তিনি এলেন, আপ্লুত হলেন, করলেন জাতিকেও
শনিবার রাত ৯টা। এসময়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ব্যস্ত থাকে। তবে এদিনের ব্যস্ততা যেন অন্যরকম। অভিমানী ছেলের আগমন মা সমতুল্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যেন হাজার বছর পর প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়া। সমস্ত গোসসা উবে গিয়ে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে ধরে দু’জনই তৈরি করলেন এক আবেগঘন মুহূর্ত। যে আবেগে গোটা জাতিও আপ্লুত।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর বঙ্গতাজের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের শনিবারের সাক্ষাৎ মেলবন্ধনের আরেকটি মানবিকতার ইতিহাস।
আগমনের পূর্ব কোনো আলোচনা ছিল না। মিডিয়া থেকেও অনেকটা আড়ালে। আচমকা দুই বোন সিমিন হোসেন রিমি ও মাহজাবিন আহমেদ মিমিকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌছান সোহেল তাজ। অবস্থান করেন ৪৫ মিনিট। এর পুরো সময়ই ছিল আবেগের ঘনঘটা। খেলেন, কুশল বিনিময় করলেন, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে যেন মনের দুঃখকথাগুলো ভুলতে চাইলেন।
রাতেই বোন মাহজাবিন আহমেদ মিমি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সোহেল তাজের আবেগঘন সাক্ষাতের ছবি ‘ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার রিইউনিয়ন!!!’ শিরোনামে পোস্ট দেন।
ছবিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী সোহেল তাজকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
সোহেল তাজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তিনি ছবিটি পোস্ট করে লিখেন, ‘অনেকদিন পরে মায়ের কোলে বাচ্চার মতো ফিরে আসা...বিশ্বে এমন মমতাময়ী রাষ্ট্র প্রধান দ্বিতীয়জন নেই।’ রাতেই সেই আবেগঘন মুহূর্তের ছবি পোস্ট দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকও।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী এবং সোহেল তাজের সাক্ষাতের বিষয়টি রোববার দিনভর সোস্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। অনেকেই উল্লাস আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মন্তব্য করছেন, স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
২০০৯ সালের ৩১ মে। রহস্য ঘেরা একটি দিন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের একমাত্র ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ এদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
পদত্যাগের কি সেই রহস্য, কার সঙ্গে অভিমান, কার-ই বা দোষ- জনমনে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও এখনো তার কোনেটিরও উত্তর মেলেনি। এরই মধ্যে কেটে গেছে দীর্ঘ ছয় বছর।
সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোহেল তাজ অভিমান করে পদত্যাগপত্র জমা দিতে চাইলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ও নতুন উদ্যমে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী চাননি সোহেল তাজ পদত্যাগ করুক।
পরে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ব্যক্তিগতভাবে কয়েক দফা তাজকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একসময় সোহেল তাজ পদত্যাগপত্র জমা না দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে এমপি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ৭ জুলাই সশরীরে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
ফলে স্পিকার ওই সময় গাজীপুর-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করলে ৩০ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার তিন বছর পরেও সোহেল তাজের ব্যাংক হিসাবে প্রতিমন্ত্রীর বেতন-ভাতা জমা হতে থাকায় গত বছরের ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি দেন তিনি। পাশাপাশি পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারিরও আবেদন জানান।
চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন, ২০০৯ সালের ৩১ মে সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর হাতে আমার পদত্যাগপত্র দিই। ১ জুন আবারও সেই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাই। এরপর থেকে অদ্যাবধি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি কোথাও কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করিনি। সেই সময় থেকে তার ব্যক্তিগত হিসাবে পাঠানো বেতন-ভাতার যাবতীয় অর্থ ফেরত নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
এএসএস/এএইচ/পিআর