ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন বাঁকে ইরানের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

কয়েক বছর ধরে আলোচনার পর অবশেষে ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তেহরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের পরের দিন রোববার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩০ মার্কিন ডলার কমেছে।

ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের দর কষাকষির পর জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সবুজ সংকেত দেয়। ওই চুক্তিতে শর্ত দেয়া হয়েছিল, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সংকুচিত করবে একই সঙ্গে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হয় ধ্বংস করবে নতুবা রফতানি করবে।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় এখন থেকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো ইরানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ খনিজ তেল ও গ্যাস ক্রয় করতে পারবে। ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও মুদ্রা বাজারে পুনরায় প্রবেশ করছে তেহরান।

এমন এক সময় আন্তর্জাতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হলো যার কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইরানের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। সে সময় বলা হয়, ইরানের ওপর থেকে যদি আন্তর্জাতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে দেশটি। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইরানের মুদ্রাস্ফীতি ১৪ শতাংশের ওপরে থাকবে বলে সতর্ক করে দেয় আইএমএফ।

iran-economic

তেহরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আগামী অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে বলে ভবিষ্যৎ বাণী করেছে সংস্থাটি। আইএমএফ বলছে, তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি, বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য কম খরচের ফলে আগামী বছর ইরানের জিডিপি ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।

গত মাসে তেহরান জানায়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে বিশ্ব বাজারে পূর্বের অবস্থা ফিরে পেতে ইরান দিনে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করবে। দেশটির তেলমন্ত্রী বিজান জানগানেহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় ইরান এখন থেকে প্রত্যেক দিন দ্বিগুণ তেল রফতানির পরিকল্পনা নিয়েছে।

জানগানেহ বলেন, তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণে ইরান এই খাতে আরো ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশকে তেহরানে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্বের চতুর্থ তেল মজুদকারী এই দেশ সম্প্রতি দিনে ১১ লাখ ব্যারেল খনিজ তেল রফতানি করেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এর পরিমাণ ২২ লাখ ব্যারেলে হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। দেশটির সম্প্রতি সামগ্রিক তেল উৎপাদন ৩১ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে।

এদিকে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমতে থাকায় সৌদি ও ইরাক নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তেল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। ফলে বৈশ্বিক তেল মজুদের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি রয়েছে।

iran-economic

পশ্বিমা বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ইরানের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আট কোটি মানুষের এ দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ ১৭তম বাজার বলে মনে করা হয়। ইরানে আগামী দিনগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিশাল বাজার তৈরি হবে বলে ব্রিটিশ কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান বিএমআই জানিয়েছে।

বিএমআই বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে ইরানে কম্পিউটার, গেম মেশিন এবং মোবাইল ফোনের বাজার সাড়ে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১৩ বিলিয়নে পৌঁছাবে। দেশটিতে এখনো অনেক মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ দুই সংখ্যার ঘরে রয়েছে। একই সঙ্গে ১১ শতাংশ মানুষ বেকারত্বের শিকার।

এদিকে পারমাণবিক চুক্তির সব শর্ত সফলভাবে পালন করায় ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একদিনের মাথায় নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ১১টি কোম্পানি ও ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ ও অর্থনৈতিক ইন্টেলিজেন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডাম জে জুবিন বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি; এটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় অব্যাহত থাকবে।

এসআইএস/এসএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন