এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
আর মাত্র ১০ দিন পরেই শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব-পুলিশ-ডিবির সমন্বয়ে এবারের মেলায় শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মাঠে থাকবে আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ বছর ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণে চলবে বইমেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চকেও এবার মেলা প্রাঙ্গণের আওতায় নেয়া হতে পারে।
এবারের বইমেলায় দর্শনার্থী, লেখক, প্রকাশকসহ দেশের বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তা দিতে সর্বকালের সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আওতায় থাকবে বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে র্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর টিএসসির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। বই মেলার ভেতর থেকেই তাকে অনুসরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। এরপর অভিজিতের প্রকাশকদের ওপর হামলা ও জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপনকে হত্যার পরে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক রয়েছে প্রকাশকদের মধ্যেও।
সম্প্রতি লেখক, প্রকাশক, ব্লগারসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়েছে বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী সংগঠন। এগুলো মাথায় রেখে নতুন করে চলছে নিরাপত্তা প্রস্তুতি।
জানা গেছে, বইমেলা প্রাঙ্গণের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় বসানো হবে দুইশতাধিক ক্লোজ সার্কিড (সিসি) টেলিভিশন ক্যামেরা। এগুলো মনিটর করার জন্য থাকবে কন্ট্রোল রুম। থাকছে অতিরিক্ত লাইটিং। প্রয়োজনে যে কোন সড়কের যান চলাচল সীমিত কিংবা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ডিএমপি। মেলার প্রবেশপথ টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর সড়কে ও ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সভা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সভা থেকেই প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার জন্য জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের সভাপতিত্বে একটি সভা আয়োজন করা হবে। সভায় উপস্থিত থাকবেন আপরাধ বিশেষজ্ঞ, লেখক, প্রকাশক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানো হতে পারে বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এবারের বইমেলার নিরাপত্তা আগের বছরগুলোর তুলনায় জোরদার করা হবে। বইমেলায় আগত সবার নিরাপত্তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের।
প্রায় দেড় শতাধিক হত্যার হুমকিপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আসবেন এই বইমেলায়। তাদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, হুমকিগুলো পুলিশের নজরে রয়েছে। এগুলোর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনে তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে পহেলা বৈশাখের জনসমাগমে নারী লাঞ্ছনার মতো কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তবে এবার এগুলো কঠোর হস্তে দমন করা হবে। মেলার ভিড়ে ইভটিজিং কিংবা লাঞ্ছনার ঘটনা যাতে না ঘটে তাই এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এআর/এআরএস/পিআর