মুমিনুল পরিস্থিতির শিকার : পাপন
প্রথম টেস্টের দল ঘোষণার দু’দিন আগেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, বাদ পড়তে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মুমিনুল হক। মাহমুদউল্লাহর টেস্টে ফর্ম নেই- এ যুক্তি না হয় মানা যায়; কিন্তু মুমিনুলকে কেন বাদ দেয়া? ঘরের মাঠে তার পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয়। ২২ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪টি সেঞ্চুরি, ১১টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় তার। এর চেয়েও বগ কথা, গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচেও তো অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন মুমিনুল। তবুও কেন তাকে বাদ দেয়া হলো?
দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তুমুল প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে। পাশে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কিংবা অপর নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকে বসিয়েও খুব বেশি নিস্তার পাননি প্রশান নির্বাচক। কোচ চন্ডিকা হাথুরসিংহে এক ধরনের ঔদ্ধত্যের সঙ্গেই বলে দিলেন, ‘মুমিনুল মানেই তো আর বাংলাদেশ নয়।’
মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পর বিষয়টির গুরুত্ব হয়তো বুঝতে পেরেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। তিনি আজ দুপুরে হঠাৎ বিসিবিতে এসে বৈঠক করলেন প্রধান নির্বাচক এবং প্রধান কোচের সঙ্গে। দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পর বিসিবি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে সাংবাদিক লাউঞ্জে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মিডিয়ার নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন পাপন।
মুমিনুলের বাদ পড়াকে বিসিবি বিগ বসও বললেন, দুঃখজনক। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, মুমিনুল পরিস্থিতির শিকার। বিসিবি প্রধানের মুখ থেকে যখন বের হলো, মুমিনুল পরিস্থিতির শিকার, তখন প্রশ্ন ওঠেই- দলের মধ্যে তাহলে এমন একজন সেরা ব্যাটসম্যান কী ধরনের পরিস্থিতির শিকার?
যদিও পরে বিষয়টা ক্লিয়ার করেছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচক ও কোচদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি এখন আর পাঁচ দিন খেলা কিংবা ড্র করা নয়, আমরা জিততে চাই। সে লক্ষ্যেই দল সাজানো হয়েছে। মুমিনুল হয়তো সে কারণেই বাদ পড়েছে। তবে, এটা হয়তো এক সিরিজ কিংবা এক টেস্টের জন্য। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’
প্রথম টেস্টের দল ঘোষণার সময় মুমিনুলকে বাদ দেয়াটাকে দুঃখজনেই বললেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘প্রথম টেস্টের দলে মুমিনুল না থাকাটা দুঃখজনক। মুমিনুল আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসমস্যান, এ নিয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই। ওকে যখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল তখন আমরা চেয়েছিলাম, ও টেস্টে আরও বেশি মনোযোগ দিক। ওকে আমরা কিন্তু টেস্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখছি। ও যদি টেস্ট দলে না থাকে তাহলে তো খারাপ লাগবেই।’
টেস্ট দল থেকে মুমিনুল বাদ পড়ার মত কোনো খেলোয়াড়ই হতে পারে না বলে বিশ্বাস করেন বিসিবি সভাপতিও। তিনি বলেন, ‘মুমিনুল বাদ পড়ার মতো কোনো খেলোয়াড় হতেই পারে না। এখনও আমি মনে করি, টেস্টে ওর সামনে বিশাল ক্যারিয়ার রয়েছে। আর সামনেও ও খুব ভালো খেলবে।’
মুমিনুলকে যথাযথ মূল্যায়ন যেন করা হয় সেটা নিশ্চিত করার কথাও বললেন বিসিবি বিগ বস। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, মুমিনুলকে নিয়ে কারোর চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ, ও দেশের সম্পদ। ওকে যথাযথ মূল্যায়ন যেন করা হয়, যথাযথ সুযোগ যেন দেওয়া হয় তা আমরা নিশ্চিত করবো।’
প্রধান নির্বাচক এবং কোচকে বিসিবি সভাপতি জিজ্ঞাসা করেছেন মুমিনুলের বাদ পড়ার কারণ। এরপরই তিনি মিডিয়াকে জানালেন মুমিনুল পরিস্থিতির শিকার। তিনি বলেন, ‘মুমিনুল বাদ পড়ার কোনো কারণ নাই। ও কেন বাদ পড়লো সে ব্যাপারেও কথা বলেছি। ও আসলে এই সিরিজের জন্য পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছে, বা এই ম্যাচের জন্য। মুমিনুলের সঙ্গে কোচ কথা বলবে, আমি কথা বলবো। ওর মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই।
তবুও বিসিবি সভাপতি মনে করেন, ১৪জন নয় মুমিনুলকে রেখে ১৫ জনের স্কোয়াড করা যেতো। এরপর বিবেচনা করা যেতো তাকে একাদশে রাখা হবে কি হবে না। ১৫ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করলে কোনো দোষ দেখছেন না নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, ‘কোচ-নির্বাচকের কাছ থেকে পরিকল্পনা শোনার পরও বুঝতে পেরেছি তাকে বাদ দেয়ার কারণ। দলে থাকলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী সেরা একাদশে সে খেলতো কি না জানি না। তবে স্কোয়াডে থাকতে কোনো সমস্যা দেখি না। উদাহরণ হিসেবে বলছি, ১৪ জনের জায়গায় ১৫ জন করে দিলেই তো হতো। মুমিনুলের মতো খেলোয়াড় স্কোয়াডে নেই দেখতেও তো যে কোনো লোকের খারপ লাগবে। সব ক্রিকেটপ্রেমীদের খারাপ লেগেছে। আমরা এই বিতর্কে যাব কেন। ১৫ জনের দল করে মুমিনুলকে রেখে দিতাম!’
এরপরই ঘোষণাটা দিলেন বিসিবি সভাপতি। জানিয়ে দিলেন ১৪ জনের দলেই আছেন মুমিনুল। তবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের পরিবর্তে। তিনি বলেন, ‘মুমিনুল আসছে, সৈকত (মোসাদ্দেক) খেলছে না- দুটাই সত্যি। সৈকতের চোখের সমস্যা আছে। এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। এমন একটা সিরিজে এমন ঝুঁকি নিয়ে একজন খেলোয়াড়কে রাখবো কেন। ওর জায়গায় মুমিনুলকে যোগ করে দিচ্ছি আমরা।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি