ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বাজেটে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমছে

ইসমাইল হোসাইন রাসেল | প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ২৪ মে ২০২২

টানা দুই বছর করোনা মহামারির প্রভাবে গতি হারিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। সেই অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নিচ্ছে নানা উদ্যোগ। করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে পর পর দুটি বাজেটের ঘোষণার পর এবার কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আগামী ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আসছে বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও কমছে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে বরাদ্দ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর তা কিছুটা বেড়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এ মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ১০ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

নতুন অর্থবছরের আসন্ন বাজেটে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ কিছুটা কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এবার তা কমিয়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া টিআর-কাবিটার জন্যও থাকছে বাড়তি বরাদ্দ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেটে বিশেষ কিছু থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে অনেক কর্মসূচি কাটছাঁট হবে। মানবিক সহায়তা প্রতিবছর যেভাবে থাকে সেভাবেই আছে, সেক্ষেত্রে তেমন ব্যত্যয় ঘটেনি। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গৃহ মঞ্জুরিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাতগুলোতে এমনিতেই প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ থাকে। এছাড়া প্রতি অর্থবছর দুর্যোগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয় সরকার।

বাজেটে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমছে

এদিকে নতুন অর্থবছরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারেও সতর্ক সরকার। বলা হচ্ছে, যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে, অতীতে এ ধরনের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও এবার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে আসতে পারে সরকার।

স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুস্থ পরিবারগুলোর সুরক্ষা দিতে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) চালু হওয়ার পর থেকে প্রথম দিকে এর বরাদ্দ ছিল হাজার কোটি টাকা। এরপর ধাপে ধাপে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে হয় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

বাজেটে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমছে

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ইজিপিপি (অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি) প্লাস নামের নতুন একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেটি বিশ্বব্যাংকের অনুদানে শুধু কক্সবাজার জেলায় বাস্তবায়ন হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ কর্মসূচির জন্য ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেজন্য এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জন্য অতিদরিদ্র খাতে যে বরাদ্দ সেটি কক্সবাজার ছাড়া বাকি ৬৩ জেলায় বাস্তবায়ন হবে। কক্সবাজারে ইজিপিপি প্লাস নামের এ বিশেষ কর্মসূচিটি পরিচালনা করা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিআর-কাবিটার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষ বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছে। দুর্যোগকালে তারা উপকৃত হচ্ছেন আর্থিকভাবেও। ঝড়-বন্যার মতো সমস্যা সমাধানে যে বাড়তি উদ্যোগ আছে, সেসব কার্যক্রমও আগের মতোই চলবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়েও ভূমিকা থাকে এ মন্ত্রণালয়ের। সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়। বরাবরের মতো এবারও এসব ক্ষেত্রে বাজেটে থাকবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ।

বাজেটে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমছে

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি আগে সব উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হতো। এখন যেসব উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের কম সেসব উপজেলাকে এ কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে কর্মসূচির খরচও কমেছে। যেসব উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের বেশি সেখানে এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে ৩২৩টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চলবে, বাকিগুলো বাদ পড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যয় কমায় বাজেটে বরাদ্দও কমছে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য বাড়তি ইজিপিপি প্লাস শীর্ষক কর্মসূচি রয়েছে। সেটির জন্য পৃথক বরাদ্দ থাকছে। ফলে সেখানকার অতি দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানে চলবে বিশেষ কর্মসূচি।

আইএইচআর/এমকেআর/এসএইচএস/জেআইএম