পিলখানা হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে
বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলা (বিডিআর) হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের উপর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি চলছে। ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। আসামিপক্ষের শুনানি শেষে কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা উপস্থাপন করবেন দুই পক্ষ। এরপর আসবে রায় ঘোষণার দিন।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি এ আপিল আবেদনের উপর শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
গতবছর ৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি তিন সদস্যের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন। বেঞ্চের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় তার পরিবর্তে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে দায়িত্ব দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়।
শুনানিতে প্রথমে রাষ্টপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১৫২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে মামলার বিষয়বস্তুর উপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম, শামীম সরদারসহ অপরাপর আইনজীবীরা বিষয় বস্তুর উপর যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে শুনানি। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামির মধ্যে ১১৪ জনের ক্ষেত্রে মামলার বিষয়বস্তুর উপর আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বাকীদের ক্ষেত্রে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হতে পারে। এরপর আইনগত বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি উভয়পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন হবে। সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এ মামলায় রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ মামলায় যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলছে তাতে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে বিচার শেষ হতে পারে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একমত হয়ে বলছেন, যেভাবে বিরতিহীনভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলছে তাতে মে মাসের আগে এর বিচার শেষ হবে না। তবে সবমিলে আরো ২/৩ মাস লাগতে পারে।
আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা প্রথমে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করছি। এটা শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ আইনগত বিষয়ে যুক্তি দেখাবেন। তারপর আসামিপক্ষ আপিলের বিষয়ে খালাস চেয়ে আইনগত বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ, এরপর আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে (পিলখানা) সংঘটিত ট্রাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার করা হয়। বিচার শেষে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান।
মামলার আসামি ছিল ৮৪৬ জন। মামলায় উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু (কারাগারে মৃত্যু), স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় আরো ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন।
রায়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে কারাবন্দি ১৩৮ জন ফাঁসির আসামিসহ অপরাপর আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে ফাঁসির দণ্ড অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ডেথ রেফারেন্স। এখন আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু চলছে। মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ উদ্যোগ নেয়।
এফএইচ/আরএস/জেএইচ/পিআর