ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ছয় বছরে ২৫ হাজার চিকিৎসক : বাড়ছে সংখ্যা কমছে মান

প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ছয় বছরে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রায় ২৫ হাজার চিকিৎসক এমবিবিএস পাস করেছেন। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, সংখ্যায় বাড়লেও পাসকৃত চিকিৎসকদের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার ৯শ’ ১৫ জন।

পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে ২০১১ সালে তিনহাজার ৬শ’ ৭২, ২০১২ সালে তিনহাজার একশ ৪৯, ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার চারশ ১০, ২০১৪ সালে চারহাজার ৯শ’ এক ও ২০১৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে সাড়ে পাঁচহাজার শিক্ষার্ী  রেজিস্ট্রেশন করেছে। আগামী তিন চার বছর পর প্রতি বছর গড়ে সাত থেকে আট হাজার চিকিৎসক পাস করে বের হবে।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে দেশে মোট রেজিস্টার্ড এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭৫ হাজার। এর মধ্যে গত ছয়বছরে প্রায় ২৫ হাজার চিকিৎসক পাস করে বের হয়েছে। দিনকে দিন পাসকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ জাগো নিউজকে জানান, দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির তথ্য আশাব্যঞ্জক হলেও তারা পাসকৃত চিকিৎসকদের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তারা বলেন, গত কয়েকবছরে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাদানে দক্ষ চিকিৎসকের সংকট বেড়েছে। মৃত্যু ও অবসরসহ স্বেচ্ছায় পদত্যাগজনিত কারণে মেডিকেল কলেজগুলোতে মৌলিক বিষয়ে পাঠদানের জন্য অভিজ্ঞ ও সিনিয়র শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ফলে হাজারো শিক্ষার্থীর একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদের তুলনায় শিক্ষক স্বল্পতার কারণে সাধারণ এমবিবিএস পাস করা ডাক্তাররা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।
    
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানান, চিকিৎসা শিক্ষায় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি ও প্যাথলজিকে মৌলিক বিষয় বলা হয়। এ সাতটি মৌলিক বিষয়ের দু’একটি ছাড়া অধিকাংশ বিষয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ না থাকায় জুনিয়র ডাক্তারদের কেউ আর এখন এসব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইছেন না।

তাদের মতে, এক সময় মৌলিক বিষয়গুলোতে সবচেয়ে মেধাবী ডাক্তাররা আসতেন। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে ভর্তির জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। এ বিষয়গুলোতে ভর্তি হতে পারাটাকে সম্মানের চোখে দেখা হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বর্তমানে ডাক্তাররা এ বিষয়ে আসতে চাইছেন না। সদ্য এমবিবিএস পাস করা ডাক্তারদের গ্রামে দুই বছর চাকরির বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত শিথিল করে প্রভাষক পদে নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, যে সকল বিষয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে ভালো আয় রোজগারের সুযোগ রয়েছে সে সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা এমডি, এমএস ও ডিপ্লোমা কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় মোট আসনের বিপরীতে বহুগুণ আবেদন পড়লেও মৌলিক বিষয়ে সবচেয়ে কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান জাগো নিউজকে বলেন, মৌলিক বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, মৌলিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিতে ডাক্তারদের উৎসাহিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগ নিতে হবে।এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে মৌলিক শিক্ষকের অভাবে আন্ডারগ্রাজুয়েট চিকিৎসা শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুবের বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে নিয়মিত প্রভাষকের পদের স্বল্পতার কারণে ডাক্তাররা এ সব বিষয়ে আসতে চাইছেন না। তবে সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ডাক্তারদের এসব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে বিভিন্ন ধরনের উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি