ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৪১ বছরে ডিএমপি : আশা-নিরাশার দোলাচল

প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার ফোর্স নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এরপর একে একে কেটে গেছে ৪১ বছর। বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ডিএমপিকে।

কর্মক্ষেত্র রাজধানী ঢাকা হওয়ায় পুলিশের এ ইউনিটের কাজের পরিধিও অনেক বেশি। ঢাকাবাসীর জানমাল রক্ষা থেকে শুরু করে সড়কে যান চলাচল যথাসম্ভব নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা করা- এমন বহুবিধ দায়িত্ব পালন করতে হয় এ ইউনিটের সদস্যদের। অনেক ক্ষেত্রে একটানা অনেক লম্বা সময়ও দায়িত্ব পালন করতে হয় এই বাহিনীর সদস্যদের।

৪১ বছর আগে ঢাকাকে ১২ ভাগে বিভক্ত করে ১২টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিএমপি। পুলিশের এই ইউনিটের প্রথম কমিশনার ছিলেন ই. এ. চৌধুরী। বর্তমানে ডিএমপির থানার সংখ্যা ৪৯। ফোর্স প্রায় ২৭ হাজার।

ঢাকাবাসীর যা প্রত্যাশা ছিল, ৪১ বছরেও ডিএমপি কি তা পূরণ করতে পেরেছে বা প্রত্যাশা পূরণের পথে কতদূর এগিয়েছে পুলিশ? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া না গেলেও একটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো- পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ লম্বা। এই দুর্নামের বোঝা ঘাড়ে নিয়েই পুলিশ জনগণের সত্যিকারের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। বিভিন্ন অপতৎপরতা দমনে সফলতায় পুলিশ কখনো একদিকে যেমন মানুষকে করেছে আশাবাদী, আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, মানুষকে হেনস্তা করে এই বাহিনীর জন্য মানুষকে ডুবতে হয়েছে নিরাশায়।

২০১০ সালে ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব নেন বেনজীর আহমেদ (বর্তমান র‌্যাব মহাপরিচালক)। মূলত তার সময় থেকেই শুরু হয় ডিএমপিতে আধুনিকীকরণের কাজ। পরিবর্তন করা হয় ডিএমপি পুলিশের বেতন পরিশোধের রেওয়াজ। আগে প্রতি ৫ হাজার পুলিশ সদস্যকে হাতে হাতে বেতন দিতেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে বেতন তোলেন তারা, টাকা তোলেন ঘরের পাশের এটিএম বুথ থেকেও।

যুগোপযোগী ইউনিটে গড়ে তুলতে ডিএমপিকে দেয়া হয়েছে সাঁজোয়া যান (আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার- এপিসি), ওয়াটার ক্যানন (জল কামান)। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে খোলা হয়েছে নিজস্ব ওয়েব সাইট। dmp.gov.bd সাইটটিতে লগইন করে খুব সহজেই পাওয়া যায় পুলিশের এই ইউনিট সংক্রান্ত নানা তথ্য। এ ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাচ্ছে পুলিশি সহায়তাও। এছাড়া ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে- ডিএমপির ৪৯ থানার মামলা-জিডির পরিসংখ্যান, মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের ছবি। সভা-সমাবেশ কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে আতশবাজি ফাটানোর অনুমতির আবেদনও করা যায় এই ওয়েব সাইট থেকে।

ডিএমপির সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে চালু করো হয়েছে ‘ডিএমপি অ্যাপস।’ এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার সব থানার ওসি-ডিউটি অফিসারদের মোবাইল নম্বর, থানার ঠিকানা পাওয়া যাবে।

ঢাকাবাসীকে জরুরি সেবা দিতে হটলাইনও খুলেছে ডিএমপি। যেকোনো সমস্যায় ‘১০০’ নম্বরে ডায়াল করে কন্ট্রোল রুমে মেসেজ দিলেই তা পৌঁছে দেয়া হবে সংশ্লিষ্ট থানায়। নেয়া হবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। এছাড়া রাজধানীবাসীর জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, অর্থ বহনের নিরাপত্তা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ডিএমপি নিউজ সার্ভিস, ও ফেসবুকে পেজ খোলা হয়েছে। ডিএমপির অর্জন, নির্দেশনা ও পরামর্শগুলো তুলে ধরা হয় পেজটিতে।

প্রতিষ্ঠার পর ৪১ বছরে ডিএমপির ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি উপ-কমিশনার (এডিসি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিএমপির প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে ঢাকাবাসীকে নিরাপত্তা প্রদানের কাজ করছে। জীবনও দিয়েছে এদের অনেকে। আশা করছি ভবিষ্যতেও একইভাবে পুলিশের এই ইউনিটটি নিরাপত্তা প্রদানে আদর্শ ভূমিকা রাখবে।’

সাফল্যের পাশাপাশি ৪১ বছরের ইতিহাসে বেশ কয়েকবার কলঙ্কিতও হয়েছে বাহিনীটি। তল্লাশির সময় চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায়, হুমকি-ধমকিসহ নারীপুরুষ উভয়কে শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণিত অভিযোগ তাদের কলঙ্কিত করেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে মারধর, সচিবের ছেলের পকেটে ইয়াবা দিয়ে চাঁদা দাবি, উত্তরায় দম্পতিকে আটকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগে এই বাহিনীকে ব্যাপক দুর্নাম শুনতে হয়েছে। অবশ্য বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় পুরো বাহিনী নেবে না।

নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন। কারো ব্যক্তিগত অভিযোগের দায় কোনো বাহিনী নেবে না। এসব ঘটনায় নিয়মিত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় ডিএমপি।’

পুলিশের এই ইউনিটটিকে আরো শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপির সদস্যদের সাব মেশিন গান, ভিডিও স্ট্রিমিংসহ লেভেল থ্রি হেলমেট, শর্ট আর্মস এবং মাল্টিপল গ্যাস লঞ্চার দেয়া হবে তাদের।

ডিএমপির অর্জন-কলঙ্কের বিষয়ে শাহরিয়ার কবির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু। ডিএমপির কার্যক্রম সত্যি প্রশংসনীয়। তবে গুটিকয়েক অসৎ অফিসারের জন্য তারা কলঙ্কিত হচ্ছে। কমিশনারের উচিৎ অসৎদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা।’

এআর/এনএফ/বিএ