‘ভাষানটেকে অপরাধ বন্ধে বাধা পুলিশের জনবল’
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)`র একটি গুরুত্বপূর্ণ থানা মিরপুর বিভাগের ‘ভাষানটেক’। ক্রমেই নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ও আবাসন সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে থানা এলাকাটি। অভিযোগ রয়েছে ভাষানটেক বস্তির কারণেও এখানে অপরাধ প্রবণতা বেশি। রাজধানীর বড় সব ডাকাত আর খুনির আতুরঘরও বলা হয় ভাষানটেককে। থানাটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন মোহা. আবুল কালাম আজাদ।
গত ১৫ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সর্বশেষ ডিএমপির কদমতলী থানার ইন্সপেক্টরের (তদন্ত) দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর খুনিদের সঙ্গে আঁতাত এবং আসামিপক্ষকে কোনঠাসা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ইয়াবা ব্যবসায়ী, অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন ও টেলিফোন লাইনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আঁতাত করার অভিযোগ রয়েছে।
তবে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মোহা. আবুল কালাম আজাদ। তার ভাষ্য মতে, জনবল কম থাকায় সদিচ্ছা সত্ত্বেও ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা, ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় মূল হোতাদের ধরা যাচ্ছে না।
এছাড়া ভাষানটেক এলাকার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় ওঠে আসা নানা তথ্য জাগো নিউজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
আবুল কালাম আজাদ : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি, আমি ভালো আছি। আপনি এসেছেন খুব ভালো লাগছে। নতুন ওসি হিসেবে সমালোচনা ও সহযোগীতা দুটোই কামনা করি।
জাগো নিউজ : তাহলে সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই। কিছু জানার ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মধ্যে ভাষানটেক থানাটির গুরুত্বপূর্ণ কী কারণে?
আবুল কালাম আজাদ : মিরপুরের বিস্তৃত এ এলাকায় কারণে ঘন জনবসতি গড়ে ওঠছে। এখানে রয়েছে ৪টি বস্তি। বস্তি কেন্দ্রিক নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস বেশি। অপরাধ প্রবণতা বেশি বস্তি কেন্দ্রিক। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে।
জাগো নিউজ : এ থানা এলাকায় কী ধরণের অপরাধ বেশি হয়?
আবুল কালাম আজাদ : এখানে প্রধান সমস্যা মাদক। ডাকাতির ঘটনাও সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বাসা বাড়ির গ্রিল কেটে দুর্ধর্ষ সব ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মানুষ জনকে জিম্মি করে এসব করা হয়। পুলিশের ভিজিবিলিটি কম থাকায় এই সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
জাগো নিউজ : বস্তিতে পুলিশি যোগসাজশে মাদক ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে..
আবুল কালাম আজাদ : নিয়মিত নেশা জাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচা থেকে শুরু করে সবই হতো এখানে। বিশেষ করে বস্তিবাসী কিছু অসাদু মানুষ এই সুযোগ নিচ্ছে। নজরদারি ও অভিযানের কারণে ইদানিং কমে গেছে। আমি আসার পর থেকে ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি শুনে আসছি। মাদকের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : বিদ্যুৎ লাইন ও পানির লাইনের অবৈধ ব্যবসা এখানে রয়েছে। তাদের সঙ্গে থানা পুলিশের বিশেষ করে আপনার যোগসাজশ থাকার অভিযোগও মিলেছে...
আবুল কালাম আজাদ : এক দু’জনের গোপন অপরাধের দায় থানা পুলিশ কিংবা আমি নিতে পারি না। আর আমি এসবের মধ্যে নেই। এসব মিথ্যে অভিযোগ আমলে নেই না আমি। তাছাড়া পানির লাইন ও বিদ্যুতের লাইন অবৈধ না বৈধ তা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। যথাযথ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাগো নিউজ : নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আপত্তির কারণে জনগণের নিকট জবাবদিহিতা রয়েছে কি না?
আবুল কালাম আজাদ : পুলিশ বাংলাদেশের নিরাপত্তা, ফৌজদারি অপরাধ দমন ও মামলার তদন্ত করে থাকে। পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধে জড়াতে পারে না। অবস্থানগত কারণে তা আরো প্রেস্টিজিয়াস। জনগণের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ অবশ্যই বদ্ধপরিকর। এ জন্য আমরা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। থানার সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন কেউ সাধারণ কোনো নাগরিককে হয়রানি না করে। দায়িত্বের সীমা বুঝেই যেন দায়িত্ব পালন করে।
জাগো নিউজ : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?
আবুল কালাম আজাদ : অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখানে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি। তাদের নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাসের জন্য পরিবেশ তৈরির কাজ করে যাচ্ছি। বিট পুলিশিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করছি।
ভাষানটেকে ৪টি বস্তি। বাগানবাড়ি বস্তি, ৩নং ধামালকোট বস্তি, ভাষানকেট বস্তিতেই প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের বসবাস। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে কারণে সব সময় নজরদারি রাখা কঠিনই।
জাগো নিউজ : মাদকের ব্যবসায়ী ও খুনিদের সঙ্গে আঁতাতের গুরুতর অভিযোগসহ ভাষানটেকে নাছির হত্যা মামলার আসামিরা দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও আপনি তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে- উল্টো নিহত নাছিরের ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে..
আবুল কালাম আজাদ : পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও মাদকের বিষয়ে সচেতনার জন্য ক্রাইম কনফারেন্স করা হয়। এলাকার ভাড়াটিয়া, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
আর অভিযোগ তো নানা জনে নানা রকমই করতে পারে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার কেনইবা আঁতাত থাকবে? আর নাছির হত্যায় আসামিরা সব পলাতক। সে কারণে চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না। পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালালেও পুলিশ আগমনের খবরে পালিয়ে যায় আসামিরা।
আর নাছিরের ভাই মোশাররফ ক্যান্টনম্যান্টের মালেক হত্যা মামলার ৬নং ইজহারভুক্ত আসামি। তাছাড়া গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা পাওয়া গেছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে কি না?
আবুল কালাম আজাদ : জ্বি, আমাদের একটি স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে। ভাষানটেক বস্তি এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে। মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
আবুল কালাম আজাদ : বস্তি এলাকাগুলোই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
জাগো নিউজ : নতুন ওসি, কোনো কারণে চাপবোধ করছেন কি না?
আবুল কালাম আজাদ : চাপ নেই, তবে জনবল কম। তাই পেট্রলিং গুরুত্ব বেশি। কিন্তু সব সময় সম্ভব হয় না। ছুটি, অসুস্থতার কারণে আরো জনবল কমে যায়। এর বাইরে আপাতত কোনো সমস্যা নেই।
জাগো নিউজ : পুলিশ সদস্য হিসেবে এ পেশার মূল্যায়ন কী?
আবুল কালাম আজাদ : আমার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। মিরপুর-১১ এলাকায় থাকি। ২০০২ সালের ২ জুন নওগাঁ সদরে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে যোগদান। রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেছি। দেশের সেবা করার এমন পেশায় বেশি মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ রয়েছে। ওসি হিসেবে ব্যস্ততাও কম না। পরিবারও সে ভাবেই মেনে নিয়েছে। সব কিছুই এখন এডভাঞ্চ। সিচুয়েশন বুঝে পরিবার ছাড় দেয় (..হেসে)।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আবুল কালাম আজাদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জেইউ/আরএস/এমএস