একটা ম্যাচ উইনিং স্পেল করতে চান তাসকিন
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল এখন বাংলাদেশে। ২৭ আগস্ট মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। সেই ম্যাচের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে চলেছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে টানা অনুশীলনের মধ্যে রয়েছেন মুশফিক রহীম অ্যান্ড কোং। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটাররাও আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন আহমেদ তো বলে দিলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি উইনিং স্পেল করতে চান। যেটা দলকে জয়ের রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে।
নিজেদের পেস শক্তিকে কোনোভাবেই অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে পিছিয়ে রাখতে নারাজ তাসকিন। তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা ভালো। তবে বাংলাদেশের পেসাররাও অনেক ভালো। তাসকিন বলেন, ‘ওদের পেসাররা অবশ্যই ভালো। তবে আমাদেরকেও ফেলে দেয়ার মতো নয়। আমাদের পেসাররা অনেক বড় ম্যাচ জিতিয়েছে। এই সিরিজেও আমরা ভালো কিছু করতে পারি। সে রকম বিশ্বাস আমাদের আছে।’
মোস্তাফিজের কাছে তাসকিনেরও অনেক প্রত্যাশা। তিনি আশা করেন কাটার মাস্টার অফ ফর্ম কাটিয়ে উঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই চেনা ছন্দে ফিরবেন। তাসকিন বলেন, ‘মোস্তাফিজের কাছে সব সময় আমাদের আশা বেশি থাকে। আল্লাহর রহমতে সে আশা পূরণও করে। হয়তো শেষ কয়েকটা ম্যাচে ভালো হয়নি। এটা কিন্তু বিশ্বের সেরা বোলারদের ক্ষেত্রেও হয়। দুই একটা ম্যাচ খারাপ করে ফেলে তারা। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। আশা করি সে কামব্যাক করবে।’
নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়ানদের চেয়ে উইকেট তাসকিনরাই বেশি চেনেন। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে অস্ট্রেলিয়ার বিক্ষে ভালো কিছু করার। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। ওদের চেয়ে আমরা উইকেট ভালো বুঝি। কারণ সব কিছু আমাদের চেনা আছে। আশা করছি সিরিজে আমরা ভালো কিছু করবো।’
তাসকিনের টেস্ট ক্যারিয়ার মাত্র চার ম্যাচের। এই চার ম্যাচেই তিনি বুঝে গেছেন টেস্ট অনেক কঠিন একটি ফরম্যাট। এ সম্পর্কেই তাসকিন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমি বেশি টেস্ট খেলিনি। চারটা ম্যাচ খেলে আমার মনে হয়েছে এই ফরম্যাট অনেক কঠিন। আগে তো শুধু্ ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলতাম। এখন টেস্টও খেলছি। টেস্টে প্ল্যান অনুযায়ী খেলতে হয়। চেঞ্জ অব পেস দরকার আছে। আশা করি পরিস্থিতি অনুসারে আমরা খেলতে পারবো।’
প্রস্তুতিতে কি কি বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছেন তাসকিন? সেটাও জানালেন অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে। তিনি বলেন, ‘ওদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে। তবে আমরা আগের চেয়ে ভালো। অনুশীলন করতে করতে আমরা আগের চেয়ে ভালো হয়ে উঠেছি। রিভার্স সুইং বলেন বা সুইং বলেন, সব কিছু নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। আশা করছি আগে যা করতে পারিনি, এখন আমরা তা পারবো।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলে থাকাটাকে নিজের ভাগ্য বলে মানেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘এখন আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ অনেক ভালো পারফরমার আছে; কিন্তু টেস্ট স্কোয়াডে থাকার মতো ব্যাপারটা শান্তি পাওয়ার মতো। আমি নিজেকে ভাগ্যমান মনে করি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দলে থাকতে পেরে আনন্দিত এবং ভাগ্যমান মনে করছি নিজেকে।’
স্মিথ-ওয়ার্নারের উইকেটই নিতে চান তাসকিন। এছাড়া প্রতিটি উইকেটেরই মূল্য আছে তার কাছে। এ কারণে, দলের জয়ের লক্ষ্যে একটা ম্যাচ উইনিং স্পেল করতে চান বাংলাদেশের এই পেসার। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটের প্রত্যেকটি উইকেটই কাউন্টেবল। তাদের টপঅর্ডারে যারা আছে, সবাই খুব ভালো ফর্মে রয়েছে। অভিজ্ঞরা তো আছেই। নতুনরাও ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। আমার স্বপ্নের উইকেট ওয়ার্নার-স্মিথ। নতুনরাও ভালো করছে। আমি সুযোগ পেলে একটা ম্যাচ উইনিং স্পেল করতে চাই।’
উইনিং স্পেল মানে পাঁচ-সাত উইকেট নিয়ে ধ্বসে দেয়া নয়। সময় অনুযায়ী ভালো বল করাকেই বোঝালেন তাসকিন। পরের প্রশ্নেই সেটা স্পষ্ট করলেন, ‘উইনিং স্পেল মানে পাঁচ-সাত উইকেট নেয়া নয়। বরং ভালো কিছু ওভার করা। দেখা গেলো স্পিনাররা পাঁচ-সাতটা উইকেট নিয়ে নিলো। মাঝখানে দুইটা উইকেট নিয়ে নিলাম আমি। যা দলকে উপকার এনে দেবে। এমন কিছুই করতে চাই। পুরোনো বলে রিভার্স সুইংটা করতে চাই। এসব নিয়ে কাজ করছি। আশা করি ভবিষ্যতে অনেক কাজে দেবে।’
নিজের ফিটনেস সম্পর্কে তাসকিন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ফিটনসে আগের চেয়ে অনেক ভালো। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে, দুই বছরে বড় কোনো ইনজুরি হয়নি। টেস্ট সেশন সেশন ভাগ তো, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে দেখা যায় একটা বা দুইটা স্পেলেই ম্যাচ শেষ; কিন্তু সাত আটটা স্পেল থাকে টেস্টে। জিনিসটা এতো সহজ নয়। নিউজিল্যান্ডে বোলিং করে যে আনন্দ পেয়েছি, তা শ্রীলঙ্কায় পাইনি। আর বাংলাদেশে আমি এখনো টেস্ট খেলিনি। আমার মনে হয় অনেক ধৈর্য ও দক্ষতার ব্যাপার। আশা করছি সামনে ভালো কিছু হবে- ইনশাল্লাহ।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়কেই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন তাসকিনরা। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে, দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট, এটা আনন্দের ব্যাপার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচটা জিতেছি, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আত্মবিশ্বাসটা সেখান থেকে বেড়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের হারিয়েছি। এ কারণেই বিশ্বাসটা বেশি। চার পাঁচ বছর আগে, যখন টিভিতে খেলা দেখতাম, তখনকার চেয়ে বিশ্বাসটা এখন অনেক বেশি। লড়াই করার এবং জেতার।’
মুমিনুল দলে ফেরায় অনেক আনন্দিত তাসকিন। তাকে পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন তারা। তিনি বলেন, ‘মুমিনুল ভাইয়ের ফিরে আসাটা আনন্দের ব্যাপার। আবার মোসাদ্দেকের না থাকাটা দুঃখজনক। চোখের অসুস্থতার কারণে সে খেলতে পারলো না। অর্থাৎ আনন্দ যেমন হচ্ছে, আবার খারাপও লাগছে। মুমিনুল ভাইকে স্কোয়াডে ফিরতে দেখে আগের মতোই লেগেছে। তিনি তো পরিবারেরই অংশ।’
আইএইচএস/আরআইপি