৮। গড় ৬০.০০। অন্যদিকে অফ স্পিনার নাথান লিওন ৪ টেস্টে ১৯ উইকেট দখল করেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে যারা এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স করতে পারেন, তারা বাংলাদেশে এসে কিছুই করতে পারবেন না। বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পন করবেন- এমন ভাবা বোকামি।
কাজেই বাংলাদেশকে জিততে হলে সামর্থ্যরে সেরাটা খেলতে হবে। শুধু স্পিনারদের ওপর ভর করে জেতার আশা করলে হবে না। কারণ উইকেট যে শতভাগ স্পিন সহায়ক থাকবে- তাও নিশ্চিত নয়। কাজেই বাংলাদেশকে জিততে হলে ব্যাটিং এবং পেস ও স্পিন বোলিংয়ের সব ডিপার্টমেন্টে শতভাগ পারফরম করতে হবে।
আশার কথা, অধিনায়ক মুশফিক নিজ দলের ব্যাটিং ও বোলিং সামর্থ্যরে দিকেই তাকিয়ে। তার কথা, উইকেট বা কন্ডিশন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমাদের নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যরে কথা ভাবতে হবে। আমাদের সামর্থ্যরে শতভাগ ঢেলে দিতে হবে। সময়মত সামর্থ্যরে প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’
এআরবি/আইএইচএস