ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জীবনে একবার হলেও নির্যাতনের শিকার ৫৪ শতাংশ নারী

মফিজুল সাদিক | প্রকাশিত: ০৬:২৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২২

গোপালগঞ্জের নবীনবাগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হেঁটে মেসে ফিরছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু। হেলিপ্যাড এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ তাদের থামান কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ছাত্রীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য শুরু করেন তারা। ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বন্ধু এর প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে পাশের একটি পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।

শুধু বশেমুরবিপ্রবির ওই ছাত্রী নয়, কিশোরী থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবনে একবার হলেও এমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দেশের অর্ধেকের বেশি নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ ‘জেন্ডার স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ ২০১৮’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, জীবনে একবার হলেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দেশের ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী। গ্রামে এর হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শহরে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকায় নারী নিপীড়নের হার ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে এর হার ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপে সারাদেশে ১৯ হাজার ৯৮৭ জন নারী অংশ নেন। জরিপের প্রতিবেদনে জানানো হয়, জীবনে অন্তত একবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। তবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৫-২৯ বছর বয়সী নারী, যা শতাংশের হিসাবে ৫১ দশমিক ১ শতাংশ। বয়সের অনুপাতে ১৫-১৯ বছর বয়সী নারীদের নির্যাতনের মাত্রা কিছুটা কম, এর হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামে শারীরিক নির্যাতনের হার ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং শহরে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ।

এতে আরও উঠে এসেছে, জীবনে অন্তত একবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ নারী। বয়সের অনুপাতে ২০-২৪ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৫-১৯ বছর বয়সী নারী তুলনামূলকভাবে কম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী বিবাহিত নারীদের ৫০ শতাংশ স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

৮৫ শতাংশ পরিবারে খানাপ্রধান পুরুষ
দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৮২ লাখ। এরমধ্যে পুরুষ আট কোটি ৪২ লাখ। নারী আট কোটি ৪০ লাখ। দেশে খানার (এক পাতিলে রান্না করা খাবার খান যারা) গড় আকার ৪ দশমিক ৩ জন। ৮৫ ভাগ পরিবারের খানাপ্রধান পুরুষ। বাকি ১৫ ভাগ পরিবারের খানাপ্রধান নারী। দুই হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিবিএস এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে তিন লাখ ১১ হাজার ৩১টি খানা বা পরিবারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিবিএসের সর্বশেষ ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২০’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের নারীরা এখনো পুরুষের দ্বারা উচ্চমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত।

কমছে মাতৃমৃত্যুর হার
দেশে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত গত পাঁচ বছরে সমহারে কমেছে। ২০১৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০২০ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (অ্যাডভোকেসি ও কমিনিকেশন) ফেরদৌস নিগার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। বৈষম্যের বেড়াজালে রাখছে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অনিয়মে মুখ থুবড়ে পড়ছে নারীদের জীবন।’

তিনি বলেন, ‘পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন ধর্ষণ ও নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক আইনে বৈষম্য বিদ্যমান। সম্পদের ভাগ ছেলে বেশি পাচ্ছে এবং নারীরা বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন। তৃণমূলে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।’

ফেরদৌস নিগার বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে ভূমিকা, সেটা থেকে নারীরা দূরে থাকেন। এসব খাতে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার আধিপত্য জোরদার। নারীরা সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এজন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা দরকার। নারীরা এ দেশেরই মানুষ, তারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের কেউ না।’

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই বলয় একদিনে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে এ প্রথা চলমান। তবে বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। ফলে শীর্ষপদগুলোতে এখন নারীরা। নারীর উন্নয়নে পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিধবা ও বয়স্কভাতা ছাড়াও অস্বচ্ছল নারীর উন্নয়নে কাজ চলছে। শুধু তাই না, প্রত্যেকটি প্রকল্পে নারী উন্নয়নের বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়। এ শর্ত পূরণ না হলে প্রকল্প অনুমোদন করা হয় না। সব প্রকল্পে নারীর মঙ্গল হয়, এমন খাত থাকা বাধ্যতামূলক।’

এমওএস/এএএইচ/এএসএম