কৃত্রিম সংকটে ইলিশের দাম দ্বিগুণ
আর মাত্র একদিন, এরপরেই বাঙালির প্রাণের উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’। ঐতিহ্যের এ আনন্দে মেতে উঠবে গোটা জাতি। বর্ষবরণে বৈশাখী পোশাকের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ না হলেই যেন নয়। বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশ চাই-ই-চাই। আর এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে আকাশচুম্বী মুনাফা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ইলিশের দামও ততই বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈশাখে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আসছে ইলিশ। এছাড়াও হিমাগারে সংরক্ষিত রয়েছে প্রচুর ইলিশ। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে। এরপরও রাজধানীর পাইকারি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পাইকারি মাছের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ ভর্তি বস্তা ও কাটুন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা দু-একটি বস্তা বা কাটুন খুলছে আর ডাক হাঁকছেন। ইলিশের কাটুন যেখানে খোলা হচ্ছে সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতারা।
আড়তে কথা হয় পাইকারি বিক্রেতা গদা বাবুর সঙ্গে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ যত সামনে আসছে ইলিশের দাম ততই বাড়ছে। আগামী দু’দিন আরো বাড়বে। আজকের (সোমবার) বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। দেড় কেজির বেশি ওজনের প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়।
ফটো গ্যালারী দেখুন : ইলিশের বাজারে বৈশাখী উত্তাপ...
চাহিদার তুলোনায় ইলিশ বাজারে পর্যপ্ত আছে কি না জানতে চাইলে গদা বাবু বলেন, বাজারে প্রচুর ইলিশ আসছে। এছাড়াও হিমাগারে পর্যাপ্ত ইলিশ সংরক্ষিত রয়েছে। আমারই ১ কোটি টাকার ইলিশ হিমাগারে রয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না। কারণ, এখন মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই বাজারে ক্রেতা কম, বিক্রি হচ্ছে না।
আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, দেড় কেজির বেশি ওজনের এক হালি ইলিশের দাম হাঁকছেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের (৬০০-৭০০ গ্রাম) হালিপ্রতি ইলিশের দাম হাঁকছেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। ছোট আকারের (৩০০-৪০০ গ্রাম) এক হালি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৬৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। আর একবারে ছোট আকারের প্রতিহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ।
যাত্রাবাড়ীর আড়তের আরেক বিক্রেতা রাসেল জানান, গত কয়েক দিন ধরে ইলিশের দাম একটু বাড়তি। গত সপ্তাহে ৩৫০ গ্রামের প্রতিহালি ইলিশ যেখানে ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি আজকের বাজারে তা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। কাটুন ভর্তি ইলিশ আসে। প্রতি কাটুনে ২৫ থেকে ২৮ পিছ মাছ থাকে। ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় কিনতে হয়। ৮/১০ দিন আগে এক কাটুনের দাম ছিল ২৬শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।
পাইকারি বাজারে ইলিশ কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, পাইকারি বাজারে ইলিশের দাম বেশি। তাই আমাদের খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে পাইকাররা। শুনেছি হিমাগারে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। কিন্তু বাজারে তা আস্তে আস্তে উঠাচ্ছে আর দাম বাড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে যে ইলিশের হালি ১৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল তা এখন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
বৈশাখের উৎসবে চাই ইলিশ। তাই কম দামে ইলিশ কিনতে যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়তে এসেছেন রাজধানীর মানিক নগরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে এসেছি কিছুটা কম দামে ইলিশ কিনব বলে। কিন্তু এখানেও বেশি দাম। ৮০০ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ কিনলাম ৪২শ’ টাকা দিয়ে।
তিনি আরো বলেন, এখানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিজেরাই বেশি দাম হাঁকছেন। উৎসবকে জিম্মি করে তারা ইলিশের দাম বাড়াচ্ছেন। কিছুই করার নেই, কেউ দেখারও নেই।
এসআই/আরএস/এএইচ/এমএস