গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেহাল দশা
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বেহাল দশায় রয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের পরিধি কমিয়ে যেনতেনভাবে কাজ শেষ করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার বিভাগ। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে অনুমোদিত এ প্রকল্পটির মেয়াদ ইতোমধ্যে একবার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরবর্তী তিন বছরে ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৪৪ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি দ্বিতীয় বার সংশোধন করে কাজের পরিধি কমিয়ে নাম বরাদ্দ ছেঁটে ফেলার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
জানা গেছে, দেশের ১২টি জেলার ২৫টি উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ২০১২ সালে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১৫ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৫২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কিন্তু কাজের অগ্রগতি কম থাকায় ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয় ১০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এতে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৩১ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়। কিন্তু এতে কাজের গতি বাড়েনি। এখন বরাদ্দ থেকে মাত্র ১৬ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে মূল কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোর আবেদনও করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সরকার প্রান্তিক উন্নয়নের মহা পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বিধায় আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকার বিভাগ এই ধরনের প্রস্তাব পাঠিয়ে থাকলে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। গুণগত উন্নয়নে কোনো বিষয় ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি জানান।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের সকল স্কিম প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত। এরপরও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের কাজের পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া উচিত। এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বিধায় এ নিয়ে কোনভাবেই হেলাফেলা করা উচিত না। সরকার অর্থ দেয় ঠিকই কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া হতাশাব্যাঞ্জক। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মানহীন বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় কাম্য নয়। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কমিশন বলছে, প্রতি কিলোমিটার উপেজেলা সড়কে উন্নয়ন ব্যয় ধরা ছিল ৭২ লাখ টাকা, আর ইউনিয়ন সড়কে ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। কিন্তু উপজেলা ও ইউনিয়নে দুই লেন সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যয় হয়েছে গড়ে প্রায় ১ কোটি টাকা। অথচ মাটি দ্বারা রাস্তার সোল্ডার উচু ও বাঁধ প্রশস্তকরণ দুটি আলাদা হিসাব দেখানো হয়েছে। কমিশন বলছে, সড়ক প্রশস্তকরণের ব্যয় এতো বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। ফলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানো ও পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে কৃষক। কিন্তু প্রস্তাবনায় দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলায় এসব সুবিধা নির্ধারিত সময়ে পাবে না স্থানীয়রা।
এমএ/এএইচ/পিআর