হবু বধূর হাত ধরে অঝোরে কাঁদলেন রাব্বি
বেলা ১১টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০২ নম্বর ক্যাজুয়েলটি ওয়ার্ডের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ। ফটকে দাঁড়ানো কর্তব্যরত আনসার জানালেন, বড় স্যার ভেতরে রাউন্ড দিচ্ছেন, তাই এ মুহূর্তে দর্শনার্থী প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। পরিচয় পেয়ে কেন যেন কিছুটা সদয় হয়ে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। ধীর পায়ে প্রবেশ করতেই ভেতরে সুনসান নীরবতা দেখা গেল। আমার দৃষ্টি তখন খুঁজে বেড়াচ্ছে এক নম্বর বেডের রোগীকে। ওই বেডের সামনে যেতেই রোগীর গোঙানি শোনা গেল। এসময় ওই বেডে মলিন চোহারার এক যুবককে কম্বল মুড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেল। তার দুচোখ বন্ধ বলেই মনে হলো। নাম ধরে ডাকতেই চমকে উঠে বিছানায় উঠে বসলেন। চোখে মুখে কেমন যেন ভয়ার্ত ভাব। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই ক্ষীণ সুরে বিড় বিড় করে বললেন, ভালো না, শান্তিতে কয়েক ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। ৩/৪ দিন যাবত কেন জানি একেবারেই ঘুম আসছে না। রাতে ঘুমের ওষুধও খেয়েছিলাম। কয়েকবার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।
পুলিশি নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি বুধবার সকালে এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই তার বর্তমান অবস্থা জানান। এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই সেখানে হাজির হন তৃষা নামের এক তরুণী। ওই তরুণী রাব্বির হাতে হাত রাখতেই শিশুর মতো অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাব্বি। ওই তরুণী কিছুটা বিব্রত হয়ে রাব্বির মাথার চুলে আলতোভাবে হাত দিয়ে টানতে টানতে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে লাগলেন, তোমার কিছু হয়নি, তুমি ভয় পেয়োনা, খুব শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে।
সান্ত্বনা পেয়েও রাব্বির কান্না কমলো না, বরং বাড়লো। পরিচয় জানতে চাইলে ওই তরুণী জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। কৌতুহল বশত রাব্বির সঙ্গে সম্পর্ক কি প্রশ্ন করতে লজ্জায় লাল হয়ে জানালেন, এই বন্ধু আর কি! এমন সময় সেখানে হাজির হন রাব্বিরই এক ছোট ভাই (বন্ধু) এসএম নজরুল ইসলাম। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র।
তিনি বললেন, বন্ধু মানে বুঝলেন না? এবার রা্ব্বি বললেন, তৃষার সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
নজরুল জানান, সে রাতে পুলিশ রাব্বিকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে, হাতে ও পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে গলা টিপে ধরে। গলার ব্যথায় পানিও খেতে কষ্ট হচ্ছে। বুটের লাথিতে পায়ে কালচে দাগ ও ডান হাতের কনুইতে ব্যান্ডেজ মোড়ানো হয়েছে। রাব্বি শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত বেশি পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, রাব্বির সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তেমন খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি। তাকে মনোচিকিৎসক দেখানো হবে বলেও জানান তিনি।
রাব্বি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সকলেই তার নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
নজরুলসহ রাব্বির আরও কয়েকজন বন্ধু ও ছোট ভাইয়েরা জানান, তারা কেউ পারতপক্ষে সেদিনের কথা রাব্বির সামনে বলছেন না। কেউ সেদিনের কথা বললেই তিনি কেঁদে ফেলছেন। তিনি কিছুতেই সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা ভুলতে পারছেন না।
কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও সাবেক গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে রাব্বির দাবি জানিয়ে বলেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদের মতো কর্মকর্তাকে পুলিশ বিভাগে যেন না রাখা হয়।
এমইউ/একে/এমএএস/এমএস