চট্টগ্রামে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে মুশফিক-তামিমদের!
চট্টগ্রামে কেমন হলো টাইগারদের ম্যাচ প্র্যাকটিস? প্রথমে তিন সপ্তাহের শারীরিক ক্যাম্প, এরপর এক সপ্তাহেরর ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন। সব মিলিয়ে প্রায় এক মাসের ট্রেনিং শেষে বন্দর নগরীতে গিয়ে এক সপ্তাহের আবাসিক অনুশীলন।
যার মধ্যে ছিল তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচও। সেই ম্যাচটি কেমন হলো? যাদের প্রস্তুতির জন্য ওই ম্যাচের আয়োজন- তারা কেমন করেছেন? সামগ্রিকভাবে মুশফিক, তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মমিনুল, তাসকিন, রুবেল আর শফিউলদের পারফরমেন্স কেমন ছিল? নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট কি এই পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট?
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের ঢাকার মাটিতে পা রাখার সপ্তাহেরও কম সময় আগে এমনও বিস্তর প্রশ্ন এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে। ক্রিকেটারদের চট্টগ্রাম পর্বের প্রস্তুতিতে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু সন্তুষ্ট।
তার মূল্যায়ন, ‘সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিলাম, তা সফল হয়েছে। সব মিলিয়ে ভাল প্র্যাকটিস হয়েছে।’
ঢাকার তুলনায় বন্দর নগরীতে বৃষ্টি তুলনামূলক কম ছিল। তারপরও তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছে। প্রায় দেড় দিন খেলাই হয়নি। তিন দিনের ম্যাচের শেষ দিন পুরো ধুয়ে-মুছে গেছে বৃষ্টিতে।
প্রথম দিনও প্রথম সেশন পুরো খেলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। তারওপর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক শততম টেস্টের তিনজন সফল পারফরমার- সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছিলেন না এ ম্যাচে।
নিজ মাটিতে যে দুই বোলারের স্পিন কার্যকরিতার ওপর নির্ভর করছে দলের সাফল্য-ব্যর্থতা, সেই সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ দেশেই নেই। ক্যারিবিয়ান সুপার লিগ খেলতে এখন রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
চোখে ময়লা পড়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পাঁচ দিনের বিশ্রামে থাকায় চট্টগ্রাম যাওয়া হয়নি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শততম টেস্টে ব্যাট হাতে নজরকাড়া পারফরমার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের।
ব্যাটিংয়ের অন্যতম নির্ভরতা তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম কেউই সে অর্থে রান পাননি এই প্রস্তুতি ম্যাচটিতে। নজর কাড়া পারফরমার মোটে দুজন- পেসার শফিউল ইসলাম আর বাঁ-হাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক।
যাদের একজনও কলম্বোয় লঙ্কানদের বিরুদ্ধে শততম টেস্টে ১১ জনের দলেই ছিলেন না। তাহলে খুব ভাল প্র্যাকটিস হয়েছে কিভাবে? দাবি করার যৌক্তিকতাই বা কি?
প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, আমাদের দেশে শ্রাবণ মাসে আউটডোর প্র্যাকটিস খুবই কঠিন। বৃষ্টি বড় বাধা। তারপরও চট্টগ্রামে ঢাকার তুলনায় বৃষ্টি কম। সেখানে যে অনুশীলন হয়েছে, সাথে প্রস্তুতি ম্যাচ হয়েছে- তাতে আমি সন্তুষ্ট। ওভারঅল অনুশীলন ভাল হয়েছে। তিন দিন খেলা না হলেও ক্রিকেটাররা দুই ইনিংস খেলতে পেরেছে, সেটাও কম নয়। ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর ’স্কিল’ সেশন করার পর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার ছিল ক্রিকেটারদের। দুই ইনিংস খেলতে পেরেছে, আমি তাতেই খুশি। বোলাররা অনেক্ষণ বল করতে পেরেছে। ব্যাটসম্যানরাও মোটামুটি সময় নিয়ে ব্যাট করেছে। তারপরও যা হয়েছে ভালই।’
ক্রিকেটারদের এমন পারফরমেন্সেও কি আপনি সন্তুষ্ট? মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘লিডিং ব্যাটসম্যানরা ভাল করেনি। সে অর্থে বিগ ইনিংস ছিল না কারোরই। তারপরও তারা কম-বেশি সবাই দুদিন মাঠে খেলার মধ্যে ছিল। মাঠে থাকারও একটা কার্যকরিতা আছে। এছাড়া প্রায় দুদিন খেলতে পেরেছে। সেটাও কাজে লাগবে।’
তা না হয় মানা গেল; কিন্তু প্র্যাকটিস ম্যাচের উইকেট কি ঠিক ছিল? দেশের মাটিতে মুশফিকের দল অজি বধে নিশ্চয়ই স্পিন সহায়ক স্লো ও লো ট্র্যাকে খেলতে নামবে। সেখানে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পেস সহায়ক পিচে খেলে কি লাভ হলো? ওই পিচে তো স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা ভাল করেছেন। শফিউলের বিষাক্ত সুইংয়ে ইমরুল, সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেটা প্রস্তুতিতে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে?
এমন প্রশ্নও উঠেছে চারিদিকে; কিন্তু প্রধান নির্বাচক সে প্রশ্নকে অবান্তর, অমূলক আখ্যা দিলেন। তার উল্টো প্রশ্ন, ফার্স্ট এবং বাউন্সি ট্র্যাক ছিল, কে বলছে? উইকেট ঠিকই ছিল। শফিউল সুইংয়ে উইকেট পেয়েছে। তার বল পিচ কওে লাফিয়েও ওঠেনি। কোন বিপজ্জনক বাউন্সও ছিল না। মোট কথা, বল তেমন আহামরি উড়ে আসেনি।’
মিনহাজুল পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘শফিউল ও অন্য পেসারদের কার কয়টা বল ব্যাটসম্যানদের মুখ সমান উচ্চতায় লাফিয়ে উঠেছে? শফিউলের বলে যারা আউট হয়েছেন, তার বেশির ভাগই সুইংয়ে পরাস্ত হয়েছে কিপার কিংবা স্লিপ ফিল্ডারের হাতে। আর একাধিক ব্যাটসম্যান বোল্ড হয়েছে।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি