বৈশাখ সেথায় ষোল কলায় পূর্ণ
কেউ মাটির পাত্রে তুলির আঁচড় দিচ্ছেন। কেউবা থরে থরে সাজ্জাচ্ছেন। ফুটপাত ঘেষে হরেক রকম পণ্য তখনও এলোমেলো পড়ে আছে। কেউ আবার রং করা পণ্যসামগ্রী রোদে শুকাচ্ছেন। এমন ব্যস্ততার মধ্যেই কেউ আবার দাম হাকিয়ে বিক্রিয়ও করছেন। মঙ্গলবারের তীব্র দাবদাহের দুপুর বেলা। অমন কাঠফাটা রোদেও ওদের বিন্দুমাত্র ফুসরত নেই অবসরের।
রাজধানীর দোয়েল চত্বর এখন রীতিমত কুমারপাড়া। দিন নয়, এখন তাদের ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা বর্ষবরণের। বছরের এই সময়টির জন্যই প্রহর গোনা এখানকার মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ীদের।
শিশু একাডেমির পাশেই ফুটপাত ঘেষে মাটির তৈরি হস্তশিল্পের প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে এখানে। শুধু রাজধানীবাসীর কাছে নয়, দেশের অন্যপ্রান্তের মানুষেরাও খবর রাখেন এখানকার পণ্যের। মনকাড়া নকশায় এখানে যেসব হস্তশিল্প মিলবে, তা দেশের আর কোথাও মিলবে না বলেই দোকানদের দাবি।
নানা রকম হস্তশিল্প মিললেও মাটির তৈরি পণ্যের প্রাধান্যই লক্ষণীয়। দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে মাটির সমস্ত পণ্যের সমাহার রয়েছে এখানে। মাটির এসব পণ্য বরিশাল, পটুয়াখালির কুমাররা সাধারণত তৈরি করে থাকেন বলে জানালেন দোকানিরা। ফরমায়েশ নিয়ে বিশেষ নকশায় পটুয়াখালির কুমারদের মাটির পাত্র তৈরিতে কোনো জুড়ি নেই।
তবে মাটির তৈরি এসব পণ্যের সঙ্গে বাঁশ, বেত, পাট, কাপড়ের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার বলে পরিচিত পেয়েছে এসব দোকান। পাট বা কাপড়ের তৈরি অধিকাংশ পণ্যই আসে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ থেকে। অন্যদিকে বাঁশ এবং কাঠের তৈরি পণ্যসমূহ আসে কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ অঞ্চল থেকে।
বৈশাখের সমস্ত আয়োজনই মিলছে দোয়েল চত্বরের এই হস্তশিল্প দোকানগুলোতে। ঘরের ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে বর্ষবরণে বৈরাগী বেশের পুথির মালাও মিলবে এখানে। খেলনা সদৃশ ডোল, তবলা, একতারা, দোতরা, বাঁশির বিশাল সংগ্রহ দোকানগুলোয়।
আছে নকশা করা কাপড়ের ফুল। চিনি-গুড়ের তৈরি পণ্যেরও কোনো কমতি নেই। সারা বছর বেচাকেনা হলেও বৈশাখ উপলক্ষে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষণীয় এসব দোকানে।
কথা হয় আলিফ হ্যান্ডিক্রাফটস্-এর মালিক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। প্রায় দুই দশক ধরে হস্তশিল্পের ব্যবসা করছেন তিনি। দিনে দিনে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষিতজনরাই এখন এসব পণ্য ক্রয়ে বেশি আগ্রহী। বর্ষবরণই আমাদের ব্যবসার মূল মৌসুম। এই দিনটির অপেক্ষা করেই আমাদের শত আয়োজন।
শরিফুলের ছোট ভাই শহিদুলও হস্তশিল্পের দোকানের মালিক। তিনি বলেন, আমাদের এখানে শতভাগ বাঙালি সংস্কৃতির পণ্য পাবেন। তবে সময় এবং বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে পণ্যের ধরন এবং নকশার পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
পাশেই ভ্যান গাড়ির ওপর বাতসা, গজাসহ (খুড়মা) নানা দেশীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, অনেকেই বৈশাখের প্রথম দিন কুলা, চালুনি বা ডালায় করে আত্মীয় বা প্রিয়জনের কাছে উপহার পাঠায়। উপহারের অন্যতম উপাদান আমাদের এসব হাতে তৈরি মিষ্টান্ন পণ্য। বৈশাখ উপলক্ষে ছয় বছর থেকে এখানে এসে ব্যবসা করছি। এর মধ্য দিয়েই বর্ষবরণ বিশেষভাবে উপভোগ করে চলছি।
এএসএস/একে/এবিএস