একুশে বইমেলা : কমছে বই ছাপানোর পরিমাণ
পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’। মেলাকে সামনে রেখে বাংলাবাজারের বই পাড়ায় চলছে বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে প্রতি বছর বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রকাশকদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করলেও এবার বিরাজ করছে ভিন্ন চিত্র। তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির ব্যবহারে ঠুনকো বিনোদনে আকৃষ্ট, বই পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া, উপকরণ ক্রয়ের খরচ বৃদ্ধিতে মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বই বিক্রির লক্ষ্য কমিয়ে আনছেন তারা। ফলে বই ছাপানোর পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন প্রকাশকরা।
বাংলাবাজারের বই পাড়ায় সরেজমিনে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। জানা যায়, একুশে বই মেলাকে কেন্দ্র করে ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যায় নানা কর্মযজ্ঞ। একই ধারায় চলে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এছাড়া চাহিদা ভেদে বই ছাপানোর কাজ চলে মেলার শেষ পর্যন্ত। লেখক ভেদে বই ছাপানোর পরিমাণও হয় ভিন্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছর বিএনপি জোটের সরকার বিরোধী আন্দোলনে জমে ওঠেনি বইমেলা। বিক্রিতেও পরেছিল ভাটা। আর এবার রাজনৈতিক শঙ্কা কম না থাকলেও বইয়ের বাজার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেশ কয়েকজন প্রকাশক জানান, কিছু দিন আগেও দেশের মানুষের কাছে তেমন বিনোদনের মাধ্যম ছিল না। বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল বই। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনের মাধ্যম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুধুমাত্র বই পড়ে এখন আর বিনোদন গ্রহণ করছেন না তারা। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় বহুমাত্রিক বিনোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। ফলে বইয়ের চাহিদা দিন দিন কমছে।
অন্য প্রকাশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদুল কবির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গতবার বিভিন্ন ধরনের দেড় লক্ষ বই ছাপিয়েছিলাম, বিক্রিও হয়েছিল। তবে এবার সবোর্চ্চ এক লক্ষ বই বিক্রি হবে বলে ধারণা করছি আমরা।
বই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে নেমে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, বিনোদনের মাধ্যম বহুমাত্রিক হওয়ায় আগের মত পাঠক নেই। বলতে গেলে বই পড়ার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কমে গেছে। নতুন প্রজন্ম এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ঠুনকো বিনোদন নেওয়ায় ব্যস্ত। যা জাতির জন্য হুমকিও।
বাংলা বাজারের সময় প্রকাশনের সেলস ম্যানেজার মো. আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমাদের ৪০ থেকে ৫০টি বই প্রকাশ হবে। তবে এবার বইয়ের কপির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি।
বই পাড়ার মাওলা ব্রাদার্স, আগামী প্রকাশ, অথৈই প্রকাশ, প্রতীক প্রকাশ, পাল প্রকাশসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর কাছে একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮ পৃষ্টার ফর্মা করে ২৫টি ফর্মার একটি বই বাইন্ডিং করতে ৪৫ টাকা খরচ পড়ে। যেখানে আগে ৩৫-৩৭ টাকা খরচ পড়ত। এছাড়া অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট প্রকাশের পর থেকে পেপার, কালির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটনও স্বীকার করেন, মানুষ এখন বই কম কিনে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের যুগে মানুষ একটু কমই বই পড়ে। ইন্টারনেটে মানুষ এখন সময় দেন বেশি। সেখান থেকে মানুষ তথ্য নিয়ে জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে।
তিনি আরো বলেন, সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বইয়ের দাম স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। পাঠকরা ভালো মানের লেখকদের বই দামের জন্য ফিরে যান না।
এবার আন্দোলন-সংঘাত না থাকায় গতবারের তুলনায় বই বিক্রির পরিমাণ বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ তিনি।
এদিকে বরাবরের মত এবারও মেলায় কাব্যগ্রন্থ চেয়ে উপন্যাসের পরিমাণ বেশি থাকছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পাঠক সমাজ উপন্যাস নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব সংঘাত নয়, সামাজিক জীবন থেকে একটু বিনোদনের আশায় লঘুভাবের উপন্যাসে বেশি আগ্রহ থাকে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এসএম/আরএস/এমএস