প্রথম টেস্ট স্কোয়াডে থাকবেন কোন ১৪জন?
খেলাটা ঘরের মাঠে। অবশ্যই কন্ডিশনের সর্বোচ্চ ফায়দা নিতে চাইবে বাংলাদেশ। যে দলে এক ঝাঁক বিশ্ব কাঁপানো ফাস্ট বোলার, আর দ্রুত গতির ও স্পোর্টিং পিচে যাদের ব্যাট খোলা তরবারির মতো বিদ্যুৎ খেলে- সেই অসিদের বিপক্ষে নিশ্চয়ই পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে চাইবে না মুশফিকুর রহীমের দল। নিজ মাটিতে কেন-ই বা অতো বড় ঝুঁকি নিতে যাবে টিম ম্যানেজমেন্ট?
এমনকি স্পোর্টিং উইকেট হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাতেও থাকবে বড় ধরনের ঝুঁকি। স্মিথ বাহিনীকে আটকাতে স্লো ও লো ট্র্যাকই সর্বোত্তম। ইংলিশদের বিপক্ষে গত অক্টোবরের অবিস্মরণীয় জয় যে স্লো ও লো ট্র্যাকে- হয়তো অমন পিচেই খেলতে চাইবে মুশফিকের দল।
তাই চার পেসার ফর্মুলা বাদ দিয়ে তিন পেসার দলে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচক জানিয়ে দিয়েছেন তিন স্পিনার ফর্মুলাও অনুসরণ করা হবে। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে তাইজুলকে ভাবা হয় অটোমেটিক চয়েজ। সাকলাইন সজিব চট্টগ্রামে প্র্যাকটিস ম্যাচে ভালো বল করলেও অতীত বিবেচনায় বাঁ-হাতি তাইজুলের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাই খুব বেশি।
তাহলে কী দাড়াল? সহজ ব্যাখ্যা- অধিনায়ক মুশফিক নিজে কিপার কাম ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে বাড়তি কিপার হিসেবে যাকে নেয়া হবে তিনিও হবেন একজন ব্যাটসম্যান। তার মানে, দুই কিপার দুই ব্যাটসম্যানও। তাদের সঙ্গে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের কোটায় অন্তর্ভুক্ত হবেন আরও ছয়জন।
এখন দেখার বিষয়, অধিনায়ক মুশফিকের সাথে বিকল্প কিপারের কোটায় কে জায়গা পান। কারণ এ মুহূর্তে ক্যাম্পে অধিনায়ক ও কিপার মুশফিকের সঙ্গে বাড়তি কিপার হিসেবে আছেন আরও দুজন; লিটন দাস আর নুরুল হাসান সোহান।
হয়তো প্রশ্ন উঠবে, কেন এনামুল হক বিজয়ও তো ব্যাটসম্যান কাম কিপার। তিনিও ২৯ জনের প্রাথমিক ক্যাম্পে আছেন। তাহলে এনামুল হক বিজয় নন কেন? এমন প্রশ্নকারীদের জ্ঞাতার্থে বলা, এনামুল হক বিজয়কে চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানো হয়নি, তাই বোঝাই যায় তিনি বিবেচনার বাইরে।
তাই লিটন দাস আর নুরুল হাসান সোহানের যে কেউ ব্যাকআপ কিপার হিসেবে দলভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে লিটন দাসের সম্ভাবনা বেশি। কারণ গত মার্চে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজে বিকল্প কিপার হিসেবে ১৪ জনের দলে ছিলেন লিটন দাস।
এর মধ্যে যেহেতু আর কোনো টেস্ট সিরিজ হয়নি, তাই তার বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। যদিও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে, তারপরও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট তো। তার চেয়ে বড় কথা, প্রিমিয়ার লিগ হলো ঘরের ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসর।
গত লিগে লিটন দাসের ব্যাট থেকে রানের নহর বয়েছে। দুই শতরান ও পাঁচ অর্ধশতকসহ সর্বাধিক ৭৫১ রানের মালিক লিটন। কাজেই ধরে নেয়া যায়, তিনিই বিকল্প কিপার হিসেবে দলে থাকবেন। তাহলে আটজনের ব্যাটিং লাইন-আপটি কী দাঁড়াচ্ছে?
খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? একটু মিলিয়ে নিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত মার্চে শততম টেস্টে যারা ছিলেন, তারাই হয়তো থাকবেন। তামিম ইকবাল, সহ-অধিনায়ক। এক নম্বর ওপেনার। অটোমেটিক চয়েজ। সঙ্গে কে? ইমরুল কায়েস নাকি সৌম্য সরকার?
এবারের প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে বিবেচনায় আনলে দুজনার কারোরই সাম্প্রতিক ফর্ম তেমন ভালো না। তবে মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে এ বাঁহাতির। তাই তাকে বাদ দেয়া অনেক কঠিন। অনেক ভেবে-চিন্তে শেষ পর্যন্ত হয়তো সৌম্য সরকারকেই বেছে নেবেন নির্বাচকরা।
শততম টেস্টে ১১ জনে জায়গা পাননি, তাতে কি? মুমিনুল হকের ১৪ জনের টেস্ট দলে থাকা নিয়ে কোনোই সংশয় নেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন দিনের ম্যাচে ৭২ রানের পরিপাটি ও দৃষ্টিনন্দন ইনিংস আরও একবার প্রমাণ করল মুমিনুল দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে আগেই মতোই কার্যকর।
এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান আসবেন হেঁটে হেঁটে। কলম্বোয় শতমত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও বাদ দেয়ার প্রশ্ন আসে না। বিকল্প কিপার লিটন দাসও স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান কোটার একজন।
এখন দেখা যাচ্ছে ১৪ জনের কোটা পূর্ণ করতে হলে এর বাইরে আরও দুজন ব্যাটসম্যানের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। সেই জায়গা পূরণের সম্ভাব্য দাবিদার চারজন; ইমরুল, সাব্বির, মাহমুদউল্লাহ ও নাসির। এদের যেকোনো দুজনকে বেছে নেবেন নির্বাচকরা।
শততম টেস্টে নাটকীয়ভাবে দল থেকে বাদ পড়লেও তারপর ওয়ানডে- টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাট হাতে নজর কেড়ে নিজের মেধা-প্রজ্ঞা মেলে ধরেন মাহমুদউল্লাহ। তাই ঘরের মাঠে ১৪ জনের দলে ব্যাটসম্যান কোটায় এবার তাকে বাইরে রাখা কঠিন।
মাহমুদউল্লাহর দলভুক্তি ঘটলেও আর একজনকে নিতে হবে। সেই পজিসনে টপ-অর্ডার ইমরুলের এগিয়ে থাকার কথা। কারণ স্কোয়াডে বিকল্প ওপেনার হিসেবে তিনিই আছেন। হিসেব অনুযায়ী দলে একজন বাড়তি ওপেনার থাকার কথা। সে আলোকে ইমরুলই হতে পারেন প্রথম পছন্দ। কিন্তু নিকট অতীতে তার ফর্ম কোনো ফরম্যাটেই ভালো না। তাই বাঁহাতি ইমরুলকে নিতে গিয়েও দ্বিধায় নির্বাচকরা। চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি ইমরুল। তার চেয়ে দুই মিডল অর্ডার সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেনের একজন ঢুকে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে শেষ মুহূর্তে জায়গা পেয়েও দুই ইনিংসে ভালো ব্যাটিং (৪২+৪১) করেছিলেন সাব্বির রহমান। নির্বাচকরা নিশ্চয়ই সে পারফম্যান্স বিবেচনায় আনবেন। সে আলোকে নাসিরের জায়গা পাওয়া কঠিন।
ওদিকে পেসার কোটায় তিনজন। সবার আগে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। সুস্থ মোস্তাফিজ যে কোনো ফরম্যাটে টিম বাংলাদেশের প্রধান বোলিং অস্ত্র। তার সঙ্গী হবেন কারা? রুবেল, তাসকিন, শফিউল, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও আল আমিনের যেকোনো দুজন।
খালি চোখে রুবেল ও তাসকিনের সম্ভাবনা বেশি মনে হলেও খুব সম্ভাবত দুজনার একজন বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তাদের একজনের জায়গায় শফিউল ইসলামের দলে জায়গা একরকম নিশ্চিত। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সুইং বোলিংয়ের অনুপম প্রদর্শনী ঘটানো শফিউলের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি কোচ ও নির্বাচকরা।
তাই শফিউলই হবেন সেকেন্ড চয়েজ। সঙ্গে রুবেল-তাসকিনের একজন।
এবার ১৪ জন মিলিয়ে নিন :
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান , মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম ও রুবেল হোসেন/তাসকিন আহমেদ।
এআরবি/এনইউ/পিআর