এসআই রায়হান বনাম এসআই মাসুদ শিকদার
রায়হান ইসলাম ও মাসুদ শিকদার। দুজনেই বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। রায়হান ধানমন্ডি মডেল থানায় কর্মরত। আর মাসুদ শিকদার মোহাম্মদপুর মডেল থানায়। জনগণের সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই মূলত পুলিশের দায়িত্ব। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে (সাবেক সাংবাদিক) তল্লাশির নামে নির্যাতন করে সমালোচনার পাত্র হয়েছেন মোহাম্মদপুর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ শিকদার। আবার কিছুদিন আগে গভীর রাতে একটি মিডিয়া হাউজের কয়েকজন কর্মী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রায়হান ইসলাম তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে সাংবাদিক মহলে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
ছোট্ট একটি ঘটনা দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম। ৩০ ডিসেম্বর রাত তখন আড়াইটা। সেদিন দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই দিনটিকে ঘিরে দেশের প্রায় সব মিডিয়া অফিসেরই ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। তেমনি ছিল অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজের কার্যালয়েও। গভীর রাতে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে অফিস থেকে বের হই আমিসহ আরো কয়েকজন সহকর্মী। রাতে রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকায় আমাদের বহন করা গাড়িটি একটু স্পিডেই ছিল। তবে নিয়ন্ত্রিত স্পিড। সাইন্সল্যাব পার হওয়ার পর একই গতিতে চলছে গাড়ি। ধানমন্ডি-৬ নম্বরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সামনে যাওয়া মাত্রই একটি ছোট ট্রাকের সঙ্গে আমাদের গাড়িটি সজোরে ধাক্কা লাগে।
এতে করে আমাদের গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং চলাচলে অকেজো হয়ে পড়ে। সেই রাতে দুর্ঘটনার ২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিলেন ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (ডিউটি অফিসার) রফিকুল ইসলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই হাজির হয়েছিলেন টহল পুলিশ রায়হান ইসলামের দল। তিনি এসেই আমাদের আহত ৫ জনের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি নিজেই পিকআপ ভাড়া করে আমাদের গাড়িটি গ্যারেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সর্বশেষ যখন আমাদের যাওয়ার পালা এলো। তখন ভোর ৫টা। তখনও তিনি সিএনজি ভাড়া করে এনে আমাদের একজন সহকর্মীকে বাসা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং বাসায় পৌঁছানোর পর ফোন করে নিশ্চিত হন।শুধু তাই নয়। ওই রাতে আমাদের কারো কাছে কোনো টাকা ছিল না সিএনজি নিয়ে বাসায় যাওয়ার মতো। অথচ আমাদের গাড়ি গ্যারেজে পাঠানোসহ আমাদের বাসায় পৌঁছানোর যাবতীয় খরচ বহন করেছেন তিনি।
সেই রাতে এসআই রায়হানের সহযোগিতা কোনোভাবেই ভোলার নয়। পুলিশ যে সাংবাদিকের বন্ধু সেই রাতে আবারো প্রমাণ করেছেন এসআই রায়হান। গভীর রাতে একজন পুলিশ সাধারণ জনগণকে সহযোগিতা করবে, এটি যেমন তাদের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব থেকেই তাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা। সেদিন এসআই রায়হান শুধু তার দায়িত্বই পালন করেননি, উজার করে দিয়েছিলেন আন্তরিকতার সবটুকুই। তার ব্যবহার এবং সহযোগিতায় মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে সেদিন গর্ব করেছি আমরা কয়েকজন। স্যালুট জানিয়েছি এসআই রায়হানসহ তার সহকর্মীদের।
সেই রাতে সহযোগিতা পাওয়ার পর পুলিশকে নিয়ে গর্ব করার ১০ দিনের মাথায় চলতি সপ্তাহের গত শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর মডেল থানা পুলিশের এসআই মাসুদ শিকদারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গোলাম রাব্বি নামে (সাবেক সাংবাদিক) বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। রাব্বি এক সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক ও উপস্থাপক ছিলেন।
ভুক্তভোগী গোলাম রাব্বি জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা হতে কল্যাণপুরে বাসায় ফেরার পথে আসাদ গেটে ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ঢুকে টাকা উত্তোলন করি। তখন রাত আনুমানিক ১০টা। বুথ থেকে বের হয়ে টাকা মানিব্যাগে ঢুকাতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের লোকজন আমাকে টেনেহিঁচড়ে তাদের গাড়িতে তোলেন। এসময় আমার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় পেয়ে পুলিশের এসআই মাসুদ বলেন, তুই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিস। তোর কাছে অনেক টাকা আছে। ৫ লাখ টাকা দে। নইলে তোকে বেড়িবাঁধে ক্রসফায়ার করে লাশ ফেলে দেয়া হবে। এরপর তিনি আমাকে বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। পরে টাকা দেয়ার কথায় রাজি হলে রাত ৩টার দিকে ১০/১২ জন বন্ধু এসে পুলিশের গাড়ি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
১০ দিন আগে পুলিশের একজন কর্মকর্তা যখন কয়েকজন সংবাদকর্মীকে দুর্ঘটনা পরবর্তী সহযোগিতা করে সুনাম অর্জন করেন। ঠিক তখনি গোলাম রাব্বিকে তল্লাশির নামে নির্যাতন করে সেই সুনামে পানি ঢাললেন এসআই মাসুদ শিকদার। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তৈরি করেছে। ফেসবুকে সাধারণ মানুষ পুলিশের এই কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন।মাসুদ শিকদারকে পুলিশ থেকে দ্রুত অব্যাহতিরও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
এসআই মাসুদ শিকদারের কর্মকাণ্ডে গোটা পুলিশ আজ সমালোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে। দ্রুত বন্ধ হোক সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে হয়রানি ও নির্যাতন। পুলিশ থেকে সড়িয়ে দেয়া হোক এসআই মাসুদের মতো কর্মকর্তাদের।
এমএএস/আরআইপি