কমিউনিটি পুলিশকে শক্তিশালী করা হচ্ছে
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের আওতাভুক্ত গেন্ডারিয়া থানা। পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্য এ গেন্ডারিয়া এলাকা। অবস্থানগত দিক থেকে বর্তমানে রাজধানীর অনেকটাই দূরে এ থানাটি। তবে এ এলাকার জনবসতি ও ঐতিহ্যের কারণে একটু গুরুত্ব কমেনি থানাটির।
থানাটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন কাজী মিজানুর রহমান। গত বছরের ৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ি থেকে এখানে ওসি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও কমিউনিটি পুলিশকে শক্তিশালী পুরো থানাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এ উদ্যোগে ইতোমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, থানার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবেও পুরস্কারও পেয়েছেন। ডিএমপি কর্তৃক ঘোষিত পরপর দুইবারের শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি কাজী মিজানুর রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে গেন্ডারিয়া থানা এলাকার নানা দিক।
জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
কাজী মিজানুর রহমান : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি আমি ভালো আছি। বলতে পারেন ঢাকার অনেকটাই দূরের থানা গেন্ডারিয়া। এদিকে সাংবাদিকদের যাওয়া আসাও কম। আপনি এসেছেন খুব ভালো লাগছে।
জাগো নিউজ : তাহলে সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মধ্যে এই গেন্ডারিয়া থানাটি গুরুত্বপূর্ণ কি কারণে?
কাজী মিজানুর রহমান : ডিএমপির অনেক পুরান থানা এটি। এখানকার রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপত্য সবই পুরাতন। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে। তবে ঐতিহ্যের কারণেই এই এলাকা গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ : এই থানা এলাকায় কি কি ধরনের অপরাধ হয়?
কাজী মিজানুর রহমান : এখানে প্রধান সমস্যা মাদক। আগে নিয়মিত নেশা জাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচা থেকে শুরু করে সবই হতো এখানে। নজরদারি ও অভিযানের কারণে ইদানিং কমে গেছে। আমি আসার পর ঘোষণা করেছি মাদকের বিষয়ে কোনো আপস নেই। একটি ইয়াবাও কারো কাছে পাওয়া গেলে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। মাদকের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করার কারণে স্থানীয় দুই সাংসদ আমাকে পুরস্কৃতও করেছেন। এছাড়া জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় ডাকাতি বা চুরির ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে।
জাগো নিউজ : সম্প্রতি দু/চার জন পুলিশ সদস্যের অপরাধের কারণে পুরো পুলিশ বিভাগ বিব্রত। এমন অপরাধ প্রবণ পুলিশ সদস্য আপনার থানায় কি রয়েছে? সম্প্রতি পুরো থানা পুলিশকে কোনো নির্দেশা দিয়েছেন কি না?
কাজী মিজানুর রহমান : পুলিশ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও ফৌজদারি অপরাধ দমন ও মামলার তদন্ত করে থাকে। সেই পুলিশেরই কোনো সদস্য অপরাধ করলে তা সত্যিই মানা যায় না। তাই বলে ২/৪ জনের অপরাধের দায় পুরো পুলিশ বাহিনী নিতে পারে না। যে অপরাধ করবে দায়বদ্ধতা তারেই। তবে আমার থানায় সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেউ যেন সাধারণ কোনো নাগরিককে হয়রানি না করে। দায়িত্বের সীমা বুঝেই যেন দায়িত্ব পালন করে। আর প্রত্যেকদিনই আমিসহ তিন সিনিয়র অফিসার পুলিশ সদস্যদের কাজের বিষয়ে ব্রিফ করি।
জাগো নিউজ : আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?
কাজী মিজানুর রহমান : অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিএমপির নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে পুরো থানাকে ৫টি বিটে ভাগ করা হয়েছে। একজন এসআই-এর নের্তৃত্বে এক বিটে ৫/৭ করে পুলিশ সদস্য কাজ করছে। নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে উঠান বৈঠক করছি। পর্যাপ্ত বিশ্বস্ত সোর্সকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।
জাগো নিউজ : মাদকদ্রব্যে ব্যবহার রোধে ব্যাপারে কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
কাজী মিজানুর রহমান : পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও মাদকের বিষয়ে সচেতনার জন্য ক্রাইম কনফারেন্স করা হয়। নিজেদের সন্তানসহ পরিচিতরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন কি না তা খেয়াল রাখতে এলাকাবাসীকে বলা হয়েছে। এলাকার ভাড়াটিয়া, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে কি না?
কাজী মিজানুর রহমান : জ্বি আমাদের একটি স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে। দয়াগঞ্জ মোড়ে চেকপোস্টটি বসানো হয়েছে। কয়েক দিনে কয়েকশ’ পিস ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য জব্দ ও কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল টিম সার্বক্ষনিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
কাজী মিজানুর রহমান : দয়াগঞ্জ মোড়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া বিট পুলিশিং শক্তিশালী করে পুরো থানা এলাকাতেই নজরদারি রাখা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানার জনবল, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
কাজী মিজানুর রহমান : জনবল যা আছে অন্য থানার চেয়ে কম না বেশিই। তবে আরও জনবলের দরকার। জনবলের অভাবে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য আমরা সম্প্রতি কমিউনিটি পুলিশিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কমিউনিটি পুলিশ শক্তিশালী হলে সব ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ও নজরদারি রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে এলাকাসী বেশ সহযোগীতাও করছে।
জাগো নিউজ : ডিএমপি কর্তৃক পরপর দুইবার আপনি শ্রেষ্ঠ ওসির পরস্কার পেয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
কাজী মিজানুর রহমান : কোয়ালিট মেইনটেইন, সততা, পারফেকশন, নেতৃত্ব এসব কারণে সাধারণত শ্রেষ্ট ওসির মর্যাদা দেয়া হয়। আমি ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেও অপারেশনে অংশ নিই। মাদকমুক্ত করণেও আমি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছি। এলাকায় জনশ্রুতিও খেয়াল রাখে ডিএমপি। এছাড়া প্রিভিয়াস রেকর্ড বিবেচনা করা হয়। এসব কারণে পরপর দুইবার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছি।
জাগো নিউজ : একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এই পেশাটিকে কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
কাজী মিজানুর রহমান : ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে যেন আমার নামের পাশে লেখা থাকে মিজান জজ। জজ হওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু পারি নি। অবশেষে পুলিশে এসআই হিসেবে ১৯৮৯ সালে যোগ দেই। আমার বাড়ি মাদারিপুর শহরে। স্থানীয় নাজিমউদ্দিন কলেজ থেকে বিএসএস পাশ করে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছি। ওসি হিসেবে যাত্রাবাড়ি নরসিংদী, শিবপুর মডেল থানা, রায়পুরাতে দায়িত্ব পালন করেছি। জজ হতে পারি নি। তবে পুলিশ কিন্তু প্রাথমিক জজই বলতে পারেন। অধিকাংশ ঘটনায় তদন্ত শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে যে পর্যবেক্ষণ পাঠানো হয় আদালত এর কাছাকাছিই আদেশ দেয়। সে হিসেবে আমাকে কিন্তু জজই বলতে পারেন (হেসে)। দেশের সেবা করার পাশাপাশি হাজারো মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এ পেশা ছাড়া অন্য পেশাতে খুব কমই পাওয়া যায়।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কাজী মিজানুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
জেইউ/এআরএস/এমএস