ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

রঙিন আলোয় সোমাদের ধূসর জীবন

প্রকাশিত: ০৫:২৯ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

মেয়েটির নাম সোমা। বয়স কতইবা হবে। খুব বড় জোর ছয় বছর। তেজগাঁও মগবাজার লিংক রোড সংলগ্ন হাতিরঝিল ব্রিজে লাল নীল সবুজ হলুদ রঙিন আলোর ঝলকানির নীচে রেলিং ধরে ছুটোছুটি করছে মেয়েটি। লাল রংয়ের রঙিন ফ্রক পরিহিত মেয়েটির গায়ে শীতের কোন পোশাক নেই। ছোট্ট এ মেয়েটির কোলে এক দেড় বছরের একটি শিশু ঘুমাচ্ছে। শিশুটির গায়ে গেঞ্জি কাপড়ের শীতের পোশাক থাকলেও প্যান্ট নেই।

যখনই ব্রিজের ওপর যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তখনই ক্ষুদে মেয়েটি ঘুমন্ত ওই শিশুটিকে নিয়ে প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল আরোহির দিকে ছুটে যাচ্ছে। জানালায় আলতো করে টোকা দিয়ে বলছে, দুপুরে কিছু খাই নাই। ছোট ভাইডা না খাইয়া ঘুমাইয়া পড়ছে। কিছু সাহায্য দেন।

দয়ালু কেউ কেউ দুই চার টাকা দিচ্ছে আবার কেউবা দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ টাকা দিলে শিশুটির মুখে হাসি ফুটছে কেউ না দিলে মন খারাপ করে ব্রিজের রেলিংয়ে এসে দাঁড়াচ্ছে। রোববার রাত সাড়ে ৯টায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের চোখে সোমার ছুটোছুটির দৃশ্যটি চোখে পড়ে।

Soma

যে বয়সে তার মতো শিশুর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সকালে স্কুলে পাঠানোর জন্য তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, ঘুমাতে না চাইলে আদর আহলাদে রাজা রানি, জাদুপরী আর ভূত প্রেতের গল্প শোনায় সে সময়ে সোমা ও তার মতো ক্ষুদে শিশুরা হাতিরঝিলের বিভিন্ন রাস্তায় ক্ষুধার অন্ন জোটাতে মানুষের কাছে দু’হাত পেতে ভিক্ষা করে। রঙিন আলোর নীচে এ যেন সোমাদের ধূসর জীবন চিত্র।

এ প্রতিবেদক সোমাকে কাছে ডেকে কথা বলতে চাইলে প্রথমে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দূরে সরে যায়। টাকা দেয়ার কথা বললে কাছে ছুটে আসে। সে জানায়, কোলের শিশুটি তার ছোট ভাই সাগর। তারা তেজগাঁওয়ের বেগুণবাড়ির ১২ নম্বর গলিতে থাকে। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত দশটা-এগারটা পর্যন্ত এখানে ভিক্ষা করে। যা পায় তা নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেয়।

বাবা কোথায় জিজ্ঞাসা করলে সোমা মন খারাপ করে বলে, মার লগে কাইজ্জা কইরা গেছে গা।  প্রতিদিন কত রোজগার হয় জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১শ’ টাকা পায়। সব টাকা সে মায়ের হাতে তুলে দেয়।

স্কুলে পড়ে কি না জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, স্কুলে যামু কহন। রাইতে এহান থনে বাড়িতে গিয়া খাইয়া শুইতে শুইতে অনেক রাইত অয়। সকালে ঘুম থাইক্যা উঠতে অনেক দেরি অইয়া যায়। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। তার স্পষ্ট জবাব স্কুলে গেলে খামু কী।

এমইউ/এআরএস/পিআর